করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের স্মরণে শোক পালন করবে চীন। স্থানীয় সময় আজ শনিবার সকাল ১০টায় স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে গিয়ে যে ১৪ জন চিকিৎসাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে তাদেরও স্মরণ করবে চীনের মানুষ।
শোক পালন কর্মসূচির শুরুতে মৃতদের স্মরণে দেশব্যাপী ৩ মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিল এ কথা জানিয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশজুড়ে সাইরেন বাজানোর পাশাপাশি একই সময় গাড়ি, ট্রেন ও জাহাজের হর্ন বাজানো হবে। শোক পালন উপলক্ষে আজ চীনে সবধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ১৪ জন 'শহীদ'-এর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা সবাই চিকিৎসক ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই 'শহীদ'-এর তালিকায় রয়েছেন চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। উহানের এই চিকিৎসক প্রথম সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, সার্স ভাইরাসের মতো একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। পরে তাকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে হেনস্তা করে স্থানীয় প্রশাসন। কয়েকদিন পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান লি ওয়েনলিয়াং। তার মৃত্যু নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর জানুয়ারির মধ্যে পুরো প্রদেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। লকডাউন করা হয় পুরো হুবেই প্রদেশ। এক পর্যায়ে পুরো চীনে
জনগণের চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সম্প্রতি হুবেইসহ চীনের জীবনযাত্রা সচল হতে শুরু করেছে।
চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ৩২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০ লাখ।
এই কঠিন সময়ে করোনাভাইরাসের অন্ধকার মোকাবিলায় দেশবাসীকে আলো জ্বালিয়ে জাতীয় সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্থানীয় সময় আগামীকাল রোববার রাত ৯টায় সবাইকে ঘরের সব আলো নিভিয়ে নিজ নিজ বাড়ির দরজা-জানালা কিংবা বারান্দায় ৯ মিনিটের জন্য মোমবাতি, প্রদীপ ও মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাতে অনুরোধ করেছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা মোদি বলেন, ঘরবন্দি অবস্থায় কেউ যেন নিজেকে একা মনে না করেন সে জন্যই এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তবে আলো জ্বালানোর সময় কোথাও যেন মানুষ জমায়েত না হয় তা নিশ্চিত করতেও অনুরোধ করেছেন তিনি।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ জানাতে এ নিয়ে তৃতীয়বার দেশবাসীর সামনে হাজির হলেন মোদি। প্রথমবার একদিনের জন্য 'জনতা কারফিউ'-এর ডাক দিয়েছিলেন তিনি। সেবার সারাদিন ঘরবন্দি থাকার পর অনেক এলাকায় মানুষের জমায়েত ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। আর দ্বিতীয় ভাষণে দেশজুড়ে ২১ দিনের লকডাউনের ঘোষণা দেন মোদি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। লকডাউনের পর স্বাভাবিক ছন্দে কীভাবে ফেরা যায় তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন তিনি। ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। দেশটিতে ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। সূত্র : এএফপি ও এনডিটিভি।