করোনায় প্রাথমিক শিক্ষার সংকট ও শিক্ষক নিয়োগে প্যানেল - দৈনিকশিক্ষা

করোনায় প্রাথমিক শিক্ষার সংকট ও শিক্ষক নিয়োগে প্যানেল

মোঃ সিদ্দিকুর রহমান |

করোনা ভাইরাস এক মারাত্মক আতংক। এই মহামারি সারা বিশ্বের অর্থনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। শিক্ষা জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। প্রাথমিক শিক্ষা হলো এর ভিত্তি। শিশু শিক্ষার অন্যতম সমস্যা শিক্ষক সংকট, পদোন্নতি ও বৈষম্য। সমস্যা নিরসনে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা যায়।

শিক্ষক সংকট 
 
এ সংকট ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চলে আসছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় এ সংকট প্রকট হয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞান লাভের অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। যার ফলে তারা জ্ঞান লাভ থেকে পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশন অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স ২০১৯ এর তথ্য মোতাবেক একজন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত বিদ্যালয় ৭৪৯টি, ২ জন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত বিদ্যালয় ১ হাজার ১২৪ টি, ৩ জন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত বিদ্যালয় ৪ হাজার ৮ টি।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ১৮ হাজার শিক্ষক যোগদান করার কথা থাকলেও বহু মেধাবী বেশি বেতনের সুযোগ পেয়ে অন্য পেশায়  যোগ দিয়েছেন। নতুন শিক্ষক যোগদানের প্রক্রিয়া শেষ হবার পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রশ্নত্তোর পর্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানান, আরও ২৯ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যেখানে শূন্য পদে নিয়োগের কথা সুস্পষ্ট লেখা রয়েছে, সেখানে শিক্ষকের শূন্যপদ রাখার যৌক্তিকতা বোধগম্য না।

২৪ লাখ আবেদনের মধ্যে ৫৫ হাজার ২৯৫ জনকে নির্বাচিত করা হয়। গড়পড়তা হিসেবে, পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এই হারের ওপর ভিত্তি করে বলতে চাই সব চাইতে মেধাবীদেরই লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত করা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্তমান ৮০, মৌখিক পরীক্ষায় ২০।  তার মধ্যে সনদের জন্য ৫,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, উপস্থাপন, সাধারণ জ্ঞানের জন্য ১৫ নম্বর। তাই বর্তমানে নিয়োগবিধি মোতাবেক উত্তরপত্রের সিটে কোড নম্বর দেয়া থাকায় লিখিত পরীক্ষায়ই মেধাবী নির্বাচন নিয়ে কোন বিতর্ক থাকে না।

লিখিত পরীক্ষায় কার কত বড় ডিগ্রি আছে তা বিবেচনায় আসে না। বিবেচিত হয়ে থাকে তার জ্ঞান। সেক্ষেত্রে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বড়াই করা সমীচীন নয়। প্রাথমিকে একজন শিক্ষক নিয়োগের পর পরিপূর্ণ শিক্ষক হিসাবে আত্নপকাশ করবে ১ বছর ৬ মাস ডিপএড প্রশিক্ষণের পর। তারপর ইউআরসিতে বিষয়ভিত্তিক, সাব ক্লাস্টার সহ অগণিত প্রশিক্ষণ তো আছে। এ ছাড়া বর্তমানে ২৭ হাজার শূন্যপদ রেখে চলছে প্রাক প্রাথমিকের শিশু শিক্ষা। প্রতিদিন অবসর জনিত, মৃত্যু ও অন্যপেশায় চলে যাওয়ায় শূন্য হচ্ছে কমপক্ষে ২০০ পদ। এ নিয়ে বর্তমানে পদশূন্য রয়েছে প্রাথমিকে প্রায় অর্ধলক্ষ। 

একদিকে করোনা ভাইরাস অপরদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতা প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট মারাত্মক রুপ ধারণ করবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিগত নিয়োগে ৩৭ হাজার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া ছাড়া প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট দূর করার বিকল্প দৃশ্যমান নয়। এদের মধ্যে দীর্ঘসূত্রিতা অন্য পেশায় চলে গেছেন অনেকেই। অবশিষ্ট আনুমানিক ৩০ হাজারের বেশি হবে বলে মনে হয় না। বাকি আরো শূন্যপদে নিয়োগ প্যানেলের মাধ্যমে দেয়া জরুরি। 

এছাড়াও নতুন পদে বর্তমানে ১ লাখ ৯৬৬ জন শিক্ষক পদ সৃজন  প্রক্রিয়াধীন। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৬৫ হাজার শিক্ষক পদোন্নতি  হলে ৬৫ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হবে। ৬৫ হাজার হিসাব রক্ষকের পদ সৃষ্টি হবে। প্রাথমিকে দীর্ঘ ১২ বছর প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতি বন্ধ। প্রধান শিক্ষক পদেও অগণিত পদ শূন্য। মুজিব বর্ষে সরকারের সকল পদ পুরণের অঙ্গীকার রয়েছে। প্রাথমিকে প্যানেল প্রক্রিয়া চালু হলে শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের অভাবে শিক্ষাদান ব্যহত হবে না। আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে জ্ঞান সর্বস্ব সুনাগরিক হিসেবে। 

শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে শেষ করতে ২ বছর সময় পার হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ প্রক্রিয়া বিপুল সংখ্যক পদশূন্য রেখে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষক পদ পদায়ন করে থাকেন। শিক্ষক প্যানেলে নিয়োগ হলে, শিক্ষক সংকট শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেনা। শিক্ষিত বেকাররা বয়স হারানো আতংক থেকে মুক্ত থাকবে। মেধাবীরা এদিক সেদিক চাকরির জন্য ছোটাছুটি করবেনা। অপর দিকে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া হয় না এমন অহেতুক অপবাদ থেকে শিক্ষক সমাজ রক্ষা পাবে। 

পদোন্নতি

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হলে প্রাথমিকে গড়ে উঠবে একটি শিক্ষাবান্ধব প্রশাসন। অথচ এতে অবিজ্ঞতাবিহীন কর্মকর্তা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের শিক্ষক হিসাবে তদারকিতে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। যারফলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হয়। অথচ দীর্ঘ সময় ঝুলে আছে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতি। এর জরুরি অবসান হওয়া প্রয়োজন।

বৈষম্য

বৈষম্যের বেড়াজালে আটকে আছে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিকের শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম, দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে আছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের মানসিক যন্ত্রণা অবসান কল্পে সহকারী শিক্ষদের ১১তম গ্রেড দিয়ে সহকারী প্রধানশিক্ষকদের সম্মাম জনক ভাতা দিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার প্রস্তাব করছি। প্রাথমিকে দপ্তরী কাম প্রহরীদের অমানবিক ২৪ ঘন্টা ডিউটি পরিহার করে ৮ ঘন্টা ডিউটি অবিলম্বে পরিপত্র জারি করার আহব্বান জানাই। পাশাপাশি সরকারি প্রাথমিক ২ শ্রেণির কর্মচারী থাকা কাম্য নয়।  দপ্তরী কাম প্রহরীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর করার দাবী স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকা কাম্য। প্রাথমিকে কর্মঘন্টার বৈষম্য, ননভ্যাকেশনাল কর্মচারীর যৌক্তিক প্রত্যাশা শিগগিরই পূরণের প্রত্যাশা করছি।

মুজিববর্ষে শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব শূন্যপদ পূরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ, অপরদিকে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষক সংকট, পদোন্নতি ও প্রাথমিকে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে বাংলাদেশের জনগণের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রাথমিকে যোগ্য কেউ যাতে শিক্ষকতা পেশা থেকে স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ না হয় সেদিকে সদয় দৃষ্টি দানের আহ্বান জানাই।

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ। 

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060641765594482