সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এসব শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের ওপর নির্ভর করে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর অসংখ্য শিক্ষক। প্রতিষ্ঠান টিউশন ফি আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়েছে। এই অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের ওপর নির্ভর করেই শিক্ষকদের বেতন ও বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক কর্মচারীদের পরিবার-পরিজন নিয়ে করুণ অবস্থায় দিনাতিপাত করতে বাধ্য হবে।
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা মূলত টিউশনি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে প্রতিষ্ঠান গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি ও বেতন আদায় করতে না পারায় শিক্ষকদের বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বাঁচার তাগিদে সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানাচ্ছি। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে সহায়তা ব্যবস্থা করে দিবেন।
এদিকে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্যপরিষদের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, করোনার ক্রান্তিলগ্নে আমরা প্রায় ৬০ হাজার প্রতিষ্ঠান সাথে সংশ্লিষ্ট ২০ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা কোনো টিউশন ফি আদায় করতে পারিনি। তাই শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত হয়। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়িভাড়া ঠিকই চলছে। আবার আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যিক হারে বিল পরিশোধ করতে হয়। তাও অব্যাহত আছে। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। আমরা শুধু দুবেলা খেয়ে বাঁচতে চাই।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, বেসরকারি স্কুল শিক্ষকরা কখনো সরকারের কাছে বেতন-ভাতার জন্য আবেদন করেননি। এ স্কুলগুলো যদি না থাকতো তাহলে সরকারকে আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রতি মাসে শিক্ষক বেতন বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো। সেদিক থেকে বলা চলে আমরা সরকারের বিরাট রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে দিয়েছি। বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এই করোনার কারণে আজ ভয়ানক আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তাই সরকারের কাছে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার মা। তিনি সবসময় শিক্ষকদের কথা চিন্তা করেন। আমরা শিক্ষকরা তার কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাণে সহায়তা প্রদানের দাবি রাখবো না। তিনি আমাদের সমস্যাটি বুঝবেন। তিনি বলেছেন, শর্ত দিয়ে কিছু আদায় করা যাবে না। আমরাও কোন শর্ত দেবো না। আমরা শুধু প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চাই আমাদের দুরবস্থার কথা। তাই সোমবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আমরা কোন পরবর্তী কর্মসূচি দেবো না, সরকার কোন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আমরা চাইনা। আমরা শিক্ষকরা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার আবেদন জানাচ্ছি', যোগ করেন তিনি।