করোনা : মহামারির কারণে যেসব নতুন ব্যবসা বেড়েছে বাংলাদেশে - দৈনিকশিক্ষা

করোনা : মহামারির কারণে যেসব নতুন ব্যবসা বেড়েছে বাংলাদেশে

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পর দেশের অর্থনীতিতে এক ধরণের ধস নেমেছে, ছোটবড় সব ধরণের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কিন্তু আবার অন্যদিকে, এ সময়ে বাজারে নতুন তৈরি হওয়া চাহিদাকে মাথায় রেখে কিছু ক্ষুদ্র উদ্যোগ ভালো ব্যবসা করেছে। সবজি ও ফল, নাস্তা, সুরক্ষা সামগ্রী, পোশাক---কী নেই সেই তালিকায়! বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইয়েদা আক্তার।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এসব উদ্যোগের প্রায় শতভাগই অনলাইন ভিত্তিক, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন।

প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে এই মূহুর্তে প্রায় দুই হাজারের মত নতুন প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রি করছে।

আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের ২০০'র বেশি কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যস্ততাও এ সময়ে বহুগুণ বেড়েছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন উদ্যোগ

লকডাউনের সময় যখন রেস্তোরাঁসহ সব ধরণের প্রতিষ্ঠান বন্ধ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে যখন লোকের বাড়িতে সাহায্যকারীও আসছে না, সেসময় সকালের নাস্তার রুটি, বিকেলের নাস্তার নানা আইটেমের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

সুপার শপ আর পাড়ার দোকানে তখন এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে মানুষ তখন দোকানে যেতেও চাইছিলেন না।

দেখা গেল ফেসবুকের পাতায় তখন কেউ কেউ বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন---বাড়িতে বানানো আটার রুটি, চালের আটার রুটি, কিংবা বিকেলের নাস্তার নানা আইটেম সরবারহ করা হচ্ছে। এমন একজন উদ্যোক্তা রোহানা আক্তার রত্ন।ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজে পড়াশোনা করছেন।

লকডাউনের সময় গ্রাফিক ডিজাইনার স্বামী এবং বাবার রোজগার যখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, সেসময় কিছু একটা করার তাড়না বোধ করেন রত্ন।

মে মাসের শেষের দিকে এসে ফেসবুকে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের একটি পেজে যুক্ত হয়ে দেখলেন খাবারদাবার, বিশেষ করে নাস্তার আইটেমের খুব চাহিদা। মাকে জিজ্ঞেস করলেন, রুটি-পরোটা বানাতে পারবেন কিনা।

মা রাজি হয়ে গেলে নারী উদ্যোক্তাদের ওই পেজে ছোট্ট একটি পোস্ট দেন “ঘরে বানানো রুটি, পরোটা, এবং বিকেলের নাস্তার অর্ডার নেয়া হয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মাকে স্বাবলম্বী করতে চাই।”

জুন মাসের এক তারিখে প্রথম অর্ডার পেয়েছিলেন ২০টা আটার রুটি এবং ২০ টা চালের আটার রুটি।

এরপর আর বসে থাকতে পারেননি।

“শুরুতে কেবল মা আর আমিই বানাতাম। কাস্টমারকে ফ্রেশ দিতে হলে যেদিন ডেলিভারি ডেট, তার আগের দিন জিনিসটা বানিয়ে ফ্রিজ করতে হয়, সেজন্য আমাদের ওপর খুব চাপ পড়ত। কিন্তু গত দেড় মাসে যেভাবে প্রতিদিনই অর্ডার বেড়েছে, তাতে এখন পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সাহায্য লাগে।”

রত্ন বলছিলেন, ফেসবুকে নিজেদের এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘মায়ের হেঁশেল’।

সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা

বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে যে পণ্যটির চাহিদা সবচেয়ে বেড়েছে তা হচ্ছে সুরক্ষা সামগ্রী। এখন মাস্ক, গ্লাভস আর স্যানিটাইজারের মত পণ্য অনেকের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগে অন্য পেশায় ছিলেন এমন অনেকেই এখন বিভিন্ন ধরণের মাস্ক বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করছেন। কয়েক বছর ধরে চামড়ার ব্যাগ বানান এবং রপ্তানি করেন তাসলিমা মিজি। কিন্তু লকডাউনের সময় আটকে যায় তার কারখানার উৎপাদন।

কিছুদিন ভাবনাচিন্তা আর গবেষণার পর তিনি কাপড়ের মাস্ক বানানো শুরু করেন।

“একদিকে আমার কারখানায় কর্মীরা বসেই ছিল, কাজ ছিল না, আবার বাজারে চাহিদা আছে এমন কিছু নিয়েও কাজ করতে চাইছিলাম। তখন আমি কাপড়ের মাস্ক বানানো শুরু করি।”

“আর নন-ওভেন ম্যাটেরিয়ালের মাস্ক পরিবেশ বান্ধব নয়, বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্যও ঠিক উপযোগী না। সে কারণে কাপড়ের মাস্ক বেছে নিলাম আমি।”

বানানো শুরুর পর থেকে ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন তিনি।

এরফলে তার চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কর্মীদের বসে থাকতে হয়নি, তাদের রোজগারের ব্যবস্থা হয়েছে।

তাসলিমা মিজি এখন শুধু নিজেই মাস্ক বানাচ্ছেন না, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন, যারা কাপড়ের মাস্ক বানাচ্ছে এবং অনলাইনে বিক্রি করছে।

কুরিয়ার সার্ভিসের তুমুল ব্যস্ততা

এই সময়ে অনলাইনে ব্যবসা যত বাড়ছে, ক্রেতার হাতে সেই পণ্য পৌছাতে কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা বেড়ে গেছে বহুগুণ।

কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুরুতে অনলাইন থেকে কেনা পণ্যের সরবারহ ঢাকা এবং বিভাগীয় শহরগুলোতেই প্রধানত করতে হত।

কিন্তু এখন প্রায় সমস্ত জেলা শহরে অনলাইনে কেনা পণ্যের চাহিদা রয়েছে। ফলে প্রায় সবগুলো কুরিয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান জেলা শহরগুলোতে কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ তানভীর আহমেদ বিবিসিকে বলেছেন, “মানুষ যেটা শপিং মলে কিনতে যেত, এমন সব কিছুই এখন অনলাইনে অর্ডার করছে। গত তিন মাসে আমাদের অর্ডারের হার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ বলবো না, কিন্তু বহুগুণ বেড়েছে। আর সেটা শহর এলাকা ছাড়িয়ে প্রায় প্রতিটি জেলা শহর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।”

মূলত মোবাইলসহ নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক পণ্য, ওষুধ, আমসহ বিভিন্ন ফল, নারী ও শিশুদের পোশাক, সৌখিন নানা সামগ্রীর অর্ডার কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পৌছে দেয়া হচ্ছে।

তবে অনলাইনে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় সমস্যার মধ্যে মি. আহমেদ বলেছেন, তারা যেসব পণ্য অনলাইন অর্ডার ডেলিভারি করেন, তার মধ্যে অন্তত ২৫ শতাংশ ফেরত আসে।

“দেখা গেল অনলাইনে দেখা পণ্যের সাথে বাস্তবে হাতে পাওয়া পণ্যের কিছুটা অমিল পাওয়া গেল, সেক্ষেত্রে পণ্য পেয়ে ক্রেতারা চেক করে আবার সাথে সাথে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। অনলাইনের অর্ডার ডেলিভারির এক চতুর্থাংশ ফেরত পাই আমরা।”

নতুন সম্ভাবনা?

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক উদ্যোক্তাদের সমিতি বেসিসের নেতা লুনা সামসুদ্দোহা মনে করেন, মহামারির সময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য টিকে থাকাটা যখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন প্রযুক্তিকে নির্ভর করে গড়ে ওঠা ব্যবসা খাত নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।

“এর ফলে যে কেবল যিনি পণ্য বানাচ্ছেন বা আমদানি করে আনছেন, তিনিই লাভবান হচ্ছেন এমন নয়। এর সঙ্গে ওই পণ্যটি ক্রেতার হাত পর্যন্ত পৌছাতে কয়েকটি ধাপে নতুন কর্মী তৈরি হচ্ছে। যে ডেলিভারি দেয়, যে পরিবহন সেটা নিয়ে যায়---এসব জায়গায়ও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।”

তবে, তিনি মনে করেন এক্ষেত্রে প্রযুক্তি নির্ভর নতুন এসব উদ্যোগগুলোকে নিষ্ঠার সঙ্গে পণ্যের মান এবং যথাসময়ে অর্ডার ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া এসব ছোট উদ্যোক্তারা সফল হলে নিজেদের ব্যবসা বাড়ানোর উদ্যোগ যখন নেন, তখন তাদের পুঁজির সংকট বড় হয়ে দেখা যায়।

সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যেন তাদের প্রয়োজন মত সহায়তা দেয়, সে ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান লুনা সামসুদ্দোহা।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003849983215332