করোনাকালে টিউশন ফি পরিশোধের চাপ, মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে টিউশন ফি পরিশোধের চাপ, মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ জরুরি

শেখ নজরুল ইসলাম |

করোনা মহামারির তাণ্ডবে অন্যান্য দেশের মতোই আমাদের অর্থনীতিও আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় অসংখ্য মানুষ তাদের চাকরি হারাচ্ছেন। যারা কোনোরকম টিকে আছেন তারা পুরোপুরি বেতন পাচ্ছেন না। কিন্তু স্কুল-কলেজগুলো অভিভাবকদের কাছে বকেয়া বেতন আদায়ের তাগাদা অব্যাহত রেখেছে।

করোনাসংকটের শুরুতেই শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি শিক্ষক ও অভিভাবক উভয়ের জন একটা চমৎকার পরামর্রশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, টিউশন ফিস আদায় ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দুইদিকই মানবিকভাবে দেখতে হবে। টিউশন ফিসের জন্য চাপ দিলে উপার্জন কমে যাওয়া অভিভাবকেরা বিপদে পড়বেন আবার যাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে তারাও যদি পরিশোধ না করেন তাহলে শিক্ষকরা বেতন পাবেন না। তবে, শিক্ষামন্ত্রীর এমন পরামর্শ আমলে নেয়ার উদহারণ কম। 

অভিভাবকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষের আয় কমে গেছে, অনেকে তাদের কাজ হারিয়েছেন। অনেক অভিভাবক দৈনিক শিক্ষার কাছে তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছেন। একইভাবে প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন না পাওয়া শিক্ষকরাও জানিয়েছেন কষ্টের কথা। 

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের আনোয়ার হোসেনের দুই মেয়ের একজন ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলে, অপরজন ওয়াইডাব্লিউএমসিএ স্কুলে পড়ছে। ওয়াইডাব্লিউএমসিএ স্কুল থেকে টিউশন ফি পরিশোধের জন্য গত কয়েকদিনের চার থেকে পাঁচ বার এসএমএস ও ফোন দেয়া হয়েছে। একই সাথে ভিকারুননিসা নুন স্কুল থেকে বেতনের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। বার বার এসএমএস দেয়া হচ্ছে তাকে।

আনোয়ার হোসেন জানান, এই অবস্থা অনেক অভিভাবকের। তিনি মনে করেন, এই অর্থনেতিক সংকটে নিজেদের জীবন ধারণ করা কষ্টকর, অন্যদিকে স্কুলগুলো পূর্বের মতো বেতন দাবি করছে। সরকারের উচিত এখনই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া।

ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, লকডাউনের মাসগুলোর মাসিক বেতন অনেকটা চাপে ফেলে তাদের কাছে থেকে আদায় করা হয়েছে। এখন জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতনের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। এতে তারা নিরুপায়। এ অবস্থায় সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে বলে মনে করেন তিনি।

সোনারগাওয়ের মদনপুরের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ইশরাক আলি বলেন, করোনায় ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। এটা সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল। তবে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় দেশের মানুষ লকডাউন ও হোম কোয়ারান্টাইনে থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু স্থবির ছিল। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবক আর্থিক সংকটে পড়েন। শুধু সরকারি কর্মচারীরা বেতনভাতা নিয়ে কোনও সংকটে পড়েননি। তবে বেশিরভাগ শিক্ষালয় ঐ সময়ের বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় করায় অভিভাবকরা আছেন মারাত্মক সমস্যায়। তাই তার বিশেষ আবেদন সরকার যাতে বিষয়টি জোর বিবেচনা করেন।

তিনি বলেন, সরকার বিশেষ প্রণোদনা দিলে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষাব্যবস্থা উপকৃত হবে।

অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, মহামারিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। একই সাথে সরকার এগিয়ে আসলে এই অবস্থা থেকে একটি ভালো পথ খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তারা। 

মদনপুরের জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তার ছেলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে পড়ে। লকডাউন শুরুর পর একবার বেতন দিয়েছেন। এখন আবার বেতনের জন্য বার বার এসএমএস দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে কোনো পরীক্ষা না হলেও পরীক্ষার জন্য তাকে ফি দিতে হয়েছে। তিনি জানান, তার পরিবারের যিনি আয় করছেন তার বেতন কাটা হচ্ছে। এ অবস্থায় কীভাবে তিনি স্কুলের পুরো বেতন দেবেন। একই দেশে দু’ নিয়ম না হয়ে এক ধরনের নিয়ম থাকা উচিত। স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে যদি বেতন অনেক কমে যায় তখন সন্তানদের স্কুলের ফিস কেন পুরোপুরি দিতে হবে? এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ঢাকার বেগুনবাড়ীর প্রিয়া ও ইমনের মা জানান, তাদের দুই ছেলে মেয়ে ঢাকাস্থ লন্ডন স্কুলে পড়াশোনা করছে। লকডাউন শুরুর পর থেকে স্কুল থেকে প্রতিনিয়ত এসএমএস ও ফোন করা হচ্ছে বেতনের জন্য। নিয়মিতভাবে মাসিক বেতন তারা নিলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এদিকে অনলাইনে মুখে মুখে পরীক্ষা নেয়ার জন্য তারা ফিসের জন্য এসএসএম ও ফোনে তাগাদা দিচ্ছে।

অনেক জানিয়েছেন, এই অবস্থা কবে ঠিক হবে তা কেউ ঠিক করে বলতে পারছেন না। তাই তারা চিন্তা করেছেন যে, তারা এবছর আর বেতন দেবেন না। প্রয়োজনে তারা পরের বছর অন্য স্কুলে ভর্তি করাবেন।

অনেকে আবার বলছেন, এতে করে শিক্ষার্থী অভিভাবক ও স্কুল সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঝরে পড়ার হার বাড়বে। তাই সরকারের উচিত হবে এ অবস্থায় স্কুলগুলোর সাথে কথা বলে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত স্কুলগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া, না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে মারাত্মক অনিয়ম শুরু হতে পারে। তাই নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। 

লেখক: শেখ নজরুল ইসলাম, উপ-সম্পাদক, দৈনিক শিক্ষাডটকম। 

ইমেইল: [email protected]

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004601001739502