করোনা : কিউবায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

করোনা : কিউবায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

‘এখানে কতজন থাকেন? আপনারা কি বিদেশিদের সংস্পর্শে এসেছেন? আপনারা কি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন?’ বাড়ি বাড়ি গিয়ে এমন প্রশ্ন করছেন কিউবার চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা।

এএফপির খবরে জানানো হয়, কিউবাজুড়ে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী দিনে বেশ কয়েকবার এমন প্রশ্ন করে চলেছেন। হাভানার পার্শ্ববর্তী ভেদাদো এলাকায় ৪৬ বছর বয়সী চিকিৎসক লিজ কেব্যালেরো গঞ্জালেজ দুজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশ্ন করছিলেন। ওই এলাকায় ৩০০ পরিবারের বাস।

কিউবায় অনেকেই মাস্ক পরেন। মাস্ক না পরলে কিছু দোকানে ক্রেতাদের ঢুকতে দেয়া হয় না। সাদা গাউনের কারণে চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের আলাদা করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ছয় দশকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিউবায়। পর্যটনশিল্পের ওপর নির্ভরশীল কিউবা লাতিন আমেরিকার সর্বশেষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, যারা সীমান্ত বন্ধ করেছে।

কিউবায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ২১২ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। সতর্কতার কারণে প্রায় ২ হাজার ৮০০ জনকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

কিউবার স্বাস্থ্যসেবা খুব ভালো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশটিতে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ৮২ জন চিকিৎসক রয়েছেন। রাশিয়ায় যেখানে ৪০, যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ ও চীনে ১৮ জন রয়েছেন।

চিকিৎসক কেব্যালেরো গঞ্জালেজ বলেন, ‘ধনী দেশের মতো আমাদের দেশে প্রযুক্তি নেই। তবে আমাদের নিঃস্বার্থ, মানবিক, যোগ্য মানুষ রয়েছে।’

বাড়ির দোরগোড়ায় গিয়ে সেবা দেয়ার এই পদ্ধতি কিউবায় মোটেই নতুন নয়। যে কোনো সংক্রমিত রোগের সময় কিউবার পারিবারিক চিকিৎসকেরা এ কাজ করেন। গত দুই সপ্তাহে দোরগোড়ায় চিকিৎসকদের চক্কর বেড়ে গেছে। কম সময়ে শতভাগ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কিউবায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী অনেক। দেশটির ২৫টি চিকিৎসা অনুষদ স্বনামধন্য লাতিন আমেরিকান স্কুল অব মেডিসিন কয়েক হাজার বিদেশিকে আকৃষ্ট করেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুসানা দিয়াজ (১৯) বলেন, ‘আমরা দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ রোধে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিই। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিতে বলেছে।’

দিয়াজ বলেন, ‘কাশি বা জ্বরের মতো যে কোনো সন্দেহজনক অসুস্থতা দেখলেই স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানানো হচ্ছে। আমরা যা করছি, সে জন্য অনেকেই আমাদের ধন্যবাদ দিচ্ছে।’

স্থানীয় এক বাসিন্দা মাইতি পেরেজ (৩০) বলেন, ‘কিউবায় সবাই চিকিৎসকদের ভালোবাসে।’

চিকিৎসাবিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থী তাঁর বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি। তাঁরা আমাদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছে।’

পেরেজ সতর্কতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। তিনি দরজার সামনে জুতা পরিষ্কারের জন্য একটি মপ রেখেছেন। বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার পর তিনি পোশাক ধুয়ে ফেলেন। যখনই বাইরে যান, মাস্ক পরেন। শুধু একটা নিয়ম মানতে কষ্ট হয় পেরেজের। তিনি চান মাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে কাউকে জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়া নিষেধ।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া দেখেন ৮৩ বছরের কার্লোস লাগোস। ব্যাপারটি তাঁর কাছে একদম নতুন। শিক্ষার্থীরা জানতে চান জ্বর এলে, শরীর খারাপ লাগলে কে তাঁর যত্ন নেবে।

কিউবায় বয়স্ক ব্যক্তিদের সেবাদানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির ২০ ভাগ জনগণের বয়স ৬০ বছরের বেশি। ৮২ বছরের দোলোরেস গার্সিয়া তাঁর বাড়ির দরজার পেছন থেকে বললেন, ‘আমি ভালো আছি। খুব কম বাইরে যাই।’ মাস্ক পেয়ে দারুণ খুশি তিনি। বললেন, ‘ভালোবেসে কেউ একজন তাঁকে এই মাস্ক দিয়ে গেছে।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য কিউবাবাসী বাইরে যাচ্ছে। হাত পরিষ্কারের জন্য তাঁরা ক্লোরিনের মিশ্রণ ব্যবহার করছে। কারণ, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার অপ্রতুল।

মেডিকেল ফেস মাস্ক না থাকায় অনেকে নিজেই কাপড় দিয়ে মাস্ক বানিয়ে পরছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কর্মী ৫৬ বছরের মেরিনা ইবানেজ বললেন, ‘আমি কাপড় দিয়ে মাস্ক বানিয়ে মানুষকে দিচ্ছি।’ এ রকম ৫০টি মাস্ক বানিয়ে প্রতিবেশীদের দিয়েছেন তিনি।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037128925323486