করোনাকালে দৃশ্যমান ডিজিটাল বাংলাদেশ - দৈনিকশিক্ষা

করোনাকালে দৃশ্যমান ডিজিটাল বাংলাদেশ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ছোবলের আগে ‘ওয়েবিনার’ শব্দটার সঙ্গে পরিচয় ছিল খুব কম মানুষেরই। তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে যারা ভাল ধারণা রাখেন এমন ব্যক্তিদের ছাড়া অধিকাংশই পরিচিত ছিলেন না ‘জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিম, গুগল ক্লাসরুম, সিসকোর ওয়েবেক্স, মেসেঞ্জার রুম, জিটসির মতো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে। জীবনধারা সচল রাখার বাস্তবতায় পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অপরিচিত থাকা বহু শব্দ। ছোট্ট শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের কাছেই দৃশ্যমান এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। তবে কেবল এই শব্দই নয়, করোনাকালে বাস্তবতার নিরিখে সাধারণ মানুষের কাছেও আজ জনপ্রিয় বাংলা-ইংরেজী মিশেলের দুর্বোধ্য বহু শব্দ। বুধবার (১২ আগস্ট) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘করোনার কারণে আজ দ্রুততার সঙ্গেই তথ্যপ্রযুক্তির বহু বিষয় সাধারণ মানুষের কাছেও অতিপরিচিত হয়ে উঠেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এসব বিষয়ে সুফলও পাচ্ছে প্রতিটি মানুষ। তবে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে হেঁটে চলেছি এটা তারই একটি সফলতার দিক। হয়তো এইগুলো জানাই ডিজিটাল বাংলাদেশ নয় তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অনেকদূর এগিয়েছি বলেই আজ তথ্যপ্রযুক্তিসহ বহু দুর্বোধ্য জটিল শব্দ ও তার প্রয়োগ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছেও সহজ হয়ে উঠেছে।’

বিশেষজ্ঞরা একই সঙ্গে বলেছেন, করোনা বিপর্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সুফল হাতেনাতে পাচ্ছেন দেশের জনগণ। এই দুর্যোগে যখন তছনছ প্রায় সকল খাত। যখন বিপর্যন্ত স্বাস্থ্য খাত, স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক কর্মকা-, তখন বাঁচার পথ দেখাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। অসাধারণ ভূমিকা রাখছে আইসিটি খাত। মার্চ মাসে করোনা শনাক্তের পর অফিস আদালত থেকে সকল কর্মকা- যখন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছিল তখনও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সচল রাখা সম্ভব হয়েছে জরুরী সেবাসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা-। অনলাইনেই চলছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। ভার্চুয়াল আদালতে চলছে বিচার কার্যক্রম। স্বাস্থ্যসেবা থেকে জরুরী খাদ্য সরবরাহসহ সবই মিলছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায়।

সঙ্কটে রক্ষার পথ তথ্যপ্রযুক্তি ॥ কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈশ্বিক পরিবর্তন ত্বরান্বিত করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারীকালে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে ৫০ শতাংশ, ই-কমার্সে কেনাকাটা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। দুর্যোগ, মহামারীরকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখার এটি একটি প্রকৃষ্টতম উদাহরণ।

রোবট, মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডাটা এ্যানালাইটিক্সের মতো অত্য্যধুনিক প্রযুক্তিই হবে আগামী দিনের অর্থনীতিসহ জীবনযাত্রার চালিকাশক্তি। এজন্য সবারই এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা থাকতে হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য সন্তান ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ ভাইয়ের নিরলস প্রচেষ্টা ও নির্দেশনায় এই অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি খুব সহজে স্বাভাবিক হচ্ছে না। অতএব আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকতে হবে, এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করেই কিন্তু আমাদের শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, বিনোদন চালাতে হবে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে দীর্ঘ সময় চলেছে সরকারী-বেসরকারী অফিস। প্রশাসনযন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কাজে লাগানো হহয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। ই-নথির মাধ্যমে ঘরে বসে কাজ করেন কর্মকর্তারা। ভার্চুয়াল সব প্ল্যাটফর্মে হহয় সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন বৈঠক ও সিদ্ধান্ত। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কাজ করে যাচ্ছেন নিরসলভাবে। সরকারের কাজের বাইরেও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলিত হচ্ছেন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। নিয়মিত দিচ্ছেন দিক নির্দেশনা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান পথে এতদূর এগিয়ে না গেলে কারোনাকালে অফিস কার্যক্রম সচল রাখা কোনভাবেই সম্ভব হতো না বলেই মনে করেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এক সময় দেখা যেত একটি ভিডিও কনফারেন্স করার জন্য অনেক কাঠখড় পোতাতে হতো। সহসা সকলেই এই বিষয়টি আশ্বস্ত করত না পা করতে পারতও না। ই-নথির বিষয়েও দেখা যেত একই অবস্থা। তবে করোনার এই দুর্যোগের তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সহসাই সকলে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সকলের কাছে পরিচিত শব্দ হয়ে এসেছে ভার্চুয়াল সব প্ল্যাটফর্ম।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশল মোঃ মোজাম্মেল হক তার কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলছিলেন, এটাই বাস্তব যে আজ যদি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের অবকাঠামো নিশ্চিত করতে না পারতাম তাহলে এই করোনাকালে মহাদুর্যোগে পড়তে হতো। তাই এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় করোনার মধ্যে আমরা জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিম, গুগল ক্লাসরুম, সিসকোর ওয়েবেক্স, মেসেঞ্জার রুম, জিটসির মতো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যেমন দ্রুত পরিচিত হয়ে উঠেছি তেমনি এই প্ল্যাটফর্মের সহায়তায় আমরা দেশকে বড় বিপদের সময়েও রক্ষা করতে পারছি। আগে অফিসগুলোতে একটি ভিডিও কনফারেন্স করার জন্য অনেক কাঠখড় পোতাতে হতো।

অথচ এখন এটা নিয়মিত বিষয় হয়ে গেছে। যেন এটা সাধারণ একটি বিষয় হয়ে এসেছে সকলের কাছে। আমরা যেমন করোনার মহাদুর্যোগের সময়েও সরকার ও বেসরকারী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্স ও পারমিটের কাজ করেছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র ও অন্যান্য কাজের অংশ হিসেবে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সে আমরা মিলিত হচ্ছি রাাশিয়াসহ বিশে^র অন্য দেশগুলোতে। এই সফলতাটা আসলে ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণেই। তাই আমি মনে করি, করোনার মধ্যে আমাদের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

গত ১১ মে থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ৩০ কার্যদিবসে সারাদেশে অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে ৮৪ হাজার ৬৫৭টি জামিন-দরখাস্ত নিষ্পত্তি এবং ৪৪ হাজার ৮০২ জন আসামির জামিন মঞ্জুর হয়েছে। জামিন প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে ৫৭১টি শিশুও। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রায় পাঁঁচ কোটি শিক্ষার্থী। ই-কমার্সে কর্মসংস্থান হয়েছে অসংখ্য তরুণ-তরুণীর। করোনাকালেও কয়েক লাখ তরুণ-তরুণী শুধু ভার্চুয়াল জগতকে কাজে লাগিয়ে ভিডিও তৈরি করে আয় করছেন।

আলোচনার কেন্দ্রে নতুন নতুন শব্দ ॥ করোনাকালে জীবন রক্ষা ও জীবন ধারাকে সচল করতে গিয়েই মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে বহু নতুন নতুন শব্দ। আবার কিছু শব্দ ও বিষয় আছে যা আগে সাধারণ মানুষের কাছে ছিল অপরিচিত। তবে এখন সকলের মুখে মুখে এসব শব্দ। করোনাকালে দেশে ভিডিও কলিং সফটওয়্যারের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। করোনা সম্পর্কিত বাংলা-ইংরেজী মিশিয়ে মেডিক্যাল সায়েন্সের কিছু দুর্বোধ্য শব্দ সাধারণ মানুষেরও সামনে এখন খুবই আলোচিত। যেমন কোভিড-১৯, লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, শাটডাউন, রেড জোন, ইয়েলো জোন, গ্রিন জোন, কোয়ারেন্টাইন, সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সেল্ফ আইসোলেশন, ফিজিক্যাল/ সোসাল ডিস্ট্যান্সিং বা শারীরিক/ সামাজিক দূরত্ব, পিপিই, মাস্ক/ সাধারণ মাস্ক/এন৯৫ মাস্ক, টেস্ট, পিসিআর মেশিন, র‌্যাপিড টেস্ট কিট, টেস্ট কিট, ভেন্টিলেশন, অক্সিজেন সাপ্লাই, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই, আইসিইউ, স্যাম্পল কালেকশন/ নমুনা সংগ্রহ, হট লাইন, ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল, নন-কোভিড হাসপাতাল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, থারমাল স্ক্যানিং, এক মিটার বা তিন ফুট দূরে থাকাসহ বহু শব্দ।

এসব শব্দ এখন নিয়মিত পৃথিবীব্যাপীই নিয়মিত শোনা যায়। দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবাই যে এসব দুর্বোধ্য শব্দের মানে বোঝে তা কিন্তু নয়। যারা শিক্ষিত জনগোষ্ঠিীর অংশ তারাও এসব মেডিক্যাল সায়েন্সের কারিগরি শব্দগুলোর মানে তাৎক্ষণিক বুঝে উঠতে পারে না। তাহলে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ কেমন করে এসব শব্দের মানে বুঝবে? অথছ করোনাকালে এসব প্রত্যেকটি শব্দের মানে সবারাই বুঝতে পারাটা খুবই জরুরী।

জনপ্রিয় ভার্চুয়াল সব প্ল্যাটফর্মের নাম ॥ জীবনধারা সচল করার বাস্তবতায় এই শব্দের বাইরে এখন সামনে চলে এসেছে তথ্যপ্রযুক্তির নানা শব্দ ও তার ব্যবহার। যেমন এতদিন ‘ওয়েবিনার’ শব্দটার সঙ্গে পরিচয় দেশের খুব কম মানুষেরই। এই শব্দের অর্থ কিংবা এর প্রয়োগটাই বা কি তা জানা ছিল না সাধারণ মানুষের। অথচ এখন ওয়েবিনার হয়ে উঠেছে জীবন ধারা অফিস আদালতের কাজের অনুষঙ্গ।

ওয়েবনার হচ্ছে পারস্পরিক সক্রিয়তায় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এ পরিচালিত সভা বা সেমিনার। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সভা বা উপস্থাপনা যেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণ করা য়ায় এবং সরাসরি প্রশ্ন উত্তরের ব্যবস্থা থাকে এই মাধ্যমটিতে। এর মানে হচ্ছে এটি হচ্ছে একটি ওয়েব সেমিনার। বা অনলাইন ভিডিও দেখে আলোচনা, যা ব্যবহারকারীরা তাদের কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে নিবন্ধন করে অংশগ্রহণ করতে পারে। ওয়েবিনারের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি ইন্টারেক্টিভ। ওয়েবিনারের উপস্থাপনায় অংশ নেয়া অংশীদারদের রিয়েল-টাইমে তথ্য সরবরাহ, গ্রহণ এবং আলোচনার ক্ষমতা রাখে। সর্বাধিক জনপ্রিয় ওয়েবিনার সফ্টওয়্যারগুলোর মধ্যে আছে জুম্, মাইক্রোসফট টিম এবং স্কাইপ। করোনার শুরুর আগে এটি পরিচিত কোন শব্দ না হলেও এই মুহূর্তে তথ্যপ্রযুক্তির সবচয়ে জনপ্রিয় শব্দের একটি হচ্ছে ‘ওয়েবিনার’। করোনাকালে জীবনধারাকে সচল করার অংশ হিসেবে দেশে একক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন হিসেবে সবচেয়ে বেশি ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ।

‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ শিরোনামে আওয়ামী লীগের বিশেষ এ ধারাবাহিত ওয়েবিনার ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। এর বাইরেও ধারাবাহিকভাবে চলছে দলটির আয়োজিত ওয়েবিনার। এএলবিডি ওয়েব টিম ওয়েবিনারের পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

করোনাভাইরাসের সঙ্কটকালে সবকিছু সচল রাখতে বিদেশের মতো দেশেও চালু হয় ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা ঘরে বসে কাজ করার নিয়ম। কিন্তু ঘরে বসে কাজ করা এবং তা ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা মনিটর করা, কর্মীরা সময়মতো কাজ শুরু করল কিনা ইত্যাদি যথাযথভাবে দেখার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ওয়ান টু ওয়ান যোগাযোগ খুব বেশি কার্যকর হয় না বলে প্রোগ্রামার বা প্রযুক্তিকর্মীরা খুঁজে বের করেছেন জনপ্রিয় সব ভিডিও কলিং সফটওয়্যার।

এই সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে ‘জুম’। এটি এখন অতিপরিচিত শব্দ। দেশে এই করোনা সঙ্কটে জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসে জুম ভিডিও কমিউনিকেশনস ইনক’র জুম ক্লাউড মিটিংস। এটির রয়েছে মিটিংস, ভিডিও ওয়েবনিয়ার, কনফারেন্স রুম, ফোন সিস্টেম ও চ্যাট। গার্টনার, ট্রাস্ট রেডিয়াস ও জি ক্রাউন এরই মধ্যে জুমকে এক নম্বর স্থান দিয়েছে (গ্রাহক রিভিউয়ের ভিত্তিতে)।

বাংলাদেশেও এটি শীর্ষে। মেসেঞ্জার গ্রুপ ভিডিও চ্যাটে আট জনকে যুক্ত করার সুযোগ দিয়েছে, হোয়াটসএ্যাপ আগে ছয় জনকে দিলেও বর্তমানে আট জনকে গ্রুপ ভিডিও কল করতে দিচ্ছে। ফেসবুক নিয়ে আসছে মেসেঞ্জার রুম। এতে একসঙ্গে ৫০ জন ভিডিও কলে যুক্ত হতে পারবেন। জুমের বাজার মূল্য এই সময়ে অনেক বেড়েছে। এটা জুমের জনপ্রিয়তার কারণেই হয়েছে।

ফেসবুক ঘোষণা দিয়েছে, খুব শীঘ্রই তারা মেসেঞ্জার রুম নিয়ে আসছে। ভারতের জিও সবার জন্য চালু করতে যাচ্ছে জিও মিট নামের এ্যাপ। দেশে হাউস পার্টি নামের একটি ভিডিও কলিং সফটওয়্যার বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এটিতে আট জন যুক্ত হওয়া যায়। সাধারণত স্টার্টআপ, তরুণ শ্রেণী, মিলেনিয়ামসদের (২০০০ সালের পরে জন্ম যাদের) পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সফটওয়্যারটি।

‘গুগল মিট’ এই মুহূর্তে কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত শব্দ। এই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে। বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে এক সঙ্গে যুক্ত করার সুযোগের কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। দেশের প্রথম জিডিটাল ইউনিভার্সিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ গুগল মিট প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে সবাল আগেই অনলাইন ক্লাস পরিচালনায় সফলতা পেয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে হাতেগোনা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস করছে সেখানে এই প্রতিষ্ঠান তাদের প্রায় সকল শিক্ষার্থীকে এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে এসেছে সফলভাবে।

প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলছিলেন, আপনি যদি সব সময় প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের সেবা নিয়ে আসক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য ভিডিও কলিংয়ের সেরা অপশন হলো গুগল মিট। এটি মূলত গুগল হ্যাংআউটের উন্নত সংস্করণ। এতদিন পর্যন্ত গুগল মিটের সেবা টাকা দিয়ে কিনতে হতো। কিন্তু ভিডিও কলের প্রচুর চাহিদার কথা খেয়াল করে গুগল সেবাটি ফ্রি করে দিয়েছে। গুগল মিটে সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তিকে যোগ করে ভিডিও কল করা যায়।

জুমের মতো গুগল মিটে টাইম লিমিট নেই। এছাড়া স্ক্রিন শেয়ারিংয়ের সেবাও আছে। চাইলে কি-বোর্ড চাপার খটখট আওয়াজ ফিল্টারিং করার ব্যবস্থাও রেখেছে গুগল। সব মিলিয়ে ভিডিও কলিংয়ের বাজারের এক নম্বর এ্যাপ হওয়ার সমস্ত যোগ্যতাই আছে গুগল মিটের। আর এটি ফোন বা কম্পিউটার; দুই ধরনের স্ক্রিনেই ব্যবহার করা যায়।

ভিডিও কলিংয়ের এই সময়কে উপভোগ করতে ফেসবুক তাদের মেসেজিং সেবা মেসেঞ্জারে যোগ করেছে নতুন ফিচার ‘মেসেঞ্জার রুম’। করোনাকালে এটি হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় শব্দের একটি। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ ৫০ জনকে যোগ করে ভিডিও কল করতে পারেন। সম্প্রতি ফেসবুক জানিয়েছে, মেসেঞ্জারে ভিডিও কলের পরিমাণ অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ফলে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে মেসেঞ্জারে রুমস নামের ফিচারটি যোগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোন ব্যক্তির যদি মেসেঞ্জার এ্যাকাউন্ট নাও থাকে, তারপরও কলের নির্দিষ্ট ইউআরএল লিংকে ক্লিক করে সেবাটি পাচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আরও বেশি।

আরেক পরিচিত প্ল্যাটফর্ম ও শব্দ হচ্ছে ‘মাইক্রোসফট টিম’। ‘মাইক্রোসফট টিম’ প্রোগ্রামে শব্দ সম্পাদনার সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে ভিডিও চ্যাটের শব্দ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদনা হচ্ছে। অফিসিয়াল মিটিং, চ্যাট, কনফারেন্স, কল্যাবরেশন, কলিং সেবার জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ‘মাইক্রোসফট টিম’ সফটওয়্যার। নতুন একটি ফিচার যুক্ত হওয়ার ফলে মিটিং চলাকালে এখন আর চারপাশের অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা নয়েজ অপরপ্রান্তে শোনা যায় না। করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই ঘরে বসে অফিসের কাজ সারছেন। এ অবস্থায় মিটিংয়ের কাজে ‘মাইক্রোসফট টিম’-এর ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে। তাই এ ফিচারটিকে খুবই সময়োপযোগী বলে মনে করা হচ্ছে।

শ্রেণিকক্ষের সব কাজ সম্ভব এখন ‘গুগল ক্লাস রুমে’। কাগজের ব্যবহার উঠিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরো ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সার্চ জায়ান্ট গুগল গত বছর চালু করেছিল ‘গুগল ক্লাস রুম’ নামের একটি এ্যাপ। করোনাকালে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। বাংলাদেশেও শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের কাছে হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ডেস্কটপের জন্য তৈরি হলেও এ মুহূর্তে এ্যাপটি মোবাইলে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। এ্যাপটিতে যুক্ত করা হয়েছে আরও কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়। ফলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে খুব সহজেই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

শিক্ষার্থীরা নিজেদের এ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে সহজেই তা শিক্ষকদের কাছে পাঠাতে পারছে। অপরদিকে শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেয়া থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের কাজের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের কাজের গতি প্রবাহ থেকে কাগজের ব্যবহার বন্ধ করতে সক্ষম হবে এ্যাপটি এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ‘জিটসি’ আরেক জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। এই শব্দের সঙ্গেও করোনাকালে পরিচিত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। বলা হচ্ছে, আউটসোর্স হিসেবে পাওয়া ‘জিটসি’ ভিডিও কনফারেন্স সফটওয়্যারটি বিকল্প হতে পারে। কারণ এতে সরাসরি কল করা যায়। মানে এটি ব্যবহার করতে আপনাকে কোন ধরনের লগইন করতে হয় না, কোন সফটওয়্যারও ডাউনলোড করতে হয় না। জিটসিতে মিটিং এ্যারেঞ্জ করা ও কল করাও সহজ।

‘স্কাইপ’ আগে থেকে অনেকের কাছে পরিচিত হলেও করোনাকালে এর ব্যবহার বেড়েছে। ফলে মানুষের কাছে এর পরিচিতও বেড়েছে। সর্বাধিক পরিচিত ভিডিও কনফারেন্স সরঞ্জামের মধ্যে স্কাইপ অন্যতম। ‘গুগল হ্যাংআউট’ আরেকটি শব্দ। হ্যাংআউট গুগল এ্যাকাউন্টের সঙ্গে আসে। ভিডিও কনফারেন্সিং স্পেসের জন্য গুগলের এ্যাকাউন্টগুলো বিবেচনা করার মতো। এতে খুব পরিষ্কার একটি ইন্টারফেস রয়েছে এবং এটি ক্যালেন্ডার ও গুগল ডক্সের মতো অন্যান্য গুগল পণ্যের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়। একইভাবে জীবনধারাকে সচল করার সঙ্গে সঙ্গে সকলের কাছে পরিচিত শব্দ ও বিষয় হয়ে সামনে চলে এসেছে সিসকোর ওয়েবেক্সসহ আরও বেশ কিছু ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম।

ডিজিটাইলাইজের সুফল ॥ প্রযুুক্তির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সরকারী কর্মকমিশনে (পিএসসি) নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে তার অনেকখানি অবদান রাখেন সাবেক সদস্য ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খান। তিনি বলছিলেন, করোনার কারনে দ্রুততার সঙ্গেই তথ্যপ্রযুক্তির বহু বিষয় আজ সাধারণ মানুষের কাছে অতি পরিচিত হয়ে উঠেছে।

তথ্যপ্রযুক্তির এসব বিষয়ে সুফলও পাচ্ছে প্রতিটি মানুষ। তবে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে হেঁটে চলেছি এটা তারই একটি দিক। তিনি আরও বলছিলেন, করোনা বিপর্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সুফল হাতেনাতে পাচ্ছে দেশের জনগণ। কারন এই দুর্যোগে বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো যখন তছনছ প্রায় সকল থাত। তখন বাঁচার পথ দেখাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। ভাল ভূমিকা রাখছে আইসিটি খাত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলছিলেন, এখন বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো আমরাও সঙ্কটের মধ্যে আছি। এটা এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনি সামনাসামনি বসে স্বাভাবিক সময়ের মতো কাজ করতে পারবেন না। এমন কথা মাথায় রেখেই সকলে এখন জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিম, সিসকোর ওয়েবেক্সের মতো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের সহায়তা নিচ্ছে।

বাস্তবতা হচ্ছে এইগুলো জানাই ডিজিটাল বাংলাদেশ নয় তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশে পথে অনেকদূর দেশ এগিয়েছে বলেই আজ তথ্যপ্রযুক্তিসহ বহু দুর্বোধ্য জটিল শব্দ ও তার প্রয়োগ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছেও সহজ হয়ে উঠেছে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে নিতে আসতে সক্ষম হয়েছে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয় সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি বেনজীর আহমেদ বলছিলেন, দেশ ডিজিটালাইজ হওয়ার সত্যিকারের সুফল এখন এই মহা দুর্যোগকালে পাচ্ছি। আমরা যেমন আমাদের প্রতিষ্ঠানে এখন ৯০ শতাংশের ওপর শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত করতে সক্ষম হয়েছি। যা স্বাভাবিক শিক্ষাদানের সময়ের থেকেও বেশি। শুরুতে কিন্তু কম ছিল। এখন সকলের কাছে এসব বিষয় অত্যন্ত সহজ ও পরিচিত হয়ে উঠেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে একটি সেল গঠন করেছি। যার মাধ্যমে সকল বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ে আমরা আইসিটি ফ্যাসিলিটিজ সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করছি। কোন সহায়তা দরকার হলে করছি। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও এটা অবগত। আজ যদি দেশ ডিজিটালাইজ না হতো তাহলে আমাদের মহাবিপদে পড়তে হতো। যা কোনভাবেই সামাল দিয়ে দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হতো না।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003593921661377