দক্ষিণ এশিয়ায় করোনারভাইরাস পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ অঞ্চলের জনবহুল চারটি দেশেই প্রতিদিন রেকর্ডসংখ্যক সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটছে। এসব দেশে বেশ আগেই করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর চেয়ে পরে করোনা শনাক্ত হওয়া অনেক দেশে রোগটি নির্মূল হয়েছে কিংবা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় রোগটি নিয়ন্ত্রণে না আসার পর বড় কারণ লকডাউনে শৈথিল্য এবং করোনা পরীক্ষায় অপ্রতুলতা।
ভারতে গতকাল শুক্রবার রেকর্ডসংখ্যক ৬ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছে জানুয়ারির শেষে দিকে। চার মাস পরও এ রোগের বাড়বাড়ন্ত সেখানে। অথচ চীন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইরানের মতো করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতেও এর চেয়ে কম সময়ে রোগটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ভারতে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৩৫৮৩ জনের।
পাকিস্তানেও করোনারভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রমজানে লকডাউনে বেশ কিছু ছাড় দেওয়ার কারণে করোনা রোগীর সংখ্যা এক মাসে বেড়ে চারগুণ হয়েছে দেশটিতে। পাকিস্তানে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। এখন পর্যন্ত রোগটি নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ২৩ কোটি জনসংখ্যার পাকিস্তানে এক মাসের ব্যবধানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার থেকে বেড়ে ৪৮ হাজারে পৌঁছেছে। শুধু গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৩০ শতাংশ রোগী। পাকিস্তানে করোনায় মারা গেছে সহস্রাধিক লোক।
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক জনবহুল দেশ বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দিন দিনই। এখানে ৭০ দিনের বেশি আগে করোনা শনাক্ত হওয়ার পরও এখন সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমবর্ধমান।
এ অঞ্চলের আরেক দেশ আফগানিস্তানেও পরিস্থিতি বিপর্যয়কর বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন। আফগানিস্তানে গতকালও আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪২ জন। মাত্র ১১৮০ জন পরীক্ষায় এ ফল পাওয়া গেছে। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৯২১৬ জন। তবে আফগানিস্তানে করোনায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আরোপ করা কড়াকড়ি ব্যাপকভাবে শিথিল করা হলে দ্বিতীয় ঝড় আসতে পারে এবং হতে পারে সেটা আরও বেশি ভয়ংকর।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সার্বক্ষণিক হিসাব রাখা ওয়ার্ল্ডওমিটারের হিসাবে গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্বে প্রাণঘাতী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি লোক। এর মধ্যে তিন লাখ ৩৫ হাজার ৬৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স ও আলজাজিরা।