করোনার হটস্পট ঢাকায় প্রয়োজনে কারফিউ’র পরামর্শ - দৈনিকশিক্ষা

করোনার হটস্পট ঢাকায় প্রয়োজনে কারফিউ’র পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের করোনা শনাক্ত রোগীর অর্ধেকেরও বেশি ঢাকার। বেশি মৃত্যুও এখানে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। কিন্তু কেন ঢাকায় করোনার এতো প্রকোপ? মোকাবিলায় কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে কারফিউ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)- এর উপদেষ্টা ড.  মোশতাক হোসেন ঢাকা হটস্পটে পরিণত হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের  অধিকাংশ ছিলেন এখানেই। গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে অনেকে ঢাকায় আসছেন।

আবার যারা গ্রামে থাকতেন তারা সামাজিক নিগ্রহের ভয়ে ঢাকায় এসেছেন। এসব কারণে ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রথম দিকে ঢাকার যে ক্লাস্টারগুলো যেটা আইইডিসিআর চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লকডাউন করে দিতো। সেটা কিন্তু এখন ঠিক সেভাবে আর হচ্ছে না। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছেন। ফলে ঢাকা শহরের বিভিন্ন মহল্লার যে ম্যাপ বা চিত্রটা ছিল আইইডিসিআরের কাছে সেটা কিন্তু এখন ওভাবে হচ্ছে না। তথ্যগুলো যদি সুবিন্যস্ত করা হয় তাহলে কিন্তু এখনো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ঘনবসতি এলাকাকে রাস্তা দিয়ে চিহ্নিত করা এবং সেই এলাকার মধ্যে ছোট ছোট ভাগ করতে হবে। সেখানকার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। টোলারবাগের মডেলে যদি আমরা ঢাকা শহরের করোনা মোকাবিলার কাজে নামি এবং মহামারি নিয়ন্ত্রণে আইইডিসিআরে যদি দায়িত্বটা ফিরিয়ে আনা হয় তাহলে আমার মনে হয় ঢাকা শহরকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরসহ সিটি করপোরেশন এলাকায় কিন্তু ওভাবে স্বাস্থ্য কাঠামো নেই। গ্রামে যেমন সিভিল সার্জন, কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মী ভাগ করা আছে। শহরে কিন্তু সেটা নেই। খুবই হ-য-ব-র-ল অবস্থা। কাজেই এখানে এলাকাভিত্তিক ভাগ করে স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন এবং প্রচুর ভলান্টিয়ার নিতে হবে কমিউনিটির কাছ থেকে। অন্যথায় কিন্তু সামনে ঈদ সবকিছু মিলে আমরা খুব বিপদের আশঙ্কার মধ্যে আছি। গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাতাত্ত্বিক বিষয় হলো যতজনের পরীক্ষা করা হচ্ছে তাদের শতকরা কতভাগ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। এটা কিন্তু গত সোমবার ছিল সর্বোচ্চ। অর্থাৎ শনাক্তকরণের হার শতকরা দুই ভাগ লাফিয়ে বেড়ে গেছে। একটা বিষয় নিশ্চিতÑ মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে, যেহেতু ধাপে ধাপে বাড়ছে অবশ্যই আশঙ্কার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন মৃত্যু কিন্তু ২২ সর্বোচ্চ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কিন্তু একটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। সেখানে ধীরে ধীরে  রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন ব্লকে ভাগ করে চিকিৎসা সেবা চালু করা দরকার। ওখানে অনেক ম্যান পাওয়ার, দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থা, স্বাস্থ্যকর্মী আছে। তাদের চিকিৎসায় ইমিডিয়েটলি কাজে নেমে যাওয়া উচিত। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাস করে। অধিকাংশ মানুষ এখন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে। মানে না ৫.৫ ভাগ। গার্মেন্টস খুলে দেয়ার পর এটা ১০ ভাগে চলে গেছে। আর যখন আমরা দোকান পাট খুলে দেয়ার কথা বলা হয় তখন, মোটামুটি ২০ ভাগের বেশি মানুষ মানে না। অর্থাৎ মানুষের ভেতর একটি সহজ ধারণা হয়ে গেছে দোকানপাট যদি খুলে দিতে পারে তাহলে আমি কেন বের হতে পারবো না। অথচ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষই জানে করোনা কেন হয়? কি জন্য হয়। এটা একটি ফলস সেন্স অব সিকিউরিটি ক্রিয়েট করেছে কারো কারো মাঝে। যদিও এটা হওয়া উচিত না। কিছু লোক বাধ্য হয়ে বের হয়। আরেক শ্রেণি হলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এদের একটি শ্রেণি সরকারি সাহায্য পেলেও আরেকটি শ্রেণি কোথাও সাহায্যের জন্য নাম লেখাতে পারছেন না। আরেকটি শ্রেণি হচ্ছে তরুণ। যারা বাইরে বের হচ্ছে। তাদের সংখ্যাটা দেশে অনেক বেশি। আক্রান্তের তালিকায়ও তরুণদের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এমনটা নয়। এই বয়সের জনসংখ্যাই বেশি। তারা কারো কথা শুনতে চায় না। তারা মাস্ক, গ্লাভস পরে বের হয়ে পানের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। সে কিন্তু সম্পূর্ণ অকারণে বের হয়েছে। এবং দূরত্ব মানছে না। আরো একটি সমস্যা হলো এই তরুণদের ভেতরে হয়তো অনেকে আক্রান্ত। কিন্তু আমরা জানি না। এরা ২০-২৩ ভাগ লক্ষণবিহীন রোগী। এদের কোনো লক্ষণ নেই। এরা কথা বললেও রোগ ছড়াবে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেও রোগ ছড়াবে। আমরা যতই বলি না কেন এই ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কেউ শনাক্ত করতে পারবে না। ঢাকা শহরে একটা সময় দেখা গেছে কিছু রোগী সামাজিক দূরত্ব মানেনি। কিছু রোগী আমরা খুঁজে পাইনি। এখন তো মোটামুটি শহরের সব অ লে রোগী আছে। লকডাউনের পর যেটা হয়েছে ঢাকার কোনো রোগী স্বীকার করেনি তারা কোথায় কোথায় গেছে। জানতে চাইলে বলেছে বাসায় ছিলাম। বাসায় বসে কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার কথা না।

ঢাকার ক্ষেত্রে এই ইনফরমেশন গ্যাপ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ঢাকা হটস্পট হওয়ার মূল কারণ হলো মানুষ লকডাউন মানছে না। সামান্য শিথিল পেয়ে মানুষ স্রোতের মতো রাস্তা ঘাটে, ফুটপাথে, দোকানে, অলিগলিতে চলাচল করছে বেশি। কোনো সামাজিক দূরত্ব মানছে না। ফলশ্রুতিতে অজান্তেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে বেশি। এমনকি গার্মেন্টকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। জনগণের সচেতনতার অভাব রয়ে গেছে। মানুষ তার নাগরিক দায়িত্ব মানছে না।

তাছাড়া ঢাকা শহরে ঘনবসতি অর্থাৎ বস্তি এলাকা বেশি। একটি ঘরে অনেক মানুষ মিলে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। সঠিক পরিচ্ছন্নতা মানা হচ্ছে না। ফলে ঢাকা শহরে আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে। এখন মানুষ যদি সচেতন না হয়, যার যার নাগরিক দায়িত্ব পালন না করে, স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যাবে। এখন জনগণকেই সচেতন থাকতে হবে। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বারবার তাদেরকে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে বোঝাতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া বের হবেন না। ঘরে থাকুন। বাইরে গেলেও কাজ সেরে দ্রুত ঘরে ফিরতে হবে। না হলে আবার কঠিনভাবে লকডাউন দিতে হবে। প্রয়োজনে কারফিউ দিয়ে সবাইকে ঘরে রাখার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058121681213379