কলাপাড়ায় আট শিক্ষানুরাগীর পাঠশালা - Dainikshiksha

কলাপাড়ায় আট শিক্ষানুরাগীর পাঠশালা

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) |

লাকী আক্তার, রিম্পা, সুমি, পাপড়ি, মোর্শেদা, আঁখিতারা, রেহেনা ও ঝুমুর। এরা আটজন যেন শিক্ষা বিপ্লবে নেমেছেন। গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্রত নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান দিচ্ছে। আর্থিক দৈন্যদশায় প্রাথমিকের গণ্ডি না পেরোতেই এ শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে, এ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এ আট শিক্ষানুরাগী। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বালিয়াতলী ইউনিয়নের আইয়ুম পাড়া গ্রামে লাকী আক্তার, বলিপাড়া গ্রামে রিম্পা, মাঝেরপাড়া গ্রামে মোর্শেদা, বড় বালিয়াতলী গ্রামে সুমি, দিগর বালিয়াতলী গ্রামে পাপড়ি, মধুখালী গ্রামে আঁখিতারা, তুলাতলী গ্রামে রেহেনা ও চরনজির গ্রামে ঝুমুর নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গ্রামীণ সামাজিক শক্তি কমিটির উদ্যোগে এ শিক্ষা পাঠশালা। এ পাঠশালায় স্কুল মাদরাসার অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান করানো হচ্ছে।

পটুয়াখালী সরকারি কলেজের মাষ্টার্সের ছাত্রী লাকী আক্তার। তার পাঠশালায় পড়ানো হচ্ছে ২৪ শিক্ষার্থীকে। সকাল আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত লাকীর পাঠশালায় পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণির হাসান ও তৃতীয় শ্রেণির জিদনী। অন্য শিক্ষার্থীরা নামমাত্র মাসিক টাকা দিলেও এই দুই শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পড়ানো হচ্ছে। লাকী আক্তার বলেন, টাকার জন্য যাতে কেউ শিক্ষায় পিছিয়ে না থাকে, তাই তাদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে অনার চেষ্টা করছি। দরিদ্র পরিবারের এই দুই শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে দারিদ্র্যের অন্ধকার দূর হয়ে তাদের পরিবারেও একদিন জ্বলবে শিক্ষার আলো। সমাজ উন্নয়নে তারাও তখন ভূমিকা রাখতে পারবে।

এইচএসসি পাশ করা শিক্ষিকা সুমি। তার স্কুলে ২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির সোহানা, প্রথম শ্রেণির তাজরী, তৃতীয় শ্রেণির রাকিব ও প্রাক প্রাথমিকের ফারজানা ও সিয়াম বিনামূল্যে পাঠগ্রহণ করছে। উন্নয়নকর্মী সুমি গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা সেবিকা হিসেবে কাজ করছে একটি এনজিওর সাথে। সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দুঃখ, কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেন প্রতিদিন। তাই আর্থিক দৈন্যদশায় যাতে কোন শিক্ষার্থী কৈশোরেই স্কুল থেকে ঝরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমভিত্তিক পেশায় নিয়োজিত হতে না পারে তাই এ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান করাচ্ছেন তিনি।

সুমি বলেন, গ্রামীণ জনপদে এখনও আট থেকে ১২ বছর বয়সেই অনেক ছেলেরা পরিবারের দৈন্যদশায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। একারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের লেখাপড়া। এ শিশুরা যাতে আর্থিক সংকটে ক্লাসে পিছিয়ে না পড়ে তাই তাদের বিনামূল্যে পাঠদান করিয়ে শিক্ষায় আগ্রহী করার চেষ্টা করছেন। এ দুই শিক্ষা বিপ্লবীর মতো অন্যরা নিজ নিজ এলাকায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বিনামূল্যে পাঠ দিয়ে তাদের স্কুলগামী করার উদ্যোগ নিয়েছেন। অভিভাবক সালমা বেগম বলেন, পরিবারে অভাবের কারণে তাদের ঠিকমতো খাবার জোটে না। সন্তানদের স্কুলে পাঠালেও নিজেরা লেখাপড়া না জানার কারণে তাদের ক্লাসের পড়া বাসায় বসে মুখস্থ করাতে পারেন না। আপারা তাদের সন্তানদের ফ্রি পড়াচ্ছে। এ কারণে ছেলে-মেয়েরাও স্কুলে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। অথচ বছরের ছয় মাসে আগে তারা ছিল স্কুলে অনিয়মিত। এখন ভোর হলেই তারা বই-খাতা নিয়ে পড়তে যেতে,স্কুলে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

কলাপাড়ার বালিয়াতলী ইউনিয়নের গ্রাম সামাজিক শক্তি কমিটির উদ্যোগে ও এনজিও ব্রাকের সহায়তায় এই ফ্রি কোচিং ক্লাসের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে বলে জানালেন তুলতলী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক আকতারুজ্জামান। তিঁনি বলেন, বালিয়াতলী ইউনিয়নে দরিদ্র ৩০৭ পরিবারকে গ্রামীণ সামাজিক শক্তি কমিটিতে অন্তভ‚ক্ত করা হয়েছে। এসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অতিদরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের এ ফ্রি কোচিং ক্লাসে পাঠদান করানো হচ্ছে, যাতে তারা প্রাথমিকের গণ্ডি না পেরোতেই ঝরে না পড়ে শিক্ষাজীবন থেকে।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039730072021484