ঝালকাঠি কারাগারে বন্দিদের নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে কারাগারের ভেতরে নতুন বন্দিদের জন্য চালু করা হয়েছে দুটি কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ড। এছাড়া কমিয়ে আনা হয়েছে সাক্ষাতের সময়সীমা। এসব পদক্ষেপের কারণে কারাবন্দিরাও খুশি বলে জানিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঝালকাঠি কারাগারে কারাবন্দি সংখ্যা ১৬৭ জন। এর মধ্যে ১৬৪ জন পুরুষ ও চারজন নারী। এ কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ২৮৩ জন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় কারাগারের বন্দিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষপ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, কারাগারের ভেতরে এখন পর্যন্ত কারো শরীরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়নি। তবে নতুন কয়েদি বা সাক্ষাৎ প্রার্থীদের মাধ্যমে কারাগারের ভেতরেও এ ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। নতুন কয়েদির মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কারাগারে দুটি কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
নতুন কোনো কয়েদি এলেই তাকে এসব ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন থাকার পর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা না গেলে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হবে। আর ১৪ দিনের আগে জামিন পেলে কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ড থেকেই সরাসরি মুক্তি দেয়া হবে।
সাক্ষাৎ প্রার্থীদের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি ১৫ দিনে একবার সাক্ষাৎ করা যাবে। সাক্ষাতের নির্ধারিত স্থানে এক মিটার দূরত্বে নেট লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বন্দিদের কারা অভ্যন্তরে প্রবেশের সময় জুতা জীবাণুমুক্ত করার জন্য মূল ফটকে একটি বিশেষ ট্রে রাখা হয়েছে, যার ভেতর পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ ঢেলে রাখা হয়েছে।
তাতে জুতা ভিজিয়ে জীবাণুমুক্ত করে সবাইকে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন দুবার সব বন্দিদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। বন্দিদের হাত ধোয়ার সুবিধার জন্য একাধিক পয়েন্টে সাবান ও পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সূচিকাজে পারদর্শী কারাবন্দিদের দিয়ে ভালো মানের মাস্ক তৈরি করে সব বন্দিদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বিশেষভাবে তৈরি করা এ মাস্ক নিতে বন্দিদের কাছ থেকে ২৫ টাকা ফি নেয়া হচ্ছে।
কারা কর্মকর্তারা জানান, করোনা ভাইরাসটি কীভাবে ছড়ায় এবং তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা ও করণীয় সম্পর্কিত বিশেষ নির্দেশনাসংবলিত পোস্টার কারা অভ্যন্তরে ও বাইরে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের কারণে কারাবন্দিরাও খুশি। তারা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনাও মেনে চলছেন।
এ ব্যাপারে জেলসুপার শফিউল আলম জানান, ঝালকাঠি কারাগারে ১৬৭ জন কারাবন্দি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বন্দিদের সুরক্ষায় সব রকম ব্যবস্থা ও নজরদারি আমরা করছি। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের সময় কমিয়ে প্রতি ১৫ দিনে একবার করা হয়েছে। নিয়মিত বন্দিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। বন্দিদের পাশাপাশি কারারক্ষী ও কর্মকর্তাদেরও সব ধরনের নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে।