করোনাকালে ঈদ : শিক্ষকদের শতভাগ বোনাস চাই - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে ঈদ : শিক্ষকদের শতভাগ বোনাস চাই

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

করোনা মহামারি শুরুর পর দুর্যোগের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা রমজানের ঈদ কোনোমতে উদযাপন করেছেন। আরো অনেক পেশাজীবীদেরও একই অবস্থা। এমনিতে ফি বছর ঈদের আনন্দ অতটা থাকেন বেসরকারি শিক্ষকদের।  এবার করোনার কারণে রোজার ঈদে আনন্দ বলতে কিছু ছিল না। কেবল সরকারি বেতন ও সিকি আনা বোনাস দিয়ে রমজান মাসের অতিরিক্ত ব্যয় ও ঈদের খরচ সংকুলান করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন কিংবা বোনাস কোনটিই ছিল না। অন্য কোনো আয় রোজগার নেই। তাই এ বছর রোজার ঈদে পরিবার পরিজন নিয়ে কী যে এক বেদনার ঈদ তারা উদযাপন করেছেন, সে কেবল তারা ছাড়া অন্য কেউ উপলব্ধি করার কথা নয়। অবশ্য বরাবর তাদের কষ্টের ঈদ উদযাপন করতে হয়। এবার করোনার কারণে অন্য এক  ঈদ পালন করতে হয়েছে। দোকানদারের বাকির খাতায় অনেকের গত ঈদের দায় দেনা এখনো পড়ে আছে।

আরেক ঈদ আসন্ন। ঈদুল আজহার এই ঈদকে অনেকে ‘বড় ঈদ’ বা ‘কোরবানীর ঈদ’ বলে থাকেন। ‘বড় ঈদ’ এই জন্য যে, রোজার ঈদের চেয় দশগুণ আনন্দ নিয়ে এটি আসে। দশগুণ আনন্দের সাথে দশগুণ বাড়তি খরচ। এর একটি অনুষঙ্গ যে, এই ঈদে পশু জবাই করে কোরবানী আদায় করতে হয়। করোনা মহামারির মধ্যে মুসলিম উম্মাহকে এই ঈদটিও উদযাপন করতে হবে। বৈশ্বিক মহামারির এই কঠিন সময়ে এমনিতে ঈদের আনন্দ কে কতটুকু উপভোগ করতে পারবে? চারদিকে পরিচিত মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর খবরে মন খারাপ। স্বাভাবিক জীবনযাপন নেই। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মানুষে মানুষে মানসিক ও মানবিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

সামাজিকতা, বিনোদন, আনন্দ, স্ফুর্তি-এক কথায় আপাত সংস্কৃতির চর্চা নেই। তবু মুসলমান সমাজে পবিত্র ঈদুল আজহা নিয়ে উচ্ছ্বাস আছে। সীমিত পরিসরে হলেও সাধ্য অনুযায়ী ঈদ উদযাপনের আয়োজন। এর সাথে হৃদয়, মন ও আত্মার তৃপ্তির বিষয় জড়িয়ে আছে। করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে আসন্ন ঈদুল আজহার পূর্ব প্রস্তুতির বিষয়টি অনেকের দুশ্চিন্তার কারণ। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য তো বটে। প্রায় তিন মাস থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বেতন নেই। সরকারি যে বেতন পান, তাতে মাত্র এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া আর ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা। এই করোনাকালে কারো স্বাভাবিক সর্দি জ্বর হলেই করোনা সন্দেহে ৫০০ টাকার বেশি নাপা এক্সটেন্ড, এজিথ্রমাইসিন, মোনাস ১০ জাতীয় ঔষধ খাওয়া লাগে।

এই সময়ে পরিবারে প্রায় সবার সর্দি-কাশি-জ্বর লেগে থাকে। তাই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন সঙ্গত কারণে ঔষধ পথ্য বেশি লাগে। সে ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককের গোটা পরিবারের জন্য ৫০০ টাকার চিকিৎসা খরচ বেমানান। 

আমাদের দেশে গরু, মহিষ কিংবা ছাগল জবাই করে কোরবানী দিতে হয়। আজকাল সাদামাটা গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা। ভাগে কোরবানী দিতে গেলেও ১০-১২ হাজার টাকার দরকার। ঈদের আনুষাঙ্গিক খরচ আরো ৮-১০ হাজার টাকা লাগে। কোনোমতে কোরবানীর ঈদ পার করতে কম করে ২০ হাজার টাকা দরকার। একজন বেসরকারি শিক্ষক এই টাকা কোথায় পাবেন? একটা সময় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো বোনাস ছিল না। তখন অন্য রকম একটা কষ্ট ছিল। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষকেরা বেতনের শতকরা ২৫ ভাগ এবং কর্মচারীরা শতকরা ৫০ ভাগ বোনাস পেতে শুরু করেন। ১৫-১৬ বছরে ১৫ হাজার টাকার গরুর দাম বেড়ে ৫০ হাজার টাকা হলেও তাদের বোনাসের অঙ্কটি আজ পর্যন্ত নড়চড় করেনি। সরকার এলো, সরকার গেলো। নেতা আসে নেতা যায়। নতুন সমিতি-ফোরাম হয়, সেলফি হয়, টকশো হয়, লাাইভ হয় কিন্তু জায়গামতো শিক্ষকদের দাবি তুলে ধরার কাউকে পাই না। 

তাই ঈদ এলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার অন্ত থাকে না। নিজের পছন্দমতো কোরবানী আদায় করতে না পারার কষ্ট। ছোট ছোট বাচ্চাদের চাহিদামতো জামা কাপড় দিতে না পারার দুঃখ। পরিবারের অন্য সদস্যদের চাওয়া পূরণ করতে না পারার যন্ত্রণা। সব কষ্ট মিলে প্রতি বছর একটি কষ্টের সাগর বুকে চেপে তারা ঈদ পার করেন। এবার করোনার কারণে সেই কষ্টটি বহুমাত্রিক হয়ে উঠেছে। তাই করোনাকালীন এই মহা দুর্যোগে ও পরবর্তী সময়ে যাতে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সবক’টি ঈদ পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেন, সে জন্য তাদের শতভাগ বোনাস দেয়ার সবিনয় অনুরোধ জানাই।

লেখক : অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী, অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার সংবাদ বিশ্লেষক।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038759708404541