করোনার প্রভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘশ্বাস - দৈনিকশিক্ষা

করোনার প্রভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘশ্বাস

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুর দিকে যে উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করে জেএসসি ও মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করেই উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল নির্ধারণ করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিকেরও বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। অনার্স বা মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সবমিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রায় করুন দশা। শিক্ষার্থীরা বুঝে উঠতে পারছে না সামনের দিনগুলো তাদের জন্য সুখকর কি না। প্রতিনিয়ত আশঙ্কা আর ভয়ে থমকে আছে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি। বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অটোপ্রমোশন দিলেও সবচেয়ে উদ্বিগ্নের বিষয় যেটি সেটি হচ্ছে—এ বছর ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে তার কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। অটোপ্রমোশনের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ কাটালেও ভর্তি পরীক্ষা কিন্তু এমনভাবে দায় এড়িয়ে যাওয়ার মতো পরীক্ষা নয় কারণ এই পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত্।

মানুষ স্বপ্নবাজ। প্রত্যেকটি মানুষই তার নিজস্ব স্বপ্ন লালন করে বেঁচে থাকে। কারণ আশা বা স্বপ্নহীন জীবন মরুভূমির ন্যায়। ছেলেবেলা থেকে প্রতিটি শিশু পারিবারিকভাবে বা নিজের মাধ্যমে স্বপ্ন দেখে যে, সে বড় হয়ে কি হতে চায়। সেজন্য সবাই না হলেও অনেকেই সংগ্রাম করে শিশুশ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিশ্রম করে নিজেকে ভর্তিযুদ্ধে নামার জন্য প্রস্তুত করে। কারণ প্রকৃত মেধার যাচাই এই পর্যায়টিতেই হয়ে থাকে। বিভিন্ন খবরের কাগজ ও অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আভাস পাওয়া যাচ্ছে অনলাইন মাধ্যমে এ বছর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে, দেশে এখনো শতভাগ নেটওয়ার্কিং ও ডিভাইস নেই সেদেশে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে হতে পারে। প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। যেখানে এত সতর্কতা অবলম্বন করার পরও এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে সেখানে নিরপেক্ষভাবে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া কীভাবে সম্ভব।

পরীক্ষা যেভাবেই নেওয়া হোক এখন পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ও মানসম্মত সিদ্ধান্ত স্বল্প সময়ে নেওয়া খুবই জরুরি। এতদিন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষা কীভাবে হবে সেটা নিয়ে উত্কণ্ঠা ছিল যা এখন ভর্তি পরীক্ষাতে রূপান্তরিত হয়েছে। যেখানে পরীক্ষা দিয়ে এতদিন ফলাফল পেয়ে ভর্তি পরীক্ষার আশায় বিভিন্ন কোচিংয়ে ক্লাস করার কথা সেখানে বাড়িতে বসে সিদ্ধান্তের অভাবে হতাশার প্রহর গুনতে হচ্ছে তাদের। কীভাবে পরীক্ষা হবে এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেবে কিছুই বুঝতে পারছে না তারা। এমন অনিয়মের কারণে এ বছর অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখে কিন্তু এই পরিস্থিতিতে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি না বোঝার কারণে ভর্তি হতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ গ্রামীণ অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখনো প্রযুক্তির ব্যবহার করতে জানে না।

ইউনেস্কো রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী যার মধ্যে ১৭.৩৩ মিলিয়ন প্রাথমিক, ১৫.৮৬ মিলিয়ন মাধ্যমিক আর ৩.১৫ মিলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে শিক্ষার্থী। করোনার দীর্ঘ বন্ধে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেঁচে থাকা ও নতুন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আগামী দিনের দুশ্চিন্তায় মানসিক চাপে সুস্থ পৃথিবী দেখার আশায় প্রহর গুনছে। এছাড়া সেশনজট সম্মান শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা যাদের এতদিনে একাডেমিক কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার কথা তারা সার্টিফিকেটের অভাবে চাকরির আবেদন করতে পারছে না। চাকরির বয়সসীমার চিন্তাতেও তাদের নাজেহাল অবস্থা। একদিকে জীবনাশঙ্কা অন্যদিকে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। কারণ টিউশনি করে যারা নিজেদের খরচ চালাতো করোনায় তাদের সেইদিকটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে নানা কারণে প্রতিদিন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের জীবনের বাতি প্রায় নিভে গেছে বা যাচ্ছে। আগামী দিনের ভবিষ্যত্ ও সার্বিকদিক বিবেচনা করে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যাতে সময়ের বেড়াজালে পড়ে কোনো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত্ অন্ধকারাচ্ছন্ন না হয়। যে পদ্ধতি প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর বোধগম্য, সহজলভ্য ও শিক্ষার মান বজায় থাকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তেরই অপেক্ষায় রয়েছে আজকের দিনের শিক্ষার্থীরা ও আগামী দিনের উজ্জ্বল প্রজন্ম।

লেখক : ফারহানা নওশিন তিতলী, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইসলামী

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044000148773193