প্রতিষ্ঠার এক যুগেরও বেশি সময়ের পরও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের ব্যবস্থা করতে না পারায় মাশুল গুণতে হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রায় ২০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর। শিক্ষার্থীদের কোন আবাসিক হল না থাকায় অধিকাংশই থাকছেন পুরান ঢাকার কোন মেসে কিংবা বাসায়।
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে গতমাসের মাঝামাঝি সময়ে থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। এসময় পুরোদেশ লকডাউনের মধ্যে রয়েছে। ফলে থেমে গেছে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক চাকা ও সাধারণ জীবনযাত্রা। এ অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথায় বহন করতে হচ্ছে মেস অথবা বাড়িভাড়ার চাপ। যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি কিংবা পার্টটাইম জব করতেন, তারা সবচেয়ে বিপদে রয়েছেন।
জানা যায়, ২০০৫ সালে দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থই থাকেন পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জ্ঞানপিপাসু এসব শিক্ষার্থীরা অনেকে থাকেন মেসে অথবা কেউ কেউ বাসাভাড়া নিয়ে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার রাজধানী ছেড়ে অধিকাংশ দেশের বাড়িতে চলে গেছেন। যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি কিংবা পার্টটাইম জব করতেন, করোনা সংক্রমণের ফলে তাও বন্ধ রয়েছে। তবে মেসের বাড়িওয়ালা তাদের বাড়িভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে।
তবে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নজরে আসলে তিনি শিক্ষার্থীদের জানান, ‘কেউ ভাসা ভাড়ার জন্য চাপ দিলে বলবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাড়া পরিশোধ করবে। এরপরেও যদি বেশি কিছু বলে তাহলে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করবে। আমি বিষয়টি ঐ এলাকার পুলিশ প্রসাশনের সাথে কথা বলে রাখছি।’
এ বিষয়ে প্রক্টর মোস্তফা কামাল জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ ওয়ারী, বংশাল, সূত্রাপুর ও কোতোয়ালি মোট এই চারটি থানায় কথা বলে রেখেছি। কারও সমস্যা হলে সে যেন আগে থানায় ফোন করে জানায়। তারা বাড়িওয়ালাদের সাথে কথা বলবে। তারপরেও সমাধান না হলে আমি দেখবো বিষয়টা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল বলেন, এ উদ্যোগটি ভালো হয়েছে। তবে উনি যেন (প্রক্টর) শিক্ষার্থীদের দিকটা খেয়াল রাখেন। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থী টিউশনের টাকা দিয়ে চলে। এখন টিউশন নেই। কিছুদিন আগে বাড়িওয়ালা কল দিয়েছিল। লকডাউনে আছি আর বিকাশের দোকান বন্ধ বলার পরও উনি পরদিন আবার কয়েকবার জানতে চেয়েছে বিকাশের দোকান খুলেছে কিনা। না খোলার কারণে দিতে পারিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জবির এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক যুগেরও বেশি সময়ের পরও শিক্ষার্থীদের কোন আবাসনের ব্যবস্থা করতে না পারায় তার খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে যারা অস্বচ্ছল পরিবার থেকে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ দায় এড়াতে পারেনা।