কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে বয়স কোন বাধা নয়: ড. জাফর ইকবাল - দৈনিকশিক্ষা

কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে বয়স কোন বাধা নয়: ড. জাফর ইকবাল

ড. জাফর ইকবাল |

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, মাস্টার্সে পড়ি। আমাদের স্যারেরা একদিন ঠিক করলেন আমাদের কম্পিউটার শিখতে হবে। শুনে আমরা খুবই উত্তেজিত, কম্পিউটারের নাম শুনেছি কখনও দেখিনি, সত্যি কথা বলতে কী জিনিসটা দেখতে কেমন সেটা নিয়ে কোন ধারণাও নেই। মাঝে মাঝে কাউকে দেখেছি বিশাল কম্পিউটার ‘প্রোগ্রাম’ ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছেন শুনে যারা অবাক হচ্ছে তাদেরকে বলছি, তখন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করার জন্য সেটা কার্ডে পাঞ্চ করতে হতো, প্রোগ্রামটা কম্পিউটারে চালাতে হলে সেই কার্ডগুলো নিয়ে যেতে হতো। যার প্রোগ্রাম যত বড় তার কার্ডের বান্ডিল তত বিশাল! সেগুলো আসলেই ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে হতো।

যাই হোক, আমাদের ক্লাসের দশজনকে একদিন স্ট্যাটিস্টিকেল ব্যুরো কিংবা এই ধরনের কোন একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে একজন কম্পিউটারের ওপর একটা লেকচার দিলেন। তারপর এক বান্ডিল কম্পিউটার কার্ড কোথায় জানি ঠেসে দিলেন। কার্ডগুলো ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে কোথায় জানি অদৃশ্য হয়ে গেল। খানিকক্ষণ পর তিনি জানালেন প্রোগ্রামটা সাফল্যের সঙ্গে ‘রান’ করেছে। কী ঘটেছে কী হয়েছে আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি উঁকিঝুঁকি মেরে ঘরের ভেতরে কম্পিউটার নামক বস্তুটা দেখার চেষ্টা করলাম। বিশাল ঘরের বাইরে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, ভেতরে কী আছে জানি না। তাই কম্পিউটার নামক বস্তুটা আর নিজের চোখে দেখা হলো না। তাতে অবশ্য আমাদের কোন ক্ষতি হলো না। কম্পিউটারের ওপর জ্ঞান অর্জন করে খুবই গম্ভীরভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরে এলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রছাত্রীরা হিংসাতুর দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল!

এর কিছুদিন পর আমি পিএইচডি করার জন্য আমেরিকা চলে এসেছি। যে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স ল্যাবরেটরিতে কাজ করি সেখানে প্রথমবার সত্যিকারের কম্পিউটার দেখতে পেলাম। দেয়াল ঘিরে এক মানুষ সমান উঁচু ঘরের এক মাথা থেকে অন্য মাথাজুড়ে বিশাল কম্পিউটার। সেখানেও কার্ড পাঞ্চ করে প্রোগ্রামিং করতে হয়। আমিও প্রোগ্রামিং শুরু করেছি। দেখতে দেখতে আমারও বিশাল বিশাল কার্ডের বান্ডিল জমা হতে শুরু করল!

বছরখানেক পরে ঘরের এক মাথা থেকে অন্য মাথাজুড়ে থাকা বিশাল কম্পিউটার সরিয়ে নতুন একটা কম্পিউটার বসানো হলো। সেটা আকারে অনেক ছোট, স্টিলের আলমিরার সাইজ। কম্পিউটারের ঘরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে। শুধু তাই না, কার্ড পাঞ্চ করার যন্ত্র কার্ড রিডার সব উধাও হয়ে গেল। এখন আমাদের রুমে রুমে ছোট ছোট টেলিভিশনের মতো মনিটর সঙ্গে একটা কী বোর্ড দেয়া হলো। আমরা নিজেদের রুমে বসে কম্পিউটারে প্রোগ্রাম চালাতে পারি, দেখে আমরা হা হয়ে গেলাম। দূর দূর থেকে মানুষজন এই প্রযুক্তি দেখার জন্যে আমাদের ল্যাবরেটরিতে আসতে থাকে।

আমি তখন আমার পিএইচডির জন্য কাজ করছি। মাঝে মাঝেই কম্পিউটারে কাজ করতে হয়। তখন হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমার প্রফেসর আমাদের গ্রুপের জন্যই একটা কম্পিউটার কিনে ফেলেছে। একেবারে খেলনার মতো কম্পিউটার, টেবিলের ওপর রাখা যায়। দেখে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। আমি সেটাতে কাজ করি, যে ক্যালকুলেশন করার জন্য মাথার চুল ছিড়ে ফেলেছি সেটা এখন চোখের পলকে করে ফেলা যায়। একদিন ল্যাবরেটরিতে কিছু একটা কাজ হচ্ছে। আমি ঢুকতে পারছি না, কম্পিউটারে কাজ করতে পারছি না। উপায় না দেখে কম্পিউটার আর মনিটরটা একটা ট্রলির ওপর তুলে ঠেলে ঠেলে আমার অফিসে নিয়ে যাচ্ছি। আমার একজন প্রফেসর কিছুক্ষণ হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, ‘আমি নিজের চোখে এই ঘটনাটি দেখছি বিশ্বাস হচ্ছে না!’ আমি জিজ্ঞেস করলাম. ‘কী বিশ্বাস হচ্ছে না?’ প্রফেসর বলল, ‘একজন মানুষ আস্ত কম্পিউটার এক ঘর থেকে আরেক ঘরে নিয়ে যাচ্ছে! কি অবিশ্বাস্য ঘটনা!’

কিছুদিন পর সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা থেকেও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটল। শুনতে পেলাম স্টিভ জবস নামের একজন মানুষ তার ‘আপেল’ কোম্পানি থেকে ম্যাকিন্টশ নামে একটা কম্পিউটার তৈরি করেছে। সেটা হাতে করে নেয়া যায়। শুধু তাই না, সেই অবিশ্বাস্য যন্ত্রটি অনেক ডিসকাউন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছে বিক্রি করা হবে। আমি শুনে মোটামুটি ক্ষেপে গেলাম। ঠিক করলাম যেভাবেই হোক সেটা কিনতে হবে। পিএইচডি স্টুডেন্টদের মাসিক বেতন খুবই কম। কষ্ট করে কোনমতে খেয়ে-পরে থাকা যায়। কিন্তু ততদিনে বিয়ে করে ফেলেছি। আমার স্ত্রীও আমার সঙ্গে পিএইচডি করছে। সে কীভাবে কীভাবে আমার জন্য কিছু ডলার ম্যানেজ করল এবং সেটা দিয়ে আমি ম্যাকিন্টশ নামের সেই কম্পিউটারটা কিনে আনলাম। সেই থেকে আমার জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেল। প্রথম যেদিন নিজের হাতে তৈরি করা ফন্টে সেই কম্পিউটারের স্ক্রিনে বাংলা লেখা দেখতে পেলাম আমি সেই দিনটির কথা কোনদিন ভুলতে পারব না। একজন মানুষের জীবনে একেবারে নিজের জন্য ব্যক্তিগত একটা কম্পিউটারের চাইতে বড় একটা কিছু হতে পারে বলে আমার জানা নেই। সৃষ্টিশীল কাজের জন্যে এর থেকে বড় কিছু আমি আমার জীবনে পাইনি!

মজার কথা হচ্ছে, এখন যারা ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহার করে তারা নিশ্চয়ই আমার সেই ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারের কথা শুনে হাসতে হাসতে মারা যাবেন। সেই কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম, লেখালেখির জন্য ওয়ার্ড প্রসেসর এবং ছবি আঁকার জন্য একটি সফটওয়্যার সবকিছু থাকত একশ’ আটাশ কিলোবাইটের একটা ফ্লপি ডিস্কে! (না, আমি মেগাবাইট লিখতে গিয়ে ভুল করে কিলোবাইট লিখে ফেলিনি! আসলেই একশ’ আটাশ কিলোবাইট। সেই ফ্লপি ডিস্কে তারপরও কিছু জায়গা রাখা হতো নিজের কাজকর্ম রাখার জন্যে!)

 দুই

এতক্ষণ যে কথাগুলো লিখেছি সেটা হচ্ছে ভূমিকা। এখন আসল কথায় আসি। দেশের সবাই জানে কী না জানি না, আমাদের দেশে হাই স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্য কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ‘প্রতিযোগিতা’ বিষয়টা আমার খুব পছন্দের বিষয় না। কারণ প্রতিযোগিতার অর্থ হচ্ছে অন্যদের কোনভাবে পিছনে ফেলে নিজে সামনে এগিয়ে যাওয়া। প্রতিযোগিতা মানেই হচ্ছে এক ধরনের স্বার্থপরতা! কিন্তু ছেলেমেয়েদের কোন ধরনের সৃষ্টিশীল কাজে ডেকে আনার জন্য এর থেকে কার্যকর অন্য কোন উপায় আমার জানা নেই। আমরা যখন প্রথম এই দেশে গণিত অলিম্পিয়াড শুরু করেছিলাম তখন কখনও কল্পনা করিনি এত সাড়া পাব, এত ছেলেমেয়ে অংশ নেবে। আমি নিজে যদি কখনও এই ধরনের অলিম্পিয়াড বা প্রতিযোগিতায় উপস্থিত থাকি তাহলে সারাক্ষণই ছেলেমেয়েদের বোঝাই প্রতিযোগিতাটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা উৎসব।

যাই হোক, হাই স্কুলের ছেলেমেয়েদের এই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাটাও মোটামুটিভাবে একটা উৎসবের মতো। সিলেট এলাকায় এই উৎসবটির আয়োজন করা হয়েছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঠিক তখন সিলেট এলাকায় জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে সারা শহরে এক ধরনের টেনশন। শত শত ছেলেমেয়েকে নিয়ে এরকম অনুষ্ঠান না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপদেশ দিচ্ছে। তার মাঝে শত শত ছেলেমেয়ে সময়মতো হাজির হয়ে গেছে। আয়োজক আমাদের বিভাগের তরুণ শিক্ষকেরা। তারা আমাকে ডেকে নিয়ে গেল স্কুলের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রক্তচক্ষু না দেখার ভান করে আমি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলেছি। তারা আমাকে যে কথাগুলো বলেছে সেই কথাগুলো সবাইকে জানানোর জন্য আমি এই বিশাল ইতিহাস লিখতে বসেছি!

ছেলেমেয়েরা আমাকে বলেছে তাদের অভিভাবকরা মোটেই চায় না যে, তারা কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং করা শিখুক। তাদের বাবা-মায়েরা চায় ছেলেমেয়েরা কোচিংয়ে, প্রাইভেটে মাথা গুঁজে পাঠ্যবই মুখস্থ করতে থাকুক। কারণ তাদের ধারণা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখে কোন লাভ নেই। বাবা-মায়ের ধারণা জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পাওয়া।

ছেলেমেয়েদের কথা শুনে আমি একই সঙ্গে বিস্ময় এবং আতঙ্ক অনুভব করেছি। এটি কেমন করে সম্ভব যে, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়েরা এত বড় একটা ভুল ধারণা নিয়ে থাকতে পারেন? আমি বিষয়টা নিয়ে যখন একটু চিন্তা করেছি তখন আমার মনে পড়েছে এই বয়সী ছেলেমেয়েরা আমার কাছে মাঝে মাঝেই আরও একটা অভিযোগ করেছে। তারা বলেছে তাদের বাবা-মায়েরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোন বই পড়তে দেন না। আমি তাদের বলি একজনকে বই পড়তে না দেয়া আর খেতে না দেয়ার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কোন বাবা-মা যদি তার সন্তানকে না খেতে দিয়ে মেরে ফেলতে চান তখন চুরি করে হলেও কিছুৃ খেয়ে প্রাণটা বাঁচিয়ে রাখার মাঝে যেরকম কোন দোষ নেই, ঠিক সেরকম চুরি করে, গোপনে বাথরুমে বসে, গভীর রাতে চাদরের নিচে বাতি জ্বালিয়ে বই পড়ার মাঝে কোন দোষ নেই। এই দেশের বাবা-মায়েরা আমাকে যতই শাপ-শাপান্ত করুক না কেন আমি ছেলে-মেয়েদের যে কোন মূল্যে বই পড়ার কথা বলে এসেছি এবং বলে যাব।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার বেলাতেও একই কথা বলা যায়। যারা কম্পিউটারে কোন ধরনের প্রোগ্রামিং করেছে তারা সবাই জানে বিষয়টা আসলে কিছু নিয়ম মেনে যুক্তিতর্ক বা লজিকের সাহায্যে কম্পিউটারকে কিছু নির্দেশ দেয়া ছাড়া আর কিছু না। যারা কাজটি করে দেখতে দেখতে তাদের যুক্তি বা লজিক মাফিক কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। কাজটি করার জন্য মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে হয়, তাই তাদের মস্তিষ্ক দেখতে দেখতে শাণিত হয়ে যায়। একটি ছেলে বা মেয়ে যত বেশি তার মস্তিষ্ককে চিন্তা করার জন্য কাজে লাগাবে তার মস্তিষ্ক তত বেশি শাণিত হয়ে উঠবে এটা বোঝার জন্য কাউকে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। কম্পিউটারের সামনে বসে ফেসবুক করা যতখানি খারাপ, প্রোগ্রামিং করা ঠিক ততখানি ভাল। সবচেয়ে বড় কথা যে ছেলেটি বা মেয়েটি প্রোগ্রামিং করতে শিখে গেছে তার সামনে একটা নতুন জগত খুলে দেয়া হয়েছে। সেই জগতে সে কী করবে, কতখানি করবে তার কোন সীমারেখা বেঁধে দেয়া নেই। মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে অনেক সময় এক ধরনের পরিশ্রম হয়। অন্যদের কথা জানি না, আমার নিজের বেলায় ঠিক তার উল্টো। ক্লান্তির কারণে যখন আমি কিছুই করতে পারি না, একটা বই পর্যন্ত পড়তে পারি না, তখনও কোন বিচিত্র কারণে আমি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করতে পারি। আমার জন্য সেটা এক ধরনের বিনোদন।

সেদিন একটি ছেলে আমার কাছে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছে। সে লিখেছে তার খুব প্রোগ্রামিং শেখার ইচ্ছে; কিন্তু তার বাবা তাকে বলছেন যে, সে প্রোগ্রামিং শেখার জন্য ছোট, তার এখনও বয়স হয়নি। কথাটি সত্যি নয়, প্রোগ্রামিং শেখার জন্য কোন বয়সের দরকার হয় না। যারা লিখতে শিখেছে তারাই প্রোগ্রামিং করতে পারবে। সত্যি কথা বলতে কী ছোট শিশু যারা এখনও লিখতে শিখেনি তারাও যেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি করতে পারে সেজন্য বিশেষ প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা তৈরি হচ্ছে, যেখানে বাচ্চারা ছবি বা নকশা জুড়ে জুড়ে প্রোগ্রামিং করতে পারে। এমআইটির মিডিয়া ল্যাবে আমি নিজে সেরকম একটা কাজ দেখে এসেছি! এতো কথা অবশ্যি বলারও প্রয়োজন নেই। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে বয়স যে কোন বাধা নয় সেটার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে। প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে আমাদের দেশের যে প্রতিযোগীরা মেডেল নিয়ে এসেছে তারা ক্লাস নাইনে পড়ে! শুধু তাই না, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ঘাগু প্রোগ্রামারদের যখন প্রতিযোগিতা হয় তখন মাঝে মাঝে এই ‘বাচ্চাদের’ তাদের সঙ্গে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। তখন অবলীলায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের হারিয়ে দিতে পারে! কাজেই বয়সটি কোন বাধা নয়। ছোট ছেলেমেয়েদের উৎসাহ থাকলেই তারা কাজ করতে শুরু করে দিতে পারবে। যারা প্রোগ্রামিংয়ের কিছুই জানে না তারাও যেন একেবারে শূন্য থেকে প্রোগ্রামিং শুরু করতে পারে সেজন্য চমৎকার কিছু বইও লেখা হয়েছে। কাজেই বিষয়টি আর জটিল নেই। প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি করার জন্য দরকার এরকম একটা বই এবং একটা কম্পিউটার।

 তিন

সত্যি কথা বলতে কী, প্রোগ্রামিং করার জন্য এখন কম্পিউটারেরও প্রয়োজন নেই। তার কারণ স্মার্ট ফোনেও প্রোগ্রামিং করার জন্য ‘কম্পাইলার’ (যেটা ব্যবহার করে কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখে সেটা চালানো হয়) পাওয়া যায়। আমি চালিয়ে দেখেছি, ছোট কী বোর্ডে আমার ভোটকা আঙ্গুল দিয়ে সঠিক অক্ষর স্পর্শ করার জটিলতা ছাড়া আর কোন সমস্যা হয়নি। কাজেই বলা যেতে পারে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করার বিষয়টি এই প্রথম শহরের সচ্ছল পরিবারের গ-ি থেকে বের হয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছে গেছে। আমি মনে করি এই প্রথমবার আমাদের দেশের ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ দূর করার একটি সত্যিকারের সুযোগ এসেছে।

হাই স্কুলের ছেলেমেয়েদের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হয় কয়টি ল্যাবরেটরিতে কয়টি কম্পিউটার আছে, তাই সর্বোচ্চ কতজনকে প্রোগ্রামিং করার সুযোগ দিতে পারব। সবাইকে সুযোগ দেয়া সম্ভব হতো না, আমার ধারণা ঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে পারলে ইচ্ছে করলে এখন থেকে আমরা যতজন ইচ্ছা ততজনকে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সুযোগ করে দিতে পারব। ছেলেমেয়েরা শুধু বাসা থেকে তাদের বাবা মা বড় ভাই বোন কিংবা নিজের স্মার্ট ফোনটি নিয়ে হাজির হবে। এক সঙ্গে সবচেয়ে বেশি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার একটি গ্রিনিজ রেকর্ড করাও এখন এমন কিছু কঠিন নয়।

চার

আমাদের এইচএসসির সিলেবাসে সি প্রোগ্রামিং নামে একটা বিষয় ছেলেমেয়েদের পড়তে হয়। যেহেতু দেশের সব কলেজে কম্পিউটার ল্যাবরেটরি নেই, তাই ছেলেমেয়েদের কখনই সত্যিকার প্রোগ্রামিং করার সুযোগ হয়নি। তাদের পরীক্ষা নেয়া হয় লিখিত পরীক্ষা দিয়ে। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের লিখিত পরীক্ষা নেয়া যে কথা, খেলার মাঠে সাঁতারের পরীক্ষা নেয়া সেই একই কথা। পুরো বিষয়টা একটা বিড়ম্বনার মতো। যে খুব সুন্দর নাচতে পারে তাকে যদি আমি বলি তুমি কাগজে লিখে দাও নাচার সময় হাত-পা-মাথা-চোখ কখন কীভাবে নাড়াও আমি তোমার নাচটি উপভোগ করব, আমি নিশ্চিত সেই মানুষ আর যাই করুক জন্মের মতো নাচা ছেড়ে দেবে। এখানেও সেই একই ব্যাপার, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে লিখিত পরীক্ষার কারণে ছেলেমেয়েরা প্রোগ্রামিং সম্পর্কে শুধু যে ভুল ধারণা পাচ্ছে তা নয়, প্রোগ্রামিংয়ের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে।

এই প্রথম একটা সুযোগ এসেছে সবাইকে সত্যিকারভাবে প্রোগ্রামিং শিখিয়ে তাদের সৃষ্টিশীলতার একটা নতুন জগতে নিয়ে যাওয়ার। আমাদের ছোট একটি জীবন, সময়টা যদি উপভোগ না করি তাহলে কেমন করে হবে?

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047340393066406