কোভিড-১৯ মহামারীর বড় ধাক্কা লাগা প্রাথমিক শিক্ষার সংকট কাটাতে নেয়া বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পটি শুরুতেই ৮ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিপুল পরিমাণ পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে। ধরা হয়েছে অপ্রয়োজনীয় নিয়োগ। পরামর্শক ব্যয় কমানোসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট করে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২৭ আগস্ট প্রকল্পটি নিয়ে বিশেষ মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসপিইসি সভায় তাদের কাছে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তারা জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমরা বলেছি পরামর্শক ব্যয় কমাতে হবে। এছাড়া অন্য বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে হবে। সভায় দেয়া বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স (সিএসএসআর)’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবের শুরুতেই পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু প্রশ্ন তোলা হয়।
এর মধ্যে পরামর্শক ব্যয়, কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট এবং বাহ্যিকভাবে চলে আসা সমস্যার সমন্বিত সমাধান সংক্রান্ত বিষয়ে স্পষ্টতার অভাব আছে।
এছাড়া কোভিড পরিস্থিতিতে মিশন ও ভিশন অর্জনে সহায়তা, বিদ্যালয়ের রি-ওপেনিং ও সেফটি কার্যকারিতা, এডুকেশন ট্রান্সফরমেশন, উপবৃত্তি ও দূরশিক্ষণসহ নানা ক্ষেত্রে নতুন ভ্যালু এডিশন এবং প্রকল্পের প্রতিটি উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের সুস্পষ্ট ধারণা তুলে ধরা হয়নি।
এসব বিষয় আরও স্পষ্ট করে প্রকল্পটি সংশোধন করতে বলা হয়েছে।
প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ কোটি ৮৭ লাখ এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনের (জিপিই) অনুদান থেকে ১২৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার জোগান আসবে।
একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক ও শিক্ষা অধিদফতর।
প্রকল্পের আওতায় ১৮ জনমাসের জন্য প্রকিউরমেন্ট এক্সপার্ট, ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট, মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন এক্সপার্ট এবং ৯ জনমাসের জন্য ইনভারমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল সেফগার্ড এক্সপার্ট নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর যৌক্তিকতা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করা প্রয়োজন। অন্যথায় পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব সীমিত রাখা বাঞ্ছনীয়।
এছাড়া প্রকল্পের অন্যান্য জনবল যেমন, ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ১০ জন সহায়ক নিয়োগের যৌক্তিকতা জানা প্রয়োজন।
কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, অনুদান দেয়া দাতা সংস্থা জিপিইর ইন্সটিটিউশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড এবং বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্কিং রিলেশন স্পষ্ট নয়। এছাড়া কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে এডুকেশন ট্রান্সফরমেশন কীভাবে হওয়া উচিত সে বিষয়ে অভিজ্ঞতাভিত্তিক কোনো তথ্য প্রকল্প প্রস্তাবে নেই।
এতে উপবৃত্তি, দূরশিক্ষণ কর্মসূচি এবং শিক্ষার্থীদের পুনঃভর্তি কার্যক্রম গ্রহণের কথা উল্লেখ আছে। যেগুলো ইতোমধ্যেই বিভিন্নভাবে চলমান।
এ প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত কার্যক্রমের মাধ্যমে কীভাবে নিউ ভ্যালু এডিশন হবে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য যথাযথভাবে টিএপিপিপিতে উল্লেখ করা প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ সুস্পষ্ট নয়। এখানে এডুকেশনের বিষয়ে বৈষম্য, ঝরে পড়া, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইস্যু, প্রতিবন্ধী শিশু, শিক্ষা থেকে দূরে থাকা শিশু এবং শিখন ও প্রশিক্ষণ পরিবেশ ইত্যাদি উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।
যেগুলো বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু প্রচলিত সমস্যা। সেসব সমস্যা সমাধানে ধারাবাহিকভাবে কার্যক্রম চলছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে সরাসরি উপকৃত হওয়া যাবে সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিশন ও ভিশন অর্জনে প্রকল্পটি কীভাবে কাজ করবে তা প্রস্তাবে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।