প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মরণ ছোবলে হঠাৎ যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে সবকিছু। বিশেষ করে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি কোচিং সেন্টার ও ছায়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও একেবারে বন্ধ হয়ে আছে। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তবে এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সেবা নিশ্চিত করতে কোনোভাবেই থেমে নেই দেশের অন্যতম কোচিং সেন্টার ও ছায়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্ভাস-উন্মেষ শিক্ষা পরিবার। তারা শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এবং পড়ালেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শুরু করেছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।
গত জুনের মাঝামাঝি থেকে লাইভ ক্লাস, ডেইলি লাইভ পরীক্ষা, সাপ্তাহিক লাইভ পরীক্ষা কার্যক্রম দিয়ে শুরু হয়েছে ৮ম, ৯ম, ১০ম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির অনলাইন কার্যক্রম। এছাড়া সর্বশেষ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের বিজ্ঞানের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের রিভিশন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল ও ভার্সিটি ‘ক’ ইউনিটে ভর্তিচ্ছুদের প্রিপারেশন।
প্রসঙ্গে উদ্ভাস-উন্মেষ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে বোর্ড পরীক্ষা এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে উদ্ভাস-উন্মেষের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় বন্ধ রাখতে হয়েছে। সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বন্ধের সময়ে যেন অনলাইনে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারি। যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে লাইভ ক্লাস, লাইভ এক্সাম, প্র্যাকটিস এক্সাম, মডেল টেস্টসহ পূর্ণাঙ্গ সব শিক্ষা সেবা। আমাদের সেই প্রস্তুতির মধ্যে গতি এনে দিয়েছে মহামারি করোনা। অবশেষে আমরা এই করোনাকালেই আমাদের অনলাইন কার্যক্রম চালু করতে পেরেছি এবং শিক্ষার্থীদেরও ভালো সাড়া পাচ্ছি।
কীভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে? এমন বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উদ্ভাস-উন্মেষ এর হেড অব টিচার্স ডিপার্টমেন্ট আবু সায়েম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা এখন জুম অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছি। নিরাপদে বাসায় বসে ক্লাস করার জন্য এটি একটি চমৎকার সফটওয়্যার এবং এর ব্যবহারবিধিও সহজ। এটা অনেকটা শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেয়ার মতোই। যেখানে ছাত্র-শিক্ষক সবাই সবাইকে দেখছেন, শুনছেন, প্রশ্ন করছেন এবং উত্তর দিতে পারছেন। প্রয়োজনে চ্যাট বক্সে যে কোনো কমেন্ট, সাজেশন ও প্রশ্ন লিখে রাখতে পারছেন। আর এসবকিছু্ই অটোমেটিক্যালি রেকর্ড এবং ভিডিও করার ব্যবস্থাতো আছেই। আছে হোয়াইট বোর্ড। যেখানে শিক্ষক ‘সরাসরি ক্লাস’-এর মতোই লিখতে পারেন, ড্রয়িং করতে পারেন, বোঝাতে পারেন, মুছতে পারেন ইত্যাদি। আর এই ক্লাসের পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পরীক্ষা দেয়া, যার মাধ্যমে সে নিজেকে পরিপূর্ণ যাচাই করতে পারবে। তাই আমরা ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছি উদ্ভাস-উন্মেষ এর নিজস্ব ওয়েব প্ল্যাটফরম এর মাধ্যমে। যেখানে শিক্ষার্থীরা লাইভ এক্সাম এবং প্র্যাকটিস এক্সামে অংশগ্রহণ করে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে পারছেন। পরীক্ষা শেষে তাৎক্ষণিক পাচ্ছেন রেজাল্ট এনালাইসিস রিপোর্ট। যেখান থেকে জানতে পারছেন পরীক্ষায় কোন উত্তরগুলো সঠিক হলো, কোন উত্তরগুলো ভুল হলো, কতগুলো প্রশ্নের উত্তর করেনি এবং ভুল উত্তরগুলোর সঠিক উত্তর কি ও এর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, মূলত শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রত্যাশা করি, উদ্ভাস-উন্মেষ এর অফলাইন শিক্ষা সেবার মতো এই অনলাইন শিক্ষা সেবাও শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ কার্যকরী এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী হবে।
গত ১৭ মার্চ থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বন্ধ রয়েছে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে সব কোচিং সেন্টারও। সর্বশেষ এই করোনাকালীন ছুটি আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।