করোনা মোকাবিলায় দেশে কী ঘটছে ও কী ঘটতে পারে - দৈনিকশিক্ষা

করোনা মোকাবিলায় দেশে কী ঘটছে ও কী ঘটতে পারে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্বব্যাপী আজ করোনা আতঙ্ক। ডিসেম্বর, ২০১৯-এর মাঝামাঝি চীনের উহান প্রদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তখন থেকেই করোনা বিশ্ব সংবাদ-মাধ্যমগুলোয় স্থান করে নেয়। জানুয়ারি, ২০২০ সাল থেকেই বাংলাদেশে মিডিয়ার বদৌলতে করোনাভাইরাসের খবরাখবর নিয়মিত আসতে থাকে। যেসব দেশ শুরু থেকেই করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে পূর্ব ধারণা লাভ ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর বিস্তার রোধে তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল সেসব দেশে করোনার ভয়াবহতার প্রকাশ ও বিস্তার কম হয়েছে। এসব দেশের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। তবে এরূপ দেশের সংখ্যা নিতান্তই কম, যেমন তাইওয়ান, হংকং, উত্তর কোরিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি।

অন্যদিকে যেসব দেশ করোনার ভয়ঙ্কর রূপ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়নি সেসব দেশে করোনাভাইরাস কমিউনিটি তথা সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছে। শত শত লোক মারা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি ইত্যাদি ধনী ও শক্তিধর দেশগুলোও করোনার আক্রমণে কাবু হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার রোগীকে হাসপাতালে জায়গা দিতে পারছে না, চিকিৎসা দিতে পারছে না, আইসিইউ ও ভেনটিলেটরের অভাব ও স্বল্পতার কারণে বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে না। তারা যুবক বা কম বয়সীদের ভেনটিলেটরের সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে। বয়স্ক রোগীরা অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। রোগীর অস্বাভাবিক আধিক্যের কারণে চিকিৎসাসেবা প্রদানের সামর্থ্যরে সীমা ছাড়িয়ে গেছে। লাশের বিরাট মিছিল। সৎকার করতেও কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহ চিত্র, মোট জনসংখ্যার চার ভাগের প্রায় তিন ভাগ আজ গৃহবন্দী। মানুষ চরম হতাশা, ভীতি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। করোনার সঙ্গে অর্থনৈতিক দুর্যোগ ও মন্দা হাতছানি দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বেই।

সচেতন মহল জানুয়ারি থেকেই করোনা নিয়ে কথা শুরু করে। সরকার বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতা-বিবৃতিতে সর্বদা করোনাভাইরাসের কথা উল্লেখ করতেন। করোনা মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বিভিন্ন সভায় করোনার প্রতিরোধ ও এর বিস্তার ঠেকানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো কী কী তাও বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। তিনি সবাইকে তা অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষের সব অনুষ্ঠান স্থগিত করেছেন। মানুষকে জনসমাবেশ না করার জন্য এবং জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন এবং ভাষণে সরকারের পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করেছেন। জনগণকে ঘরে থাকার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। সরকার ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে এবং ছুটিকালীন সবাইকে ঘরের মধ্যে থাকার অনুরোধ করে। সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়। সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও পুলিশ মানুষকে ঘরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বাইরে থেকে জনগণকে নিরাপদ রাখার জন্য ঘরে রাখার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ মানবিক কাজও করছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সব কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে মাঠের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হন এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এভাবে অন্য কোনো দেশের সরকারপ্রধান কথা বলেন কিনা আমার জানা নেই। শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কারণ তিনি জাতির পিতার কন্যা। সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তা এবং মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সামাজিক নিরাপত্তার বলয় বৃদ্ধি করছে। ১০ টাকা মূল্যে খোলাবাজারে দরিদ্রদের মধ্যে চাল বিতরণ করছে।

কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় একশ্রেণির মানুষরূপী পশু গরিব দুস্থদের এই ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ করছে, কালোবাজারে বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দলের কতিপয় স্থানীয় নেতা-কর্মী রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা শুধু দুঃখজনক নয়, এগুলো ঘৃণিত ও লজ্জাকর। বিশ্ব মানবতার এ ক্রান্তিকালে মানুষ মানুষের পাশে যার যতটুকু আছে তাই নিয়ে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে হাত প্রসারিত করবে। এটাই মানবতা। অথচ তারা করছে বিপরীত কাজ। সরকার ও দল তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং নিচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের করোনার যেমন ব্যাপক ও সীমাহীন বিস্তৃতি হয়ে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে আমাদের দেশেও সে রকম হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৃত্যবরণও করছে। সূচনাপর্বে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে কিছুটা শৈথিল্য প্রদর্শন করায় করোনা আজ কমিউনিটি তথা সমাজের সর্বত্র সংক্রমিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রতিদিন টেস্টে করোনা পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যান্য দেশেও একই গতিতে সংক্রমণের সংখ্যা অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছানোর কারণে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাওয়ায় আক্রান্ত অধিকাংশই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছে। চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ সচেতন নাগরিকরাও আশঙ্কা করছে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যার বিস্ফোরণ সরকারের স্বাস্থ্যসেবার প্রক্রিয়া ও সামর্থ্যকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। হাসপাতালগুলোয় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বৃদ্ধি, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর এবং এ সংকটকালে মানবতার সেবায় তাদের আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি ছিল। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের নিয়ে একটি নিবেদিত টিম গঠন করাও অপরিহার্য ছিল।

মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রধান করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হলেও ওই কমিটির কর্মতৎপরতা তেমন একটা দেখা যায়নি। তিন মাসের অধিক সময় পেয়েও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর ঢিলেঢালাভাবে হেঁটেছে। বিদেশ থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যাপারে আরও কঠোর ও যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল। টেস্ট ও চিকিৎসা সীমিত না রেখে প্রথম থেকে তার কলেবর বৃদ্ধি করলে আক্রান্তদের চিত্র পাওয়া যেত এবং তাদের আইসোলেশনে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত। অবস্থার ভয়াবহতা না বুঝতে পারার কারণেই হয়তো এ ক্ষেত্রে অনেকটা ধীরে চলার মনোভাব দেখানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্যে যা দাবি করে, মিডিয়াকর্মীরা সরেজমিনে গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখতে পান; যা হতাশাজনক।

যাই হোক, বিলম্বে হলেও এখন তারা কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন। কাজ করছেন। সরকার করোনা সংক্রমণ ছড়ানো প্রতিহত করার জন্য ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করল যা অনেকটা লকডাউনে রূপ নিল। জনগণকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করা হলো। জনসমাবেশ এড়াতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করল। কিন্তু আমরা কী দেখলাম। ২৬ তারিখের আগেই গার্মেন্টশ্রমিকসহ লাখ লাখ লোক তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেল। বাস, লঞ্চ, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সরকারের উচিত ছিল বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া যাতে ঢাকা থেকে কেউ বাইরে যেতে না পারত। এই লাখ লাখ লোকের মধ্যে করোনাভাইরাস বহন করে এমন লোক যে ছিল না তা কেউ বলতে পারবে? করোনাভাইরাস ছড়ানো ও আক্রান্তের ঝুঁকি নিয়েই এ লোকগুলো সবার নাকের ডগা দিয়ে ঢাকা ছেড়েছিল।

সরকারি ছুটির সঙ্গে সঙ্গে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোও ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু মালিকরা ৪ এপ্রিলের ৪ পর ফ্যাক্টরি খোলা থাকবে বলে শ্রমিকদের জানিয়ে দিলেন। লাখ লাখ লোক আবার ঢাকামুখী হলো। পরিবহন বন্ধ ছিল। হেঁটে, রিকশায়, ভ্যানে যে যেভাবে পেরেছে অনেক কষ্ট করে ঢাকা এসেছে। সামাজিক দূরত্ব বা ব্যক্তি হতে ব্যক্তির দূরত্ব রাখার পরামর্শ কেউ মানেনি। সরকারি আদেশ-অনুরোধের তোয়াক্কাও কেউ করেনি। মানুষকে ঘরে রাখতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। শ্রমিকরা চাকরি রক্ষা ও মার্চের বেতন-ভাতা নেওয়ার জন্য কষ্ট স্বীকার করে ঢাকা আসে। সমালোচনার মুখে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো আবার মালিকরা বন্ধ ঘোষণা করে। এখন পর্যন্ত বেতন না পাওয়ায় শ্রমিকরা আবার রাজপথে সমাবেশ করছে। বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করছে। শ্রমিকরা ২৫ মার্চ পর্যন্ত কাজ করেছে। মালিকরা তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন। শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হবে কেন? সরকারও তো গার্মেন্ট সেক্টরে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিশ্চুপ কেন? গার্মেন্ট সেক্টরের এ অরাজকতা ও করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বৃদ্ধি করার দায় কার? বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয় সবাইকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই কেন?

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। দেখা যাবে কয়েকদিনের মধ্যে হাজার হাজার রোগী শনাক্ত হবে। ১৬-১৭ কোটি লোকের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক হয়ে যেতে পারে তা অসম্ভব নয়। চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতা, অপ্রতুলতা, দক্ষ চিকিৎসকের স্বল্পতা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও Motivated স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে বিনা চিকিৎসা ও অবহেলায় ব্যাপকহারে রোগীর মৃত্যবরণ শুরু হলে জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্বের অন্য দেশ ও বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। এ দেশে একশ্রেণির রাজনীতিবিদ, বিশেষ কুচক্রী ও সুযোগসন্ধানী মহল আছে যারা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে সরকারকে বিপাকে ফেলতে পারে। গুজব ছড়ানোর লোকেরও অভাব নেই। এ রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সরকারের আন্তরিকতা ও শত প্রচেষ্টা, পদক্ষেপ ও উদ্যোগ তখন ঢাকা পড়ে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বৃদ্ধি ও মান উন্নত করে তা দৃশ্যমান করতে হবে। মানুষ দেখে যেন উপলব্ধি করতে পারে যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। কাজ ও সেবার মাধ্যমেই তা দৃশ্যমান করতে হবে।

শ্বাসকষ্ট লাঘব ও চিকিৎসার জন্য ভেনটিলেটরের বিকল্প কিছু হয়তো নেই। কিন্তু আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্তসংখ্যক আইসিইউ ও ভেনটিলেটর নেই। সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে। টাকা থাকলেও এ পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রায় অসম্ভব। কারণ উন্নত দেশেও ভেনটিলেটরের চরম সংকট আছে। দেশের মধ্যে কোনো সংস্থা ভেনটিলেটর তৈরি করতে পারে কিনা তা যাচাই করা যেতে পারে। চিকিৎসকদের শুধু হুমকি-ধমকি দিলেই হবে না। যারা হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা দিচ্ছেন মূলত তারা করোনার বিরুদ্ধে সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করছেন। তাদের শতভাগ সুরক্ষা দিতে হবে। তাদের মনোবল অটুট রাখতে হবে। মানসম্মত পিপিই পেলে তাদের মনে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি হবে। তখন করোনার ভয়ে কর্তব্য এড়িয়ে চলবেন না। তাদের প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশনও জরুরি। এ কাজটি আরও অনেক আগেই শেষ করা উচিত ছিল। আট-দশ দিনের প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন দিয়ে তাদের তৈরি করলেই হয়। হয়তো কারও কারও প্রশিক্ষণ হয়েছে। কিন্তু যারা দায়িত্ব পালন করবেন বা করছেন তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। তাদের জন্য উপযুক্ত অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থাও থাকা প্রয়োজন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এ দুর্যোগের সময় মানবতার সেবায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তা, কল্যাণ ও অন্যান্য বিষয় অবশ্যই দেখছে।

সরকার ইতিমধ্যে তাদের জন্য প্রণোদনামূলক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মাঠ পর্যায়ের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত Interaction রাখতে হবে। যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী তাদের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্যকে বিনা কারণে বা ভয় পেয়ে অবহেলা করবে বা পলায়নপর আচরণ করবে তাদের কঠোরভাবে দেখতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এদের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।

করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসার নিশ্চয়তা অনিশ্চিত। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। তাই আক্রান্ত ঠেকানোর জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও পরামর্শ মেনে চলতে হবে। ঘরেই থাকতে হবে। প্রতিরোধের জন্য সতর্কতার সঙ্গে ঘরে থাকার আর কোনো বিকল্প উপায় নেই। ঘর থেকে বেরোলেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে- এ কথা সব সময় স্মরণে রাখতে হবে। করোনার বৈশ্বিক সমস্যা দলমত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের আর্থিক প্রণোদনা ও অন্যান্য সুযোগ যাতে শতভাগ সদ্ব্যবহার হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বল্প সুদে যে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা সরকার করছে তা যেন সহজ হয়। ব্যাংকের অহেতুক জটিল ব্যবস্থা ও দালালের খপ্পরে পড়ে যাতে ঘুষ দিয়ে ঋণ নিতে না হয় তা কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করার জন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কার্যকর তদারক নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক : এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037639141082764