করোনাকালে কতটুকু শিখছে তিন কোটি শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে কতটুকু শিখছে তিন কোটি শিক্ষার্থী

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই ছুটি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই রয়েছে পড়ালেখার বাইরে। টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচার করা হলেও সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের খুব একটা আগ্রহ নেই। অনলাইন ক্লাস চললেও তাতে অংশ নিচ্ছে সামান্যসংখ্যক শিক্ষার্থী। তাই শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় বাতিল করেছে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখছে, সে বিষয়ে খেয়াল নেই শিক্ষা প্রশাসনের। আজ ৩০ আগস্ট কালেরকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। 

 প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এরই মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পাঁচ মাস ধরে স্থগিত রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। স্কুলে হয়নি অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, দেশে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী রয়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১০০ জন। আর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী রয়েছে এক কোটি তিন লাখ ৪৯ হাজার ৩২৩ জন। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে আরো প্রায় ৪৫ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন কোটির ওপরে।

উচ্চ মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও নিজেরা বুঝে পড়ালেখা করতে পারেন। কিন্তু প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের জন্য স্কুল ও প্রাইভেট-কোচিংই ভরসা। অথচ গত সাড়ে পাঁচ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মফস্বলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা হচ্ছে না। টেলিভিশনে গত ২৯ মার্চ থেকে মাধ্যমিকের এবং গত ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের ক্লাস প্রচার শুরু হলেও আকর্ষণহীন এসব ক্লাসে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যদিও প্রাথমিকের ক্লাস আগস্ট মাস থেকে রেডিওতেও প্রচারিত হচ্ছে। এ ছাড়া শহরাঞ্চলের কিছু স্কুলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই পড়ালেখার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

অন্যান্য দেশেও করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু পড়ালেখা থেমে নেই। স্কুলগুলো নিজেরাই অনলাইন ক্লাসে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব অভিভাবকেরই অনলাইন ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। ফলে সরাসরি ক্লাসের মতো না হলেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।


কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসন শুধু নীতি প্রণয়নেই ব্যস্ত রয়েছে। পরীক্ষা বাতিল এবং স্কুল খুললে কী পরিকল্পনা হতে পারে, সেটা নিয়েই ব্যস্ত প্রশাসন। মাঠ পর্যায়ে কিভাবে পড়ালেখা চলছে বা পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে কোন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, সে ব্যাপারে খেয়াল নেই। এমনকি মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও এ ব্যাপারে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আকর্ষণহীন টিভি ক্লাসগুলো বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই দেখছে না। আমাদের যেহেতু অন্য দেশের মতো ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা নেই, তাই গ্রামে ইউনিয়নভিত্তিক ও শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক আলাদা পরিকল্পনা করা উচিত ছিল। সেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রশাসন—সকলে মিলে কাজ করতে হবে। তারা যে যার এলাকার শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।’   

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশের সাড়ে তিন কোটি পরিবারের মধ্যে ৫০.৬ শতাংশ পরিবারের বাড়িতে টেলিভিশন রয়েছে। তবে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে বলে টিভি থাকলেও যাদের বাড়িতে কেবল সংযোগ নেই, তারা এই ক্লাস দেখতে পারছে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এক জরিপে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাস দেখছে বলে জানিয়েছে। তবে এই ক্লাসের প্রতি বর্তমানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আরো অনেক কম বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।

এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা সদরের বড় বড় স্কুলে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। সেখানেও সর্বোচ্চ দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অংশ নেয় বলে জানা গেছে। অনেক দরিদ্র পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। মফস্বলের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারেই স্মার্টফোন নেই, ইন্টারনেটের ধীরগতি ও উচ্চমূল্যের কারণে ওই সব পরিবারের শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণও সম্ভব নয়। ফলে শহর-গ্রাম ও ধনী-দরিদ্রের মধ্যে শিক্ষার বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমার স্কুলের তিন-চার ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থী সংসদ টিভির পাঠ কার্যক্রমের মাধ্যমে কিছুটা উপকৃত হচ্ছে। বাকিরা টিভির ক্লাসে মনোযোগী হতে পারেনি। এখানে প্রশ্নোত্তর, পরীক্ষা, পড়াশোনার চাপ নেই। তাই তাদের আগ্রহও নেই।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীই পড়ালেখার বাইরে আছে। যারা টিভি ক্লাসে যুক্ত আছে, তারাও কতটুকু নিতে পারছে সেটা আমরা এখনো পরিমাপ করতে পারিনি। এ জন্য এখনই একটা জরিপ করা খুব দরকার। স্কুল খুললে এই বিষয়টা আমাদের কাজে লাগবে। যদি বার্ষিক পরীক্ষা হয়ও তখনো অনেকেই আসবেই না, কারণ তারা তো পড়েইনি।’ তিনি মনে করেন, এই মুহূর্তে শিক্ষার জন্য একটি বড় প্যাকেজ দরকার। সেখান থেকে সব শিক্ষার্থীর হাতে একটি করে ট্যাব দিয়ে দেওয়া দরকার, যাতে সবার জন্য অনলাইন ক্লাস নিশ্চিত করা যায়।

করোনায় স্কুলের টিউশন ফি নিয়ে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলছে চরম বিরোধ। স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরো টিউশন ফি চাইছে এবং নানাভাবে তা আদায় করছে। আর অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠান বন্ধ। পাঠদান নেই। তাই অন্তত ৫০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ চাইছেন তাঁরা। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ। ফলে পড়ালেখার চেয়ে টিউশন ফি নিয়েই বেশি চিন্তিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা গেলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। আর সেটা সম্ভব না হলে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই ‘অটো পাস’-এর চিন্তা রয়েছে।

সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান  বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কাজ করা উচিত। আমি সচিব থাকাকালে কিছু বই ডিজিটাল করেছিলাম, স্কুলগুলোতে ওয়েবসাইট করেছিলাম। ৭০ শতাংশ মাধ্যমিক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আছে। কিন্তু সেগুলোতে তাগিদ দেওয়া হয় নাই বলে আর এগোয়নি।’ তিনি বলছেন, যখন করোনা সংকট দেখা দিল, তখন সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ক্লাস শুরু করা যেত। যেখানে অনলাইন নেই তাদের জন্য ইউটিউবে ক্লাসগুলো রাখা হলে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে সেগুলো ডাউনলোড করা সম্ভব হতো। শিক্ষকদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত ছিল। শিক্ষকদের অবশ্যই ল্যাপটপ থাকতে হবে। প্রয়োজনে ইন্টারনেটের বিল স্কুলকে দিতে হবে। আর শিক্ষার্থীদের যেহেতু আগের চেয়ে খরচ কম, তারা সেই টাকা অনলাইনের জন্য ব্যয় করবে। তবে এ জন্য পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007108211517334