করোনা : বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা - দৈনিকশিক্ষা

করোনা : বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সরকারের ছুটি ঘোষণার পর থেকে বন্ধ রয়েছে রাজধানীর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেসব স্থানে মশার ওষুধ ছিটাতে পারছেন না সিটি করপোরেশনের কর্মরা। তা ছাড়া করোনার কারণে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজও চলছে ঢিমেতালে। ফলে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস থেকে এডিস ও কিউলেক্স মশা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শনিবার (২৫ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তানজিদ বসুনিয়া ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ২৯১ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৮৯ জন সুস্থ হয়েছে। বাকি দুজন চিকিৎসাধীন। গত সপ্তাহে নতুন রোগী পাওয়া যায়নি। 

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) বৃষ্টি হওয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণাধীন ভবনের পাত্রে পানি জমে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু মশার লার্ভা জন্ম নেবে। বন্ধ থাকার পরও সিটি করপোরেশন যেসব জায়গায় যেতে পারবে, সেখানে যাওয়া উচিত। নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের গর্ত, বাস টার্মিনালগুলোতে পড়ে থাকা টায়ারে পানি জমে পরবর্তী সময়ে এডিস মশার জন্ম নেবে। এসব স্থানে সিটি করপোরেশনের কাজ করতে হবে। গত বছর প্রথমবারের মতো আমাদের গ্রামগুলোতেও আমরা ডেঙ্গু রোগী দেখেছি। তাই এ বছর প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নিতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ৫৪টি ওয়ার্ডে স্থায়ীভাবে ৩২৪ জন কর্মী আছেন। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৫৪০ জনেরও বেশি মানুষকে। সুপারভাইজার আছেন ১৬ জন। ডিএনসিসির ৩৬টি পুরনো ওয়ার্ডে পাঁচজন করে স্থায়ী ও ১০ জন করে চুক্তিভিত্তিক মশককর্মী নিয়োজিত আছেন। নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে তিনজন স্থায়ী ও ১০ জন চুক্তিভিত্তিক লোকবল নিয়োজিত আছে। সকাল ও সন্ধ্যার শিফটে ভাগ হয়ে মশার ওষুধ ছেটানোর কাজ করেন তাঁরা। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৩ থেকে ১৫ জন করে কর্মী থাকলেও বেশ কিছু কারণে সবাইকে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসির একটি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘সব ওয়ার্ডে অন্তত ১০ জন করে স্প্রেম্যান দেওয়া হলে কার্যকরভাবে মশার ওষুধ দেওয়া যেত।’

আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫টি ওয়ার্ডে ৪৩০ জনেরও বেশি মশকনিধনকর্মী আছেন। সুপারভাইজার আছেন ২০ জন। ফগার মেশিন আছে ৫৫৯টি, আর স্প্রে মেশিন আছে ৫৫২টিরও বেশি। ডিএসসিসির মশকনিধনকর্মীরা সকালের শিফটে মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্লিচিং পাউডার জাতীয় জীবাণুরোধক ছিটানোর কাজ করে থাকেন।

এদিকে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম সরেজমিনে দেখতে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ডিএনসিসির ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে ৩০ মিনিট করে প্রায় এক ঘণ্টা ঘুরেও মশকনিধনকর্মীদের দেখা যায়নি। এ সময় মহাখালীর পানির ট্যাংকিসংলগ্ন এলাকার বিডিসি ভবনের সামনে একটি নর্দমায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশার লার্ভা দেখতে পাওয়া গেছে। সেখানে গত এক সপ্তাহেও কেউ মশার ওষুধ ছিটাতে আসেনি জানিয়ে বিডিসি ভবনের এক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কর্মীরা প্রতিদিন এদিক দিয়ে যায়। আমরা ওষুধ ছিটানোর জন্য ডাকলে তাঁরা ভিন্ন শিফটে যাচ্ছে বলে চলে যায়। সবাই যদি অন্য খানে কাজ করে তাহলে এই এলাকার দায়িত্বে কে কাজ করে? মাঝে মাঝে এসে আবার চলে যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, ‘গত বছর ডেঙ্গুর সময় মশার ওষুধ ছিটানো নিয়ে সবার কী তোড়জোড়! কিন্তু এ বছর কারো কোনো খবর নেই। সব ঢিলেঢালাভাবে চলছে। মশার কামড়ে কোথাও স্থির থাকা যায় না। মশার ওষুধ ছিটানোর কাজে আরো গতিশীলতা আনা প্রয়োজন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, ‘গত বছর ডেঙ্গুতে মানুষ বেশি মারা যাওয়ার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে এ বছর এ রকম হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হলো। কিন্তু কই, এখন তো কোনো সাড়াশব্দই পাচ্ছি না। করোনাভাইরাসের জন্য যে ডেঙ্গু মশা বসে থাকবে—এমনটা ভাবলে খুব বোকামি করা হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনে করোনাও মারবে, ডেঙ্গুও মারবে।’

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, ‘গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা এ বছর জানুয়ারি থেকেই খুব গুরুত্ব সহকারে মশক নিধন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়েও যাচ্ছিল, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে কার্যক্রম কিছু ব্যাঘাত ঘটেছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে আমরা বাসায় বাসায় গিয়ে ওষুধ ছিটানো বন্ধ করেছি। করোনার কারণে মশক নিধন কার্যক্রমে কিছুটা ধাক্কা লেগেছে। তবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

নির্মাণাধীন ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশক নিধন কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুন বলেন, ‘সরকারি ছুটির ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার আগে আমরা পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তা ছাড়া গত মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত একটি সভায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ভবন পরিষ্কার রাখার কথা জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী, আমরা সব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি। আজ (গতকাল শুক্রবার) বৃষ্টি হওয়ায় আগামী দুই দিন (আজ শনিবার ও কাল রবিবার) ডিএনসিসিতে মাইকিং করে ভবনের ভেতর পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্য বলা হবে। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অফিসের ভবনগুলো বন্ধ সেগুলোতে তো আমরা যেতে পারছি না। এই দায়িত্বটুকু তাদের নিজেদের নিতে হবে।’

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072119235992432