ময়মনসিংহ নগরীর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মেস ছেড়ে দিচ্ছে। প্রায় দিনই মালপত্র নিয়ে গ্রামের বাড়ির পথ ধরছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে অনেক মেস মালিক বাসাভাড়া কমিয়েও শিক্ষার্থীদের মেসে ধরে রাখতে পারছেন না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন মেস মালিকরা। অন্যদিকে নিজেদের আর্থিক ক্ষতি কাটাতেই মেসের শিক্ষার্থীরা গ্রামের বাড়ির পথ ধরেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ময়মনসিংহ নগরীতে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজসহ প্রায় ৩০-৩৫টি স্কুল-কলেজ রয়েছে। যেগুলোতে বাইরের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আবাসন সুবিধা অপ্রতুল থাকায় এসব শিক্ষার্থী নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে মেস করে থাকে। আবার অনেক অভিভাবকও তাদের সন্তানদের নিয়ে ভাড়া করা বাসায় থাকেন। চাহিদার কারণেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গত ২০-২৫ বছরে বিপুলসংখ্যক মেস গড়ে উঠেছে। অনেক বাড়ির মালিক কোনো পরিবারকে না দিয়ে মেস হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন। অনেক বাড়ির মালিকের মূল আয়ই হয় মেসের শিক্ষার্থীদের আদায় হওয়া ভাড়া থেকে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নগরীর সানকীপাড়া, কলেজ রোড, কাচিঝুলি, গোহাইল কান্দি, গোলকীবাড়ী, আকুয়া—এসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক মেস রয়েছে। এসব মেসের ভাড়া, খাওয়াসহ শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি গড়ে চার-পাঁচ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
এবার করোনার সংকটের পর থেকেই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়ার প্রবণতা। তবে মে, জুন মাস থেকে ব্যাপকহারে বাড়ি ফিরতে থাকে শিক্ষার্থীরা। অনেক মেস মালিক বাসাভাড়া কমিয়েও শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারছেন না। একাধিক মেস মালিক বলেন, বিষয়টা নিয়ে তাঁরাও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। অনেকে ভাড়া কম দেওয়ার অনুরোধ করছে। অনেকে এখন ভাড়া দেওয়ার অবস্থায় নেই বলে জানাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের সন্তানরা বেশি কষ্টে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা মেস ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় নগরের সানকীপাড়া, কলেজ রোডসহ আশপাশের এলাকায় এখন হরহামেশা বাসাভাড়া দেওয়ার সাইনবোর্ড চোখে পড়ছে।
ময়মনসিংহ শহরে মেসে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তারা মনে করেছিল, সমস্যা দুই-তিন মাসেই মিটে যাবে। কিন্তু করোনার সংকট দূর না হওয়ায় বাধ্য হয়েই মেস ছাড়ছে তারা। সানকীপাড়া এলাকার শামসুর ইসলাম নামের একজন মেস মালিক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরাও বিপদে আছে। তাঁরাও বিপদে আছেন।’ ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ম. নুরুল আফছার বলেন, ‘বর্তমান সংকট মোকাবেলা করতে না পেরে শিক্ষার্থীদের অনেকেই মেস ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে গেছে।