করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। দেশের দুস্থ, অসহায়, প্রতিবন্ধী, হিজড়া জনগোষ্ঠীসহ কর্মহীন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।
বিভিন্ন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি, জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ, প্রাকৃতিক ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের সারাদেশে ১ হাজার ১৯২টি ইউনিট অফিসে ২২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।
রোববার (৫ এপ্রিল) সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহ আলম প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, ঢাকা জেলায় প্রায় তিন কোটি টাকাসহ প্রতি জেলায় জনসংখ্যা ও দারিদ্র্যতার হার বিবেচনায় ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বিশেষ অনুদান হিসেবে জেলাপর্যায়ে তিন কোটি টাকা বিতরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ অর্থের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলায় দুস্থ, অসহায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, পথশিশুদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের কাজ চলছে। বাড়িতে অবস্থানের ঘোষণায় কর্মহীন হয়ে পড়া ঢাকা শহরের ৫০০ পরিবারকে প্রতিদিন ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, আধালিটার সয়াবিন তেল ও একটি করে সাবান প্রদান করা হচ্ছে।
৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে ৩ হাজার ৮৪টি দুস্থ ও কর্মহীন পরিবারের মাঝে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা শহরের ভবঘুরে ও বাস্তুহীন মানুষদের করোনার ঝুঁকিহ্রাস ও আবাসন সহায়তাদানের লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর গৃহহীনদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রসমূহে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু করেছে। ৩ এপ্রিল ১৯ জন গৃহহীনকে মিরপুরের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়েছে। জনসমাগম পরিহারের লক্ষ্যে দেশব্যাপী চলমান উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীভাতার নতুন সুবিধাভোগী বাছাই কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও নির্দিষ্ট দিনে ব্যাংক থেকে ভাতার অর্থ গ্রহণের কারণে প্রচুর জনসমাগম এড়াতে সকল তফসিলি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সপ্তাহে তিন বা ততধিক দিনে ভাতার অর্থ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত রোহিঙ্গা শিশুসুরক্ষার চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
চলতি এপ্রিল মাসে সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম ৪ হাজার ২১০ জন রোহিঙ্গা শিশুর প্রতিপালনকারী ৩ হাজার ৪২ জন কেয়ারি গিভারকে জনপ্রতি মাসিক ২ হাজার টাকা হিসেবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের জন্য ৪ হাজার টাকা হিসেবে মোট প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকা বিতরণ করা হবে।
সরকারি শিশু পরিবার, ছোটমণি নিবাস, শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, দুস্থ শিশুদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, শান্তি নিবাসের এতিম ও দুস্থ, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নিবাসীদের এসব প্রতিষ্ঠানে করোনা সংক্রমণরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
করোনা মোকাবিলায় শিশু সুরক্ষামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইউনিসেফ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সমাজকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষায় ১০০ পিপিই গাউন, ২৫০টি ভাইরাস প্রতিরোধী চশমা, ৫০০ ভাইরাস প্রতিরোধী হ্যান্ড গ্লাভস ও ২৫০টি ফন্টেয়ার মাস্ক সরবরাহ করেছে।
এসব উপকরণ মাঠপর্যায়ে হাসপাতাল, সমাজসেবা কার্যালয়ে রোগীসেবায় কর্মরত সমাজকর্মী, খাদ্যসহায়তা প্রদানকারী সমাজকর্মী, পরিবহন সহায়কারী, শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সমাজকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।