জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ এনে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার দাবি করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার ও বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছেন কলেজেরই হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বিধান চন্দ্র দাশ।
গত ২ অক্টোবর কলেজ গবর্নিং কমিটির সভায় তাকে কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বিনা নোটিশে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। বিধান চন্দ্র দাশের দেয়া অভিযোগে এমপিওভুক্ত হওয়া থেকে তাকে বঞ্চিত করে অন্যদের দুই দফা বেআইনি নিয়োগ এবং তাকে বেআইনি বরখাস্তের জন্য কলেজ অধ্যক্ষ আবু সাঈদ ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া অভিযোগে বিধানচন্দ্র দাশ অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির ৭টি অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া বিধান চন্দ্র দাশের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে কলেজ অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, বিধানচন্দ্র দাশ এখন তার কলেজে চাকরি করে না।
তার দেয়া অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া পৃথক অভিযোগে বিধানচন্দ্র দাশ উল্লেখ করেন, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেলেও জামায়াতপন্থি কলেজ পরিচালনা পরিষদ তাকে যোগদান করতে দেয়নি। পরবর্তী সময়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের সুপারিশে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে গত ২৬ মে ২০১০ তারিখে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে যোগদান করেন।
বিভাগীয় প্রধান মো. শফিউর রহমান ২৪ নবেম্বর ২০১৪ তারিখে অবসরে যান। ফলে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শিক্ষক হয়ে এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা তার। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী ১২ লাখ টাকা দিতে না পারায় তার এমপিও হয়নি। এমপিওভুক্ত করা হয় ৫ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে যোগদানকারী একজন জুনিয়র শিক্ষককে।
পরবর্তী সময়ে পুনরায় তাকে এমপিওভুক্ত করার জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তান বিধান চন্দ্র দাশ টাকা দিতে পারবেন না জানালে তার সঙ্গে অধ্যক্ষের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে চলতি বছর ১ এপ্রিল অধ্যক্ষ আবু সাঈদ তার হাজিরা খাতা থেকে নাম কেটে দেন।
তিনি এর প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে কলেজ থেকে বের করে দেন এবং পুনরায় কলেজে ঢুকলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। একপর্যায়ে গত জুলাই মাসে ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে যোগদানকৃত আর একজন তার চেয়ে অপেক্ষকৃত জুনিয়র শিক্ষককে ওই পদে এমপিওভুক্ত করা হয়। বিধানচন্দ্র দাশ তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে তার বয়স ৩৯ বছর।
এই বয়সে চাকরি থেকে বঞ্চিত করায় তিনি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি মৃত্যু ছাড়া তার আর কোনো বিকল্প পথ নেই বলে উক্ত চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি একাধিকবার কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে যাওয়ার পরও কোনো উপকার পাননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন । বিধানচন্দ্র দাশ জানান, বর্তমানে প্রাইভেট টিউশনি করে তিনি কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।