সরকারি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খালেদা জিয়ার সাময়িক কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুলশান পর্যন্ত রাস্তার দু পাশের জনস্রোত দেখে মনে হলো দেশ থেকে করোনা ভাইরাস হঠাত্ করে উধাও হয়ে গেল বুঝি। ভাবলাম, উনারা কোনো আলাদিনের চেরাগের সন্ধান পেয়ে করোনা প্রসঙ্গে জিরো টলারেন্সে আছেন কি না। শনিবার (২৮ মার্চ) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, গত দু দিনের পত্র-পত্রিকার ছবিতে দেখলাম সাধারণ ছুটি পেয়ে ঘরমুখো মানুষের মহাযাত্রা। হাজার হাজার মানুষের এই বাড়ি ফেরার সঙ্ঘবদ্ধ জটলা যেন সকল সময়ের ঈদের যাত্রাকেও হার মানিয়েছে!
বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় যেখানে ডাকসাইটে বিশ্বনেতাদেরও হুঙ্কার থেমে গেছে, রাতের ঘুম চলে গেছে। এক অচেনা আতঙ্কে কেউ স্বেচ্ছা-নির্বাসন, কেউ সুরক্ষিত দুর্গে গৃহবন্দিত্ব বেছে নিয়েছেন। কেউবা অসহায়ত্বে হাত-পা ছেড়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। উন্নত বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার দেশসমূহে সুরম্য প্রাসাদে প্রাসাদে মানুষের পচাগলা লাশ পড়ে আছে; দেখার কেউ নেই।
বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ থেকে ১ লাখে পৌঁছাতে ৬৭ দিন, দ্বিতীয় লাখে পৌঁছাতে ১১ দিন, তৃতীয় লাখে পৌঁছাতে মাত্র ৪ দিন সময় লেগেছে। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৫ দেশে ছড়িয়ে গেছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস, এতে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব পরিস্থিতি রীতিমতো টালমাটাল।
আমাদের বাংলাদেশের সক্ষমতা, সচেতনতা বিবেচনায় প্রথম এ ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির পুত্রের মর্মসপর্শী ফেসবুক স্টেটাসের ভাষায় ওঠে এসেছে বাস্তব অসহায়ত্বের চিত্র। পুত্রের ফেসবুক স্টেটাসের বর্ণনায় আইইডিসিআরসহ বিভিন্ন হাসপাতাল, ডাক্তার, চিকিত্সা ব্যবস্থাপনা বা সার্বিক পদক্ষেপ কতটুকু কার্যকর তা সহজেই বোঝা যায়।
এই যখন অবস্থা, তখন তাদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তি আনন্দে গা ভাসিয়ে এমন জন-জটলা তাদের নিজের, দেশের বা প্রিয় নেত্রীর জন্য কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ, তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন? অন্যদিকে সাধারণ ছুটি যে আতঙ্কে দেওয়া, তা হলো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রোধ করা। কিন্তু ঈদের আনন্দে বাড়ি ফেরার মিছিলের মতো জনসমুদ্রের ছবিগুলো দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়েছি। প্রাণঘাতী ভাইরাসের তাড়না খেয়ে পালিয়ে যেতে যদি এমন প্রাণঘাতী পরিস্থিতি আমরা নিজেই সৃষ্টি করতে পারি, তবে আমরা কোথায় আছি? এই মানুষগুলো গ্রামে যাচ্ছে, এদের কেউ কেউ এই ভাইরাস যে বহন করছে না, নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। এ দুটো জন-জটলাই দেশে ভাইরাসের কমিউনিটি সংক্রমণে যথেষ্ট। আমাদেরকে এখনই ভাবতে হবে।
লেখক : কামাল আহমেদ, হবিগঞ্জ।