করোনা : ভারতে অনলাইন ক্লাসের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা - দৈনিকশিক্ষা

করোনা : ভারতে অনলাইন ক্লাসের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে দিল্লিভিত্তিক নার্সারি স্কুলের শিক্ষক মেঘনা সাক্সেনা তার সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলতে প্রতিদিন কাজের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় ব্যয় করছেন। দুজনে জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে তাদের অনলাইন ক্লাসের ধারণা ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। কথা শেষে ক্লাসের বিষয় সংগ্রহ ও প্রস্তুত করতে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। সব কাজ শেষ করতে প্রায়ই তাদের গভীর রাত হয়।

বেলা ১১টায় কাগজপত্র ও হাসিমুখ নিয়ে সাক্সেনা একটি ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু করেন। চার বছর বয়সী ১২ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। এক ঘণ্টা পর তার ক্লান্তির পাশাপাশি উদ্দীপনা কমে যায় এবং গলা ব্যথা হয়ে যায়।

সাক্সেনা বলেন, ঘণ্টাব্যাপী ক্লাসের বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায়, বাবা-মা বাচ্চাদের কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে টেনে নিয়ে বসাচ্ছেন এবং স্ক্রিনে যা ঘটছে সে বিষয়ে আগ্রহী করার চেষ্টা করছেন। ছোট এই বাচ্চাগুলো আমাদের অর্ধেক ক্রিয়াকলাপই বুঝতে পারে না, এমনকি বাস্তব শ্রেণীকক্ষেও। তাদের কাছে কম্পিউটার স্ক্রিনের একজন শিক্ষকের বিষয়ে বোধগম্য হওয়া কঠিন।

তবু তিনি বা তার সহকর্মীরা এ অনলাইন ক্লাসগুলো হালকাভাবেও নিতে পারেন না। সাক্সেনা বলেন, প্রথমত বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের ‘বিচারক’ বাবা-মা যোগ দেয়, আর তারা তাদের ‘জমা দেয়া ফির মূল্য চান’। এছাড়া স্কুলের উপাধ্যক্ষ প্রায়ই শিক্ষকদের ক্লাস পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। আমি যদি একটি শব্দও ভুল করি, তিনি আমাকে সংশোধন করে দেয়ার জন্য ক্লাস বন্ধ করে দেন।

দিল্লির নিকটবর্তী গুরুগ্রামের জনপ্রিয় একটি স্কুলের মধ্যম ও বড় বাচ্চাদের ইংরেজি পড়ান সালোনি কুমার। ৩৪ বছর বয়সী এ শিক্ষককে অ্যাসাইনমেন্ট ঠিক করতে প্রায় প্রতিদিনই রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে থাকতে হয়। কুমার বলেন, ক্লাস চলাকালীন কারা মনোযোগ দিচ্ছে বা কারা দিচ্ছে না, সে বিষয়ে আমার জানার কোনো উপাই নেই। এটা যদি এভাবেই চলতে থাকে তবে আমি স্নায়বিক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি। আমার শরীর ও মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

সাক্সেনা ও কুমারের মতো সারা দেশে শত শত শিক্ষক রয়েছেন। কভিড-১৯ মহামারীতে ২৫ মার্চ থেকে ভারত লকডাউনে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই তাদের অনলাইন ক্লাসে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এটা ভারতের সবচেয়ে বেশি কাজ করা এবং স্বল্প বেতনের শিক্ষকদের জন্য ভয়াবহতম ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতার উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতম।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পাঠ্যক্রম ও পাঠদানের মতো কাঠামোগত ইস্যুগুলো নিয়ে শিক্ষকরা প্রচণ্ড চাপে পড়েছেন। একদিকে ইন্টারনেটের সংযোগ, অন্যদিকে ভারতের কুখ্যাতভাবে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার মাঝখানে পড়ে বিপর্যস্ত শিক্ষকদের মানসিক অবস্থা।

যেমন সাক্সেনার সহকর্মীর বাড়িতে কোনো কম্পিউটার নেই এবং লকডাউনের কারণে কিনতেও পারেননি। সুতরাং তিনি তার স্মার্টফোনের মাধ্যমে একযোগে ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন। বাচ্চাদের দেখা এবং ক্লাসের বিষয়গুলো তুলে ধরতে তাকে লড়াই করতে হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন ক্লাসের ভুল নিয়ে পুরো ইউটিউব ছেয়ে গেছে। সেগুলোতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকদের শেখানোর চেষ্টার সময় শিক্ষার্থীরা ধূমপান করছে, অশ্লীল ভিডিও চালিয়ে দিচ্ছে এবং ‘মিয়া খলিফা’ বা ‘শিলা কি জাওয়ানি’র মতো নাম দিয়ে লগইন করে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। যদিও শিক্ষকরা এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সংগ্রাম করে চলেছেন।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037260055541992