স্কুল তো বন্ধ গত ১৭ মার্চ থেকে ৯৫ দিন হতে চলল। বন্ধ থাকবে আরো ৪২ দিন। দীর্ঘ এই ছুটির জেরে শিশু শিক্ষার্থীরা পড়াশুনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, শিশুরা যত বেশি সময় স্কুল থেকে দূরে থাকে, তাদের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা ততটাই কমে যাবে। তাই এই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় শিশুদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিকল্প পদ্ধতি তৈরি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার (২৮ জুন) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন, সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রথমে ঠিক ছিল, স্কুলগুলো খুলবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। পরে সিদ্ধান্ত হয় ৩০ মে পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ থাকবে। আরো পরে ঠিক হয়, পুরো জুন মাস তো বটেই, জুলাইজুড়ে স্কুল বন্ধ থাকবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তার মনে হচ্ছে স্কুল খুলতে সেপ্টেম্বর হয়ে যাবে। পরে স্কুলে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অবশ্য কদিন ধরেই বলে আসছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পঠনপাঠনসহ পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের শিশুশিক্ষার্থী বলা হয়। দেশে প্রায় ২ কোটি শিশু এসব শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিভাবক এবং বিশ্লেষকরা বলেছেন, পড়াশুনার দীর্ঘ বিরতিতে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক পর্যায়ের শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর। এ সময়টিতে পড়াশুনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা
সামাজিকতাও শিখে। জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, এই দুর্যোগেও যতটুকু কাজ করা যায় ততটুকু আমরা করছি। সামনে অবশ্যই সুদিন আসবে এবং সেই সুদিনে আমাদের শিশুরা ঘুরে দাঁড়াবে। সিলেটের বালাগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও অভিভাবক অবিনাশ আচার্য্য বলেন, স্কুলে না যাওয়ায় শিশুরা সহপাঠীদের সঙ্গে মিশতে পারছে না। ভাব বিনিময় করতে পারছে না। এর ফলে শিশুরা পড়াশুনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এবং দীর্ঘদিন ঘরে বন্দি থাকায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে।
ঢাকার বাসিন্দা অনিমেষ মিত্র নামে একজন অভিভাবক বলেন, তার শিশু সন্তানরা নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে যাওয়া, সেখান থেকে ফিরে আসা এবং বাসায় পড়তে বসার বিষয়গুলো নিয়মিত রুটিনের মতো ছিল। এখন তাদের রুটিন বলতে আর কিছু নেই। জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহর তরফদার বলেন, একটি শিশু যত আগ্রহ নিয়ে টেলিভিশনে কার্টুন দেখে ঠিক ততটা অনাগ্রহ নিয়ে টেলিভিশনে ক্লাস দেখে। জোর করে শিশুদের টেলিভিশন ক্লাসে বসাতে হচ্ছে। যার কারণে পড়াশুনার প্রতি শিশুদের আগ্রহ নেই।
এদিকে কোভিড-১৯ এর কারণে দেশে দেশে স্কুল বন্ধ হয়ে বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় ইউনিসেফ সব দেশে শিশুদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে উল্লেখযোগ্য হারে সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধ থাকাকালে শিশুদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি তোমো হোজুমি সাংবাদিকদের বলেন, এই নজিরবিহীন পরিস্থিতে শিশুরা যাতে বাড়িতেই বিভিন্ন বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে পারে এবং এই জরুরি অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব যাতে শিশু ও সমাজের ওপর না পড়ে সেজন্য আমাদের এখন সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইউনিসেফ বলছে, ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিশুরা যাতে যথাযথ সামাজিক দূরত্বে থাকে সেজন্য টিভি, রেডিও, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহযোগিতার লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে কাজ করবে ইউনিসেফ। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় টালমাটাল পরিস্থিতিতে পড়েছে প্রাথমিক তথা শিশু শিক্ষা। এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের ৩১৮ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন প্রাথমিকের পাঁচ শিক্ষক ও একজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমাদের বেতন হচ্ছে নিয়মিত তবে বেতন দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। করোনার কারণে এতদিন ধরে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখা যাবে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা মারা গেছেন, তখন স্কুল খোলা থাকলেও ক্লাস চলবে না!