করোনার হানা মোকাবেলায় কিছু করণীয় - দৈনিকশিক্ষা

করোনার হানা মোকাবেলায় কিছু করণীয়

আমিরুল আলম খান |

আমি যখন এই নিবন্ধ লিখছি ঠিক সে মুহূর্তে পৃথিবীর ১৬৫ দেশে করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দু'লাখ ছুঁই ছুঁই (১ লাথ ৯৮ হাজার ৭৪১)। প্রাণহানী প্রায় আট হাজার (৭ হাজার ৯৮৯) । আরও  প্রায় সাড়ে ছয় হাজার (৬ হাজার ৪১৫) জন জীবন-মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

রয়টার্সের বরাতে প্রথম আলো জানাচ্ছে, ব্রিটিশ  একটি সমীক্ষায় অনুমান, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ২২ লাখ এবং যুক্তরাজ্যে ৫ লাখ মানুষ করোনা ভাইরাসে মারা যেতে পারে! দুনিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশের পরিস্থিতি যদি এমন ভয়ংকর হয়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় কী ঘটতে পারে তা অনুমান করাও অসম্ভব।

গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটলে চীন যেভাবে তা মোকাবেলা করেছে তা অন্যত্র প্রায় অসম্ভব। সেটি আমরা লক্ষ্য করেছি ইরান, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে। চীনের পর ইতালিতে এই ভাইরাস সবচেয়ে মারাত্মক আকার নিয়েছে। যেখানে চীনে প্রাণহানির সংখ্যা ৩ হাজার ২৩৭, সেখানে ইতালিতে ২ হাজার ৫০৩ জন। কেবলমাত্র গতকাল একদিনেই ইতালিতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৪৫ জন! এছাড়া এ পর্যন্ত  স্পেনে ৫৩৩, ফ্রান্সে ১৭৫, যুক্তরাজ্যে ৭১,  নেদারল্যান্ডসে ৪৩, জার্মানিতে ২৬, বেলজিয়ামে ১০ জন প্রাণ হারিয়েছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও প্রাণহানির উদবেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করেছে এবং সকল দেশকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়ে চলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা। ঘন বসতি, দুর্বল স্বাস্থ্য পরিষেবা, শাসন ব্যবস্থা ও দারিদ্র্য এই আশংকার আসল কারণ। তাছাড়া গত আড়াই থেকে তিন মাসে এখানে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন প্রস্তুতিই চোখে পড়ে নি। হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা চরমে। ভাইরাস পরীক্ষার কীটসের অভাব প্রকট। ডাক্তার, নার্সদের মোটিভেশন ও সুরক্ষার ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারী মারা গেছেন বিনা চিকিৎসায়। কারণ, তিনি সম্প্রতি কানাডা থেকে দেশে এসেছেন শুনেই ডাক্তার, নার্সরা তাকে ফেলে নাকি পালিয়ে যান। এতেই স্পষ্ট বোঝা যায়, ডাক্তার, নার্সরা কতটা সুরক্ষার অভাব বোধ করছেন। 

বিদেশ ফেরত নাগরিকদের আশকোনা হাজি ক্যাম্পে নোংরা পরিবেশে কোয়ারেন্টিন করার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, তাদের প্রতি নেটিজেনদের যে বিদ্বেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা রীতিমতো দুর্ভাগ্যজনক। বিমানবন্দরেও তারা যথাযথ পরিসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে এই ক্রান্তিকালে রাষ্ট্রের সীমাহীন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ, বেপরোয়া অপচয় জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। এখন বিলাসিতার সময় নয়। অপচয়ের সময় নয়। পরিবেশ দূষণের সামান্য সুযোগ নেই। অথচ আমরা পলিথিনে, পলিব্যানারে দেশ মুড়ে দিচ্ছি। ময়লা, আবর্জনার স্তুপ সর্বত্র। দুর্গন্ধে পথ চলা যায় না। সিটি কর্পোরেশন নাক ডাকিয়ে ঘুমুচ্ছে। সাথে বাড়ছে মশার উৎপাত।  লার্ভাসাইড ব্যবহার না করে ফগিং করে জনস্বাস্থ্য আরও ঝুকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। করোনা এবং ডেঙ্গু একসাথে হানা দিলে কী ভয়ংকর পরিস্থিতি হবে তা ভাবার কেউ নেই।

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় রাষ্ট্রের দায় অনেক বেশি। কিন্তু রাষ্ট্র শুধু নসিয়ত করেই দায় সারতে চায়। নিজের দায়িত্ব পালনে এত উদাসীন কোন রাষ্ট্র দুনিয়ায় নেই। গোটা দুনিয়ায় বাঙালির মত নোংরা জাতি দুটো নেই। আমাদের দেশের যে কোন জাতি অনেক বেশি পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে ব্যক্তি জীবনে ও বসতবাড়ির আশেপাশে।

একটি ছোট্ট পরামর্শ দিতে চাই। বসতবাড়ি, হাউজিং, বাণিজ্যিক এলাকা, বাজার, শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরার বর্জ্য অবশ্যই পাতলা চটের বস্তায় ভরে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সকাল হবার আগেই বস্তাভরা বর্জ্য অপসারণ করবে সিটি কর্পোরেশন। বায়ো-ডিসপোজালের এটাই ভাল পদ্ধতি। পলিথিনে ভরে বা খোলা অবস্থায় কোন বর্জ্য কোথাও রাখা বা ফেলা যাবে না। তাতে পরিবেশে দূষণের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়।

উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে নগরের সকল রাস্তা দিনে দুবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সিটি কর্পোরেশন তা করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক : আমিরুল আলম খান,  সাবেক চেয়ারম্যান , যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড  

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033950805664062