দিনে দিনে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন জাতীয় সংসদের মন্ত্রী এমপিরা। গত শনিবার প্রথিতযশা ক্রিকেটার, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা করোনায় আক্রান্ত হবার পরে এ পর্যন্ত সংসদে ৫ জন মন্ত্রী ও ১০ জন এমপি করোনায় আক্রান্ত হলেন। আবার সংসদে বাজেট অধিবেশনে করোনা সংক্রমণ দুর করতে সকল কর্মকর্তা ও কর্মীদের বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করলে আরো শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মীর দেহে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে বলে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে।
এদের অধিকাংশের কোন করোনা সিনটম না থাকলেও টেস্টে পজেটিভ এসেছে। যেমন গণসংযোগ-১ এর পরিচালম মোহম্মদ তারিক মাহম্মুদের কোন সিনটম ছাড়াই টেস্টে করোনা পজেটিভ দেখা গেছে। সংসদ সচিবালয়ের একাধিক উপসচিব, যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাও করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়ায় পরে হোম আইসোলেশনে গেছেন। এর আগে গত এপ্রিল থেকে সংসদ সচিবালয়ের দেড় শতাধিক নিরাপত্তা কর্মী করোনা পজেটিভ ধরা পড়লে তাদের ডিউটি থেকে বাদ দিয়ে সংসদ সচিবালয়ের মধ্যে আইসোলেশনে রাখা হয়। যাদের মধ্যে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসার নিরাপত্তা রক্ষীরাও ছিলেন।
এদিকে শনিবার মাশরাফি বিন মর্তুজার করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট আসে। গত ২-৩ দিন আগে থেকেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। সেই সঙ্গে ছিল শরীর ব্যথা। পরে করোনা পরীক্ষার জন্য গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) নমুনা দেন তিনি। শুক্রবার মাশরাফির করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বর্তমানে ঢাকার বাসায় আইসোলেশনে আছেন তিনি। তার আগের দিন গত শুক্রবার সাবেক মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমটির দায়িত্ব পালন করছেন। ফরদিপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসনের বাসার স্টাফ ও অন্যান্যদের করোনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে আগেই জানা গেছে। তিনিও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তাছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদে মন্ত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী গত রবিবার মারাও যান। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম করোনা আক্রান্তের পর ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যান। যদিও মুত্যর আগে তিনি করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে মারা যান। আবার পরিবারের সদস্যদের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সংসদে না আসতে বলা হয়েছে। তারা সপরিবারে আইসোলেশনে থেকে পর্যবেক্ষণে আছেন।
এদিকে সাবেক হুইপ নওগাঁ-২ আসনের সাংসদ শহিদুজ্জামান সরকার, রেল মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন সপরিবারে, জামালপুর-২ আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের এমপি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সপরিবারে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল, শ্রীমঙ্গলের এমপি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খান করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এরমধ্যে বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসি ও মোকাব্বির খান করোনা পজেটিভ তা না জানায় সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে যোগ দেওয়ায় সংসদে করোনা সংক্রমন ভীতি আরো কিছুটা হলেও বেড়ে গেছে। কারণ তারা দুজনে সংসদের কার্যক্রমে অংশ নেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিদের সংস্পর্শে আসেন।
এদিকে বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলাল উদ্দীন, এমপি শেখ তন্ময়, যশোর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদ, রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী ও টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম টিটুসহ প্রায় ৪০ জন মন্ত্রী-এমপিকে সংসদ অধিবেশনে না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাদের পরিবার, গাড়ির চালক বা ঘনিষ্ঠ কেউ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এবং স্বাস্থ্যগত কারণে সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে না আসার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিসাধীন। আবার গতকাল কক্সবাজারের সাবেক এমপি বোদীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারী জহাসপাতালে চিকিৎসাধীন বরে জানা গেছে। এছাড়া জাতীয় সংসদের প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন। বিশেষ করে গণসংযোগের ২টি বিভাগের অধিকাংশ সদস্য নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন বলে জানা গেছে।
এ দিকে সংসদের মুলতবি বাজেট অধিবেশন বসছে আগামী ২৩ জুন সকাল ১১ টায়। করোনা সংক্রমনের কালে কিভাবে সংসদ পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় সংসদের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বহু কর্মকর্তাও আক্রান্ত। তাই আমরা স্বল্প পরিসরে কোরাম সংকট কাটিয়ে ৭০-৭৫ জন এমপিকে নিয়ে বাজেট অধিবেশন রোস্টারভিত্তিতে চালাচ্ছি। তাছাড়া বিভিন্ন বিভাগের খুব প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংসদে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর যারা সংসদে ডিউটি করছেন তাদের সবার করোনা টেস্ট করেই তবে ডিউটিতে রাখা হয়েছে। বাকিদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট পাশ করতে হবে। কোন উপায় নেই। সেকারণে স্বল্প পরিসরে মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে ৩০ জুন বাজেটি পাশ করা হবে। যদিও এ অধিবেশনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮-৯ জুলাই অধিবেশন সমাপ্তি করার কথা ছিল, তবে করোনার এ পরিস্থিতিতে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করা হবে, সম্ভবত বাজেট পাশের পরে ৩০ জুন সংসদ সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে বলে জানান স্পিকার। করোনার কারণে এ বাজেট অধিবেশনটি সেক্ষেত্রে স্বল্পদিন ও কমঘণ্টা আলোচনায় পাশের এক অনন্য নজির তৈরি করবে।