করোনার ভয়াল থাবায় থমকে গেছে পুরো পৃথিবী। পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে কারো জানা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একমাত্র সচেতনতায় পারে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে আমাদের রক্ষা করতে। কিন্তু সমাজের কিছু মানুষ ধর্মের ভ্রান্ত দোহাই দিয়ে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে সেখানে। করোনার মতো ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধিকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না কতিপয় ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিবর্গ। এতে করোনার ভয়াবহতা আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাদের অন্ধ বিশ্বাস, ভাগ্যে থাকলে মৃত্যু এমনিতেই হবে এবং আল্লাহ ছাড়া করোনা বা অন্য কোনো কিছুকে ভয় করা হবে ধর্মীয় পরিপন্থি কাজ। এখানেই শেষ নয়। আবার অনেকে মনে করছেন, প্রকৃত মুসলমানেরা এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবে না। কেউবা আবার ভাবছেন, যারা পাপকর্মে নিমজ্জিত কেবলমাত্র তারাই এই সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে বা মারা যাবে।
অথচ ধর্মীয় বিধি-বিধান পর্যালোচনা করলে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম চিত্র পরিলক্ষিত হয়। তিরমিযী হাদিস গ্রন্থের ১০৬৫নং হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র তোমরা চলে যেও না। আবার কোনো স্থানে মহামারি দেখা দিলে তোমরা যদি সে স্থানে অবস্থান না করে থেকো তবে সেখানে গমন করো না।’ এভাবেই আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে মহানবী (স.) সংক্রমণ প্রতিরোধে বিচ্ছিন্নকরণ (quarantine) ব্যবস্থা পদ্ধতি আমাদের শিখিয়েছেন এবং মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
আবার আমাদের সমাজে মহামারিতে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে পাপী বা জাহান্নামী মনে করা হয়ে থাকে। এরূপ ধারণা পোষণ করা সম্পূর্ণরূপে অনুচিত এবং গুনাহের কাজ। বুখারী হাদিস গ্রন্থের ২৮২৯নং হাদিসে মহানবী (সা.) মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শহিদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্য আরেকটি হাদিসে মহামারির কারণে মারা যাওয়া মুসলমানদের শাহাদাত লাভের কথা উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র আল কোরআনের সূরা বাকারায় মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে।’ সূরা আম্বিয়াতেও আল্লাহ বলেন, ‘ভালো এবং মন্দ দ্বারা আমি তোমাদের পরীক্ষা করে থাকি।’
এ থেকে স্পষ্ট অনুধাবনীয় রোগ-ব্যাধি মহান আল্লাহর তায়ালার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষামাত্র। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রেখে সচেতনতার মাধ্যমে এর থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা করতে হবে। কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস এবং প্রকৃত ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে করোনা পরিস্থিতি আরও মারাত্মক ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। আমাদের সকলকে অতীব সচেতন থাকতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা শীঘ্রই আমাদের এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দান করুন। আমিন।
লেখক : নিশি পারভীন, শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
[মতামতের জন্য সম্পাদকয় দায়ী নন।]