নড়াইল সদরে শেখাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, সহকারী ইনচার্জসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম মানিককে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। মাস্ক না পরায় তাকে এভাবে পেটানো হয়। এ ঘটনার বিচার দাবি করে গতকাল নড়াইলের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন আহতের মা লতিফা বেগম।
অভিযোগে জানা গেছে, মানিক ঢাকায় আলিবাবা ডোর অ্যান্ড ফার্নিচারের রিজিওনাল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজ বাড়ি সদরের শেখাটি গ্রামে চলে আসেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে শেখাটি বাজারের মধ্যে সাদা পোশাকে দুজন ব্যক্তি (পরে জানা যায় তাঁদের একজন শেখাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এনামুল ও অন্যজন কনস্টেবল) তাঁকে থামায়। এ সময় তাঁরা তাঁকে ধমকিয়ে বলে, ‘এখানে করোনা ছড়াতে এসেছিস?’ এর প্রতিবাদ করায় তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে মানিককে মারতে মারতে ফাঁড়িতে নিয়ে যান এসআই এনামুল। এরপর এএসআই আলমগীরসহ কয়েকজন কনস্টেবলকে নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা থেমে থেমে রুলার দিয়ে মানিককে পেটাতে থাকেন তিনি। পরে ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ আলমগীরসহ তিন পুলিশ মানিককে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে সদর থানার ওসির কাছে নিয়ে যায়। বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে ওসি ছেড়ে দেন তাঁকে।
দুপুর ১টার দিকে মানিক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিত্সা নিতে যান। বিষয়টি জানতে পেরে এএসআই আলমগীর হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের বলেন, মানিকের চিকিত্সার প্রয়োজন নেই। তিনি মানিকের ভাই রতনের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নেন।
হাসপাতালে চিকিত্সাধীন মানিক বলেন, ‘ফাঁড়ির পুলিশ একজনের মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়েছিল বিষয়টি টাকা দিয়ে মীমাংসা করতে। কিন্তু আমি কোনো অন্যায় করিনি বিধায় কোনো আপসে যাইনি।’ তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ার মিম ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
শেখাটি বাজার কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘আমরা বাজার কমিটির লোকজন পুলিশের হাত-পা ধরলেও তারা কোনো কথা শোনেনি।’
অভিযুক্ত শেখাটি ফাঁড়ি ইনচার্জ এনামুল বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ মোতাবেক আমরা ডিউটি পালন করছিলাম। তাঁর মাস্ক পরা ছিল না। তাঁকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সে পুলিশের সঙ্গে বেয়াদবি করে। তাঁকে মারা হয়নি। সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।’ টাকার বিনিময়ে মীমাংসার প্রস্তাবের বিষয়টি অস্বীকার করেন এসআই এনামুল। এ ব্যাপারে জানতে এএসআই আলমগীরকে কয়েকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।
নড়াইল পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। দেশের এই অবস্থায় হয়তো কিছুটা ধাক্কাধাক্কি হয়ে থাকতে পারে। তার পরও বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’