স্বাধীনতার ৪৮ বছরে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে এবং শিক্ষকদের সংখ্যা বেড়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষা গ্রহণে নানা পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু এসব শিক্ষা এখনও কর্মমুখী, কর্ম উপযোগী হতে পারেনি। সরকারি নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে কেবল কেতাবি এবং পুঁথিগত। পাশাপাশি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা এবং মান নিয়ে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। কাজেই শুধু কাগুজে বা পুঁথিগত বিদ্যা নয়, এখন জরুরি বিষয় হচ্ছে কারিগরি, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা। একই সঙ্গে শিক্ষায় ব্যয় হ্রাস মান বৃদ্ধি আবশ্যক। কারণ যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জ্ঞান অন্বেষণের সঙ্গে মানের হ্রাস-বৃদ্ধি যেহেতু জড়িত, তাই জ্ঞানের বিকাশ ও উৎকর্ষের সঙ্গে শিক্ষার মানেও পরিবর্তন আনা জরুরি। যুগোপযোগী শিক্ষার বিষয়টি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-শিল্পকলা-মানবিক-দর্শন বিষয়ের অগ্রগতির সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানলাভের মানদণ্ড যাচাই হতে পারে তার মূল্যায়ন দিয়ে, যা নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা যেতে পারে। দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একটি মারাত্মক ক্ষতিকর দিক হলো, কিছু কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ পয়সার লোভে কিন্ডারগার্টেন, প্রাক-প্রাথমিক কেজি, নার্সারি, ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম প্রভৃতি কারণে শিক্ষায় বিভাজন, বিভেদ সৃষ্টি করেছে। শনিবার (১৫ জুন) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন ফারিহা হোসেন।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশাল সাফল্য। এখন সংশ্লিষ্ট মহলের দায়িত্ব হলো এই নীতির বাস্তবায়ন করা। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আরেকটি সমস্যা হলো, পাবলিক পরীক্ষা বাড়ছে। অথচ দুনিয়ার সব দেশে পাবলিক পরীক্ষা কমানো হচ্ছে। অন্যান্য দেশে যিনি পড়াবেন তিনিই পরীক্ষা নেবেন- এটাই হচ্ছে পরীক্ষা পদ্ধতি। আমাদের দেশে আগে দুটি পাবলিক পরীক্ষা ছিল। এখন হয়েছে চারটি। শিক্ষক তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, ব্যক্তিত্ব, মেধা-যোগ্যতা, মননশীলতা আর আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। একজন শিক্ষককে হতে হবে দৃঢ়চেতা, উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী, নিরপেক্ষ, অকুতোভয়, সত্যবাদী। তিনি তার অনুপম চরিত্র মাধুর্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মন জয় করবেন। এক কথায় তিনি হবেন তার নিজস্ব স্বকীয়তায় অভিনেতা-শিক্ষক, শিক্ষার্থীর কাছে এক অনুসরণীয় আদর্শ। শিক্ষক সমাজে রয়েছে বিভাজন, যেমন সরকারি শিক্ষক, বেসরকারি শিক্ষক, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রমুখ। এই বিভাজনের মূলে রয়েছে বেতন বৈষম্য ও প্রাসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার অভাব। বিভিন্ন সরকারি বিভাগের সঙ্গেও শিক্ষকদের সাধারণ বৈষম্য বিদ্যমান। বেতনের বাইরে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, বিশেষ করে পরিবহন, আবাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত।
অপরিকল্পিতভাবে স্কুল ভবন বিন্যস্ত করা হয়। নতুন ভবন নির্মাণের সময় ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলার জন্য খোলা জায়গার ব্যবস্থা সংকুচিত হচ্ছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করতে হবে। পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে। সব শিক্ষার্থীর দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য বৃত্তির সুবিধা মেধার ভিত্তিতে দিতে হবে। শিক্ষার উন্নয়নে সময় উপযোগী, কর্মমুখী, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষা প্রচলন করতে হবে। শিক্ষা খাতের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদপেক্ষ নিতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যাতে শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট না করে, সে রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নারী শিক্ষার উন্নয়নে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক করে গড়ে তুলতে হবে। এসব করা গেলে হয়তো শিক্ষা কর্মমুখী, জীবনমুখী হবে।
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক