করোনায় ছুটি পাননি ১৬৬ চা বাগানের শ্রমিকরা - দৈনিকশিক্ষা

করোনায় ছুটি পাননি ১৬৬ চা বাগানের শ্রমিকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শনিবার সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার আফিফানগর চা বাগানে পাতা উত্তোলনের কাজ করছিলেন সবিতা মুণ্ডা। তার পাশে ছিলেন আরো তিন নারী শ্রমিক। কারো হাতে গ্লাভস নেই, মুখে নেই মাস্ক। করোনাভাইরাসের কথা শুনেছেন সবিতা। এ সময়ে ঘরের বাইরে না যেতে সরকারের নির্দেশনার কথা শুনেছেন তিনি। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় এখনো বাগানে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। এই চা শ্রমিক বলেন, আমাদের তো ঘর থেকে বের না হয়ে উপায় নেই। বাগানে এখনো কার্যক্রম চলছে। কাজে না এলে পয়সা পাব না।  সোমবার (৩০ মার্চ) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শুধু সবিতা নন, ছুটি না মেলায় করোনা আতঙ্কের মধ্যেও নিয়মিত কাজে যেতে হচ্ছে দেশের ১৬৬টি চা বাগানের প্রায় দেড় লাখ শ্রমিককে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সরকার ঘোষিত ছুটি চান এসব শ্রমিক। কিন্তু ছুটি দেয়া হলে বেতন-ভাতা পরিশোধের বাধ্যবাধকতার অজুহাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বাগান মালিকরা।

সিলেটের বেশ কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত সুরক্ষা উপকরণ ছাড়াই পাতা উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই সেখানে। তবে কোনো কোনো বাগান মালিক শ্রমিকদের মাস্ক সরবরাহ করেছেন, ব্যবস্থা করেছেন হাত ধোয়ার। 

সিলেট সদর উপজেলার লাক্কাতুরা চা বাগানে মাস্ক পরেই কাজ করছেন শ্রমিকরা। তবে শনিবার দুপুরে পাতা ওজনের সময় দেখা যায়, সব শ্রমিক এক জায়গায় গাদাগাদি করে জড়ো হয়ে আছেন। এ গাদাগাদির মধ্যেই ছিলেন বাগানের শ্রমিক সুবল গোয়ালা। তিনি বলেন, করোনার ভয় নিয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। আর বাগানের ভেতরে কাজ করলে একে অন্যের সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ি হবেই।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৫ মার্চ সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ হয়েছে গিয়েছে শ্রমঘন শিল্প পোশাক খাতের অধিকাংশ কারখানা। যদিও দাবি সত্ত্বেও এখনো ছুটি পাননি আরেক শ্রমঘন খাত চা বাগানের শ্রমিকরা। এ বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তরে দফায় দফায় চিঠি দিয়েও সদুত্তর পায়নি চা শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। 

চা শ্রমিকদের চিঠির বিষয়ে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাহিদ হোসেন বলেন, চা শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের কেবিনেট সভার পত্র অনুযায়ী চা বাগানের শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ছুটির ঘোষণা নেই। তবে বাগান মালিকরা চাইলে নিরাপত্তার স্বার্থে বাগানের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে পারেন। বিষয়টি আমরা শ্রমিক নেতাদের জানিয়ে দিয়েছি। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।

জানা গেছে, ২৫ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাগানগুলোতে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি দেয় বাংলাদেশ চা বোর্ড। চিঠিতে চা বোর্ডের দেয়া আট নির্দেশনায় বাগানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ও শ্রমিকদের ছুটি প্রদানের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। বোর্ডের নির্দেশনা পেয়ে কিছু বাগান মালিক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালন করলেও সারা দেশের সব বাগানে এসব নির্দেশনা পরিপালন হয়নি। ফলে দেশের প্রায় দেড় লাখ চা শ্রমিকসহ প্রায় ছয় লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন চা শ্রমিক নেতারা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২৭ মার্চ কমরগঞ্জ ও ২৮ মার্চ শ্রীমঙ্গলের বেশকিছু চা বাগানের শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতিতে চলে গেছেন। এর মধ্যে কমরগঞ্জে শমসেরনগর, দেওচড়া, বাগিচড়া, ডবলচড়া ও মিতিঙ্গা চা বাগানের কাজ বন্ধ রাখেন ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। ২৮ মার্চ শনিবার সাতগাঁও, মাকরিছড়া, ইছামতী ও মাঝদীঘি (শ্রীমঙ্গল) চা বাগানের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। মূলত ভারতের আসাম রাজ্যের ৮৬০টি চা বাগানের কাজ বন্ধ ঘোষণার খবর এলে দেশের প্রায় সব চা বাগানের শ্রমিকরা ছুটির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। 

কাজের প্রয়োজনে নিবিড়ভাবে চলাফেরা করতে হয় চা শ্রমিকদের। এ কারণে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদকে চিঠি দিয়ে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ছুটির দাবি জানান শ্রমিক নেতারা। ২৬ মার্চ দেয়া ওই চিঠিতে ছুটি দেয়া না হলে বাগানের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করলেও ছুটির বিষয়ে এখনো কিছুই জানাননি বাগান মালিকরা। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কইরি বণিক বার্তাকে বলেন, চা শ্রমিকরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করেন। নিত্যপ্রয়োজনে হাটবাজার ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চলাচল করেন তারা। এছাড়াও চা শ্রমিকদের অনেকেই বাগানের কাজ ছাড়াও স্থানীয় বাসা-বাড়িতেও কাজ করে। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো চা শ্রমিকদের ছুটি দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু শ্রম অধিদপ্তর ও বাগান মালিকরা আমাদের দাবি কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছেন না। এসব কারণে অনেক বাগানের শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ হয়ে নিজেরাই বাগানের কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। প্রশাসন ও বাগান মালিকরা দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে সারা দেশের চা বাগানের পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। 

চা শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, একজন চা শ্রমিক শুধু বাগানে চা প্লাগিংই করেন না। বরং বাগান থেকে কুঁড়ি উত্তোলন থেকে শুরু করে চা উৎপাদন কারখানা চালু রাখা, চা মোড়কজাত, চা পরিবহনসহ সব ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। চা শ্রমিকদের সঙ্গে বাগানের বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদেরও অবাধে সংস্পর্শ হচ্ছে। ফলে বাগান মালিকদের চা বাগান নিয়ে অবহেলা এ খাতে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন তারা। 

চা শ্রমিকদের ঝুঁকির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ডা. দেবপদ রায় বলেন, এখন কাউকেই ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। চা বাগানে শ্রমিকরা খুব গাদাগাদি অবস্থায় থাকেন। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা উপকরণের অভাবও রয়েছে। ফলে তারা ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছেন। এ অবস্থায় তাদের ঘরে থাকাই ভালো। বিষয়টি আমি গত বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকেও জানিয়েছি।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.016577005386353