করোনায় কেমন আছেন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকেরা - দৈনিকশিক্ষা

করোনায় কেমন আছেন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকেরা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |
গত ৬ জুন বেসরকারি প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের এক সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। বেশিরভাগ বক্তার বক্তব্যে করোনাকালে তাদের নিদারুণ কষ্টের কথা তুলে ধরা হয়েছে। পুরো সময় ঢাকার সেগুনাবগিচার সাংবাদিক সাগর-রুনি হলটিতে সাংবাদিক, শিক্ষক সবার মুখমণ্ডলে ছিল অশ্রুসজল চাউনি। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের অভাব দুঃখ ও কষ্টের বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক সৈয়দ মুজতরা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পন্ডিত মাশাইর কথাগুলো স্মৃতিতে ভেসে উঠল। পন্ডিত মশাই ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন, “বলতো দেখি লাট সাহেবের কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর কুকুরটা যদি ৩টি ঠ্যাং হয় তবে প্রতি ঠ্যাঙের জন্য কত টাকা খরচ হয়? ছাত্র আস্তে উত্তর দিল পঁচিশ টাকা। তারপর পন্ডিত মশাই বললেন, উত্তম প্রস্তাব। অপিছ আমি ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধ মাতা, তিনকন্যা, বিধবা পিসি, দাসী একুনে আট জন।”
 
আমাদের সকলের জীবন ধারন জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। তারপর পন্ডিতমশাই ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এই ব্রাহ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কটা ঠ্যাঙের সমান।” পুরো শ্রেণির ছাত্ররা মাথা নিচু করে বসে রইল। সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পন্ডিত মহাশয় মুখলজ্জা তিক্ততা ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাস সবাই বুঝতে পেরেছে কেউ বাদ যায়নি পন্ডিত মশাই আত্ম অবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে মাখছেন আমাদের সাক্ষী রেখে। পন্ডিতমশাই যেন উত্তরে প্রতীক্ষায় বসেই আছেন। এই নিস্তব্ধতার স্মৃতি সে দিন আবার সংবাদ সম্মেলনে সাগর-রুনি  হলে আমাদের মাঝে ফিরে এলো সেদিন আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রাথমিকের মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্তদের তীর্যক ভাষায় সমালোচনা করে কিছুটা স্বস্তি লাভ করলাম। প্রায় ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন ও প্রায় ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী কাজ করে আসছেন। তাদের কেউ কেউ বিনা বেতনে বা ১০০০-২০০০ টাকা বেতন শিক্ষকতা করেন। তাদের প্রায় বেশির ভাগ প্রাইভেট টিউশনি করে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো মতে সংসার চালায় সরকারি কর্মচারীদের সাথে পন্ডিত মশাইয়ের মতো তাদের ভগ্নাংশের অঙ্ক নাই বা করলাম। তাদের ভগ্নাংশের অঙ্ক অতি ক্ষুদ্র সংখ্যা যা পন্ডিত মশাইয়ের উদাহরণের চেয়ে বেশি বেমানান। স্বাধীন জাতির শিক্ষকদের অঙ্ক নিয়ে অবতারণ করলে পুরো জাতির মাঝে কালিমা লেপন হবে। 
 
করোনার ভয়াবহতার মাঝে স্কুলের সাথে টিউশনি কর্ম গরিব মানুষের মতো হাত পাততে পারে না বলে তারা তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫০০ সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত। বিদ্যালয় বন্ধের সাথে সামান্য বেতনের টাকা বন্ধ অসহায়ত্বের মাঝে অনাহারে অর্ধহারে অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তারা খুঁজে বেড়াচ্ছ বেঁচে থাকার যন্ত্রণা নিয়ে। 
 
এ করোনায় ভারতবর্ষে এক শিক্ষক কলা বেচে সংসারে খানিকটা যন্ত্রণা মেটায়। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মালিকেরা আছেন বাড়ি ভাড়ার বিশাল যন্ত্রণার মাঝে। শিক্ষকদের খানিকটা সহযোগিতা করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষকদের স্কুলের মালিকেরা আজ বড় অসহায়। অথচ তারা  দেশের সাধারণ ও মাদরাসার শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা মাধ্যম কিন্ডারগার্টেন এনসিটিবি কারিকুলাম অনুসরণ করে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির সন্তানদের শিক্ষা সুযোগ নিশ্চিত করে যাচ্ছে। পিইসি পরীক্ষাসহ সরকার ঘোষিত সকল জাতীয় ও বিশেষ দিবস স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালন  করে যাচ্ছেন তারা। যদি কিন্ডারগার্টেন স্কুল না থাকতো তবে সরকারকে আরও ৪০ হাজার স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হতো। ৪০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সরকারকে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হতো। কিন্ডারগার্টেন স্কুল এ দেশে শিশু শিক্ষায় বিশাল অবদান রেখে চলছে। অথচ আজকে করোনাকালে তাঁরা সবচেয়ে অসহায় ও অবহেলিত। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব তেমন পালন করছেন না। বর্তমান করোনাকালে তাদের খোঁজ খবর রাখায় কেউ দৃশ্যমান নয়।
 
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের ঢাকা মহানগরী শাখার এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি এম এ ছিদ্দিক মিয়া আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, এ দেশের শিশু শিক্ষায় বিশাল অবদানের পর কেন কিন্ডারগার্টেন স্কুল দুঃখ-দুর্দশা দৃষ্টিগোচর হয় না? বিষয়টি সকলের কাছে আজকের প্রশ্ন? 
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক সমিতির মহাসচিব শেখ মিজানুর রহমান বলেন, করোনাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বস্তরে তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমকি নন এমপিও কওমি মাদরাসাও বাদ পড়ে নাই। একমাত্র এখনো অর্ন্তভুক্ত হয়নি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। আশাকরি তিনি এদেশের শিশু শিক্ষায় বিশাল অবদানের জন্য আমাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো কখনো সরকারের কাছে আর্থিক অনুদান বা সহযোগিতা দাবি করেনি। দেশের শিশু শিক্ষা বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কতিপয় সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি। 
 
সহজশর্তে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া।  শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান। শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা।  সহজ শর্তে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা।  কিন্ডাগার্টেন স্কুলগুলোকে নিয়মিত দেখভাল করা।  বিদ্যালয় অফিস খোলা রেখে লেভাপড়া বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া।
 
করোভাইরাস স্বাভাবিক অবস্থা না আনা পর্যন্ত শিশু শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে  এনে পাঠদান মোটেই কাম্য নয়। তবে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থকলে যাতে শিক্ষক-কর্মচারী, প্রতিষ্ঠানের অস্বিত্ব বিপন্ন না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। 
 
 
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0089731216430664