কর্মকর্তাদের অবহেলায় চাকরি গেল জাবি শিক্ষকের - Dainikshiksha

কর্মকর্তাদের অবহেলায় চাকরি গেল জাবি শিক্ষকের

জাবি প্রতিনিধি |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অফিসে জমা দেয়া একটি চিঠি ১৫ মাসেও রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে পৌঁছায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ আশরাফুল হক ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জানুয়ারি উপাচার্য বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এরপর একই বছরের ৪ এপ্রিল পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর আরেকটি পত্র দেন তিনি। প্রথম চিঠিটি জমা হলেও দ্বিতীয় চিঠিটি উপাচার্য অফিসে জমা দেয়ার ১৫ মাসেও পোঁছায়নি রেজিস্ট্রার অফিসে। ফলে সম্প্রতি প্রথম চিঠির ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। যদিও শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে চান মুহাম্মদ আশরাফুল হক।

রেজিস্ট্রার অফিস বলছে, পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার আবেদন না পাওয়ায় সেটি সিন্ডিকেটে উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। সিন্ডিকেট সভার আগে পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার কোনো আবেদন না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ। তিনি বলেন, ‘সভার আগ পর্যন্ত পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার বিষয়ে ওই শিক্ষকের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন রেজিস্ট্রার অফিসে আসেনি। তাই সভায় উত্থাপন করা হয়নি। তবে সভার পর সম্প্রতি পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার আবেদনটি পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষক বলছেন, আবেগের বশবর্তী হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। পরে চিন্তা-ভাবনা করে ও বিভাগের সহকর্মীদের পরামর্শে পদ্যতাগপত্র তুলে নেয়ার আবেদন করেন। শিক্ষকতা চালিয়ে নিতে চান তিনি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সিন্ডিকেট সভায় তার পদত্যাগপত্রের আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার কোনো আবেদন সেখানে উত্থাপন করা হয়নি।

কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেও সিন্ডিকেট সভায় পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার আবেদন উত্থাপন না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। একজন জ্যেষ্ঠ সিন্ডিকেট সদস্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার আবেদন বিষয়ে আমি আগে থেকেই জানতাম। তাই সিন্ডিকেটে পদত্যাগপত্রের বিষয়টি উত্থাপনের পর আমি উইথড্র লেটার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সেটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবেক চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ছায়েদুর রহমানের সঙ্গে কিছু বিষয়ে দ্বন্দ্ব ছিল সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ আশরাফুল হকের। এর জেরে চেয়ারম্যান পদ থেকে দায়িত্ব শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে মোহাম্মদ আশরাফুল হকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না নিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন চাকরি ও নিয়মিত ক্লাস করার অভিযোগ করেন তিনি। পরে এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিও করা হয়।

অনুমতি না নিয়ে পূর্ণকালীন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার বিষয়টি স্বীকার করেন মুহাম্মদ আশরাফুল হক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কমিটির কাছেও আমি এ বিষয়টি স্বীকার করেছি। তবে বিভাগের কোনো কাজে অবহেলা করে ওই প্রতিষ্ঠানে সময় দেয়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কোর্স শেষ করেছি। কোনো ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটায়নি। আমার শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারবে।

অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অমনোযোগিতার অভিযোগ বিষয়ে কথা হয় বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. জেবউননেছার সঙ্গে। তিনি বলেন, বিভাগীয় দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মুহাম্মদ আশরাফুল হককে বিভাগ কর্তৃক যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাই সে পালন করেছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, শিক্ষার্থীরাও তার পাঠদানে সন্তুষ্ট।’

মুহাম্মদ আশরাফুল হকের নেয়া কোর্সের ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও তাদের ক্লাস পরীক্ষা নিয়মিত নেন মুহাম্মদ আশরাফুল হক। রুবায়ইয়াত রিশাদ নামের বিভাগের প্রাক্তন একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা লোক প্রশাসন বিভাগের প্রথম দিককার শিক্ষার্থী। বিভাগে যে কয়টা কোর্স ভালোভাবে শিখেছি, সবগুলোই আশরাফ স্যারের। উনার ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকত সবচেয়ে বেশি।’

বিভাগটির শিক্ষকরাও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত পাঠদান ও গবেষণার জন্য মুহাম্মদ আশরাফুল হকের মতো শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি বিভাগের জটিল কোর্সগুলোও তাঁকে দিয়ে নেয়া হয় বলে জানান তাঁরা। যদিও মুহাম্মদ আশরাফুল হকের পদত্যাগপত্র আমলে নিয়ে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। যদিও ক্লাস-পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষকের অবহেলার অভিযোগ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে খোদ ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. আমির হোসেন বলেন, ‘পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমরা পদত্যাগপত্র আমলে নিয়ে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছি।’

মুহাম্মদ আশরাফুল হকের অব্যাহতি বিষয়ে বেশ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও সিন্ডিকেট সদস্য এ বিষয়ে বলেন, মুহাম্মদ আশরাফুল হকের বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিযোগ এসেছে, সেটি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। একজন শিক্ষকের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। তবে অনুমতি না নিয়ে কাজ করা অন্যায়। সে অন্যায়ের শাস্তি কখনো অব্যাহতি হতো না। এক্ষেত্রে তাঁকে সতর্ক করতে পারতো। এখন সে যেহেতু অব্যাহতিপত্র তুলে নেয়ার আবেদন করেছে, বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও তাঁকে চাচ্ছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তাঁর পদত্যাগপত্র তুলে নেয়ার আবেদন আমলে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আসলে মূল কথা হচ্ছে, শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের শিকার ওই শিক্ষক। তাঁর পদোন্নতি ২ বছর পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছে।’

এদিকে হঠাৎ করে মুহাম্মদ আশরাফুল হককে অব্যাহতি দেয়ার এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, মুহাম্মদ আশরাফুল বিভাগের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা, সেমিনার ইনচার্জ, সিলেবাস সংশোধর কমিটি সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাচে তিনটি কোর্স নেন তিনি। এ ছাড়া ৮ম ব্যাচের এমপিএ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি। তাই হঠাৎ করে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ার আশঙ্কা তাদের।

বিভাগের একজন শিক্ষক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এমনিতে কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাইরে। আরও একজন শিক্ষক কয়েক মাস পর শিক্ষা ছুটিতে যাবেন। এ অবস্থায় আশরাফুল স্যারের অব্যাহতি আসলেই বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিষয়টি জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে ফোন করলে রিসিভ করেননি তিনি।

প্রসঙ্গত, মুহাম্মদ আশরাফুল হক যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি অর্জন করেন|

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043790340423584