বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা অনেক প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা। বৃটিশ শাসকরা এদেশে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পূর্ব থেকে এই ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল। বৃটিশরা এদেশের শাসনভার গ্রহণ করার পরও দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না করেই বরং প্রচলিত মাদরাসা শিক্ষায় তাদের ইংরেজি তথা পাশ্চাত্য ধারার কারিকুলাম চালু করে। ফলে তখনও মাদরাসা শিক্ষা যুগের চাহিদা মাফিক শিক্ষিত জনবল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আমলে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আমলেও এই ধারার শিক্ষাব্যবস্থা একটি উন্নত জাতি গঠনে সহায়ক শক্তি হিসেবে অবদান রাখছে।
বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার। দাখিল মাদরাসা হাইস্কুলের সমমান হলেও পূর্বে দাখিল মাদরাসার সুপার (যিনি উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধান) হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমান বেতন পেতেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারই দাখিল মাদরাসার সুপারদের হাইস্কুলের হেড মাস্টারদের সমান বেতন প্রদানের ব্যবস্থা চালু করেন। অনুরূপভাবে আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষের উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষের সমান বেতন এবং ফাজিল ও কামিল মাদরাসারও যথাক্রমে ডিগ্রি কলেজ ও মাস্টার্স পর্যায়ের কলেজের অধ্যক্ষের সমান বেতন দেয়াটা এই সরকারেরই অবদান।
কিন্তু বর্তমানে আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভের জন্য ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের সাথে কিছুটা অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। উক্ত নীতিমালায় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোনোক্রমেই উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ বা সহকারী প্রধান শিক্ষক উপাধ্যক্ষ পদে আসীন বা বেতনভুক্ত হতে পারেন না। পক্ষান্তরে, দাখিল মাদরাসার সুপার স্বপদে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করলে এবং এতদসঙ্গে দাখিল মাদরাসার যে কোনো পদে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে এবং সহসুপাররা অনুরূপ যোগ্যতায় উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছেন। যা সম্পূর্ণরূপে অযোক্তিক এবং রীতিমত বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আলিম মাদরাসার কমিটিকে বলা হয় গভর্নিং বডি। সেই হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের কমিটিও অনুরূপ নামেই অভিহিত। অপরদিকে, দাখিল মাদরাসার কমিটিকে বলা হয় ম্যানেজিং কমিটি। দাখিল মাদরাসার সমমান বলে হাইস্কুলের কমিটিকেও তাই নাম দেয়া হয়েছে। হাইস্কুলের হেড মাস্টারকে দাখিল মাদরাসার সুপারের ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে সহসুপারের সমান গ্রেডে বেতন ভুক্ত করা হয়েছে।
যুক্তিসঙ্গত কারণে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের যত বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাই থাকুক না কেন তিনি বা তাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে আসীন বা বেতনভুক্ত হতে পারবেন না। অথচ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় হাইস্কুলের সমমান দাখিল মাদরাসার সুপারকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের সমমান আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ এবং সহসুপারকে উপাধ্যক্ষ হবার সুযোগ রাখা হয়েছে যা কোনোরূপেই যুক্তি সঙ্গত নয়।
উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও আলিম মাদরাসার প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপকদের দেখভাল বা তদারকির দায়িত্ব যদি এমন একজনকে দেয়া হয় যার উক্ত পদে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা তো দূরের কথা উক্ত পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরও অভিজ্ঞতা নেই তা নিঃসন্দেহে জনমনে প্রশ্নের অবতারণা করে।
অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক ব্যাপার যে, আলিম মাদরাসার সমমান হলেও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় সে ধরনের অযৌক্তিক ধারা বা উপধারা অন্তভুক্তি হয়নি। অথচ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় তা সন্নিবেশ করা হয়েছে যা ইতোপূর্বে মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রেও ছিল না। তবে আশার কথা বর্তমান শিক্ষক ও শিক্ষাবান্ধব সরকার ইতোমধ্যে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সরকারের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট সচেতন মাদরাসা শিক্ষক ও আপামর জনতার প্রাণের দাবি, আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভের জন্য দাখিল মাদরাসার সুপার ও সহসুপারদের অযাচিৎ হস্তক্ষেপ বন্ধ করে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের সাথে বৈষম্য দূর করা হোক।
লেখক : মো. আবদুল হান্নান, প্রভাষক, শান্তিরহাট ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা, চট্টগ্রাম।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]