করোনা: মরুভূমিতে বসিয়ে রাখা হয়েছে বহু বিমান - দৈনিকশিক্ষা

করোনা: মরুভূমিতে বসিয়ে রাখা হয়েছে বহু বিমান

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের বিধি-নিষেধের কারণে ফ্লাইটের চাহিদায় ধস নামায় বাণিজ্যিক এয়ারলাইনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কোন কোন এয়ারলাইন তাদের অনেক উড়োজাহাজ বিশ্বের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বসিয়ে রেখেছে।

গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স কোয়ান্টাস তাদের সর্বশেষ বোয়িং ৭৪৭ বিমানটিকেও সিডনি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মোহাভি মরুভূমিতে পাঠিয়ে দিয়েছে।

এই বিমানটি আকাশে উড়ছিলো প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে আর এতে চড়েছে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ। এই যাত্রীদের মধ্যে রয়েছে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে শুরু করে ১৯৮৪ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার অলিম্পিক টিমের সকল সদস্য।

কোয়ান্টাস তাদের এ-৩৮০ সুপার জাম্বো বিমানগুলোকেও অন্তত ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোহাভি মরুভূমিতে ফেলে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ব্যাপক সংখ্যক বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্স তাদের বিমানগুলোর উড়ান বন্ধ করে দিয়ে সেগুলো মাটিতে বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে।

কিন্তু এসব উড়োজাহাজ রাখার জন্যেও যথেষ্ট জায়গা না থাকায় কোন কোন কোম্পানি বেছে নিয়েছে শুস্ক মরুভূমির মতো প্রত্যন্ত এলাকাকে।

এরকম জায়গাকে বলা হয় ‘এয়ারলাইনের গোরস্তান’ বা বোনইয়ার্ড। এখানে বিমানগুলোকে লম্বা সময়ের জন্যে পার্ক করে রাখা হয় অথবা বসিয়ে রাখা হয়। পরে এগুলোকে আবার সার্ভিসে ফিরিয়ে আনা হয় অথবা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে সেসব পার্টস বিক্রি করা হয়।

বাণিজ্যিক এয়ালাইনগুলো তাদের উড়োজাহাজ বসিয়ে রাখার জন্য এধরনের জায়গা খুঁজে থাকে। কারণ বিমানবন্দরের তুলনায় এসব জায়গায় বিমান রাখার খরচ অনেক কম। এসব জায়গায় দীর্ঘ সময়ের জন্য বিমান পার্ক করে রাখা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে একটি বিমান কোথাও বসিয়ে রাখতে মাসিক খরচ পড়ে পাঁচ হাজার ডলারের মতো।

“নতুন ইজারাদার কোম্পানি পাওয়ার আগে কোন কোন উড়োজাহাজ দীর্ঘ সময় ধরে বসিয়ে রাখা হয়, কোন কোন বিমান সেখানে রেখে ভেঙে টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন পার্টস বিক্রির জন্য আলাদা করা হয়, আবার কোন কোন বিমান ভেঙে আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়,” বলেন ফ্লাইট সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ এর ইয়ান পেটচেনিক।

বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এরকম কিছু জনপ্রিয় পার্কিং স্থাপনা যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও অস্ট্রেলিয়ায় মরুভূমির মতো বিস্তৃত এলাকায় অবস্থিত। উদাহরণ হিসেবে মধ্য অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিস স্প্রিংস এবং ক্যালিফোর্নিয়ার পূর্বাঞ্চলে মোহাভি মরুভূমির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

এছাড়াও এরকম সুপরিচিত আরো কিছু জায়গার মধ্যে রয়েছে অ্যারিজোনার মারানা এবং নিউ মেক্সিকোর রসওয়েল।

“মরুভূমিতে দুটো প্রধান জিনিস পাওয়া যায়: প্রথমত উন্মুক্ত বিশাল সমতল এলাকা। দ্বিতীয়ত সেখানকার আবহাওয়া এরকম যে বিমানের ধাতব অংশগুলো সহজে ক্ষয় হয় না,” বলেন মি. পেটচেনিক।

এসব এলাকায় বাতাসের কম আর্দ্রতা, কম এয়ারসল এবং বায়ু কণিকার কারণে বিমানের পার্টস দীর্ঘ সময় ধরে অক্ষত থাকে। আমেরিকান লেখক এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাবেক কলামিস্ট জো শার্কি মারানা মরুভূমিতে এরকম একটি বিমান পার্কিং এলাকায় গিয়েছিলেন।

তিনি বলছেন, “অনেক এয়ারলাইন্সের বিমানের উজ্জ্বল লেজগুলো দূরে সূর্যর আলোতে চক চক করে জ্বলছে- এটা ছিল একটা উত্তেজনাকর দৃশ্য। সব প্লেনের জানালা ও ইঞ্জিন ঢেকে রাখা হয়েছে।”

এভিয়েশন বা বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির কারণে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স যেভাবে তাদের বিমান বোনইয়ার্ডসে বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে- এরকম ঘটনা সাম্প্রতিক ইতিহাসে কখনো ঘটেনি।

দীর্ঘ পথে চলাচলকারী কিছু বিমানও বসিয়ে রাখা হয়েছে। জাম্বো জেট পরিচালনাকারী বিশ্বের বৃহত্তম এয়ারলাইন্স ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের ৩১টি বোয়িং ৭৪৭, যা তাদের মোট বিমানের ১০ শতাশ, বসিয়ে রাখবে।

এভিয়েশন বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক একটি কোম্পানি সিরিয়ামের হিসেবে এপ্রিল মাসে সারা বিশ্বে ১৪ হাজারেরও বেশি যাত্রীবাহী বিমান বসিয়ে রাখা হয়েছিল। সারা বিশ্বে যতো বিমান চলাচল করে এই সংখ্যা তার দুই তৃতীয়াংশ।

মহামারির মধ্যে এভিশেন খাতে বহ লোকের চাকরি চলে গেছে।কিন্তু এবছরের শুরুতে বসিয়ে রাখা এরকম বিমানের সংখ্যা ছিল ১,৯০০। এছাড়াও করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ ফ্লাইট।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্টে এসোসিয়েশন বা আইএটিএর এক হিসেবে বলা হচ্ছে, এবছর এয়ারলাইন শিল্পে ইতোমধ্যেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি ডলার।

সিরিয়ামের একজন কর্মকর্তা রব মরিস বলেছেন, “বাণিজ্যিক বিমান এর আগে কখনো এরকম ব্যাপক সংখ্যায় বসিয়ে রাখা হয়নি। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভ্রমণের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”

এর আগেও নানান ঘটনায় বিমান চলাচল নাটকীয়ভাবে কমে গিয়েছিল। কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতি এর আগে কখনোই সৃষ্টি হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলা ও তার পরবর্তী ২০০১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর ১৩% বাণিজ্যিক বিমান বসিয়ে রাখা হয়েছিল।

এক যুগ আগে ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরেও বিমানযাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছিল। সেসময় বসিয়ে রাখা হয়েছিল ১১% উড়োজাহাজ।

“কিন্তু ২০২০ সালে যে অনুপাতে বিমান বসিয়ে রাখা হয়েছে এর আগের হিসাব তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। এর মধ্য দিয়ে এবারের সঙ্কট কতো বড়ো সেটা স্পষ্ট হয়েছে,” বলেন মি. মরিস।

ডেল্টা এয়ারলাইন্স তাদের বিমানবহর অ্যারিজোনার একটি বোনইয়ার্ডে বসিয়ে রেখেছে। আমেরিকান এয়ারলাইন্সও তাদের উড়োজাহাজ নিউ মেক্সিকোর একটি পার্কিং এলাকায় নিয়ে বসিয়ে রেখেছে।

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন তাদের ২৯টি বিমান পার্ক করে রাখা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিস স্প্রিংসে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এয়ারবাস ৩৮০।

মি. পেটচেনিক বলেন, “নজিরবিহীনভাবে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এ৩৮০ এর সম্পূর্ণ বহর দীর্ঘ মেয়াদে বসিয়ে রাখা হয়েছে।”

মহামারি শুরু হওয়ার আট মাস পর বহু এয়ারলাইন্স আবার তাদের বিমান উড়াতে শুরু করেছে।

শুধুমাত্র ১৭ই জুলাই পৃথিবীর আকাশে ছিল প্রায় ১০ হাজার যাত্রীবাহী বিমান। এসব বিমান পরিচালনা করছিল ৩৪,৮০০ ফ্লাইট।

তবে সিরিয়ামের হিসাব মতে এই সংখ্যা সারা বিশ্বের মোট বিমানের এক তৃতীয়াংশ। এভিয়েশন শিল্পের ভবিষ্যত এখনও কতোটা অন্ধকারাচ্ছন্ন সেটা বোঝা যায় কিছু তথ্য দিয়ে: বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স বর্তমানে তার ২২০টি উড়োজাহাজের মাত্র ৩০টি পরিচালনা করছে। আরো ৩০টি যাত্রীবাহী বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে মালবাহী বিমান হিসেবে।

পার্ক করে রাখা উড়োজাহাজগুলোর ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত। কিছু কিছু বিমান ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার পর এর বিভিন্ন অংশ বিক্রি করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

“প্লেনের ইঞ্জিনের কিছু কিছু ধাতব অংশ আছে মূল্যবান। তবে পরিবেশ বিষয়ক আইনের কারণে একটি বাতিল হয়ে যাওয়া বিমানের দাম আসলে খুবই কম,” বলেন মি. মরিস।

“এ কারণে বহু বিমান হয়তো দীর্ঘ সময়ের জন্য সেখানে থাকতে পারে।”

মি পেটচেনিক বলেন, “এসব বিমান রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। পুনরায় উড়ান শুরু করার আগে এগুলোর বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়।”

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038461685180664