নওগাঁর মহাদেবপুরে কলেজ পড়ুয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের রিমা রাণী দাস (১৯) মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অবশেষে মোমিনুল হোসেন মোহনকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকালে রিমার নিজ ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রিমা রাণী উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের আতুড়া গ্রামের ঋষি পাড়ার উত্তম দাসের মেয়ে রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গত এপ্রিলে মহাদেবপুর সেন্টারে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মোমিনুল হোসেন মোহন জোরপূর্বক রিমাকে মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর রিমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে আটকে রাখে। এ ঘটনার প্রায় ১ মাস পর রিমা ঐ অজ্ঞাত স্থান থেকে কৌশলে পালিয়ে তার বাবা-মার বাড়িতে চলে আসে।
নিহত রিমা দাসের মা রিনা দাস অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে এবং ডিভোর্স দিয়েছে রিমা। এরপরও মোমিনুল হোসেন মোহন গংরা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিল। এমতাবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে রিমাকে তুলে নিতে আসে মোমিনুল হোসেন ও তার বন্ধু হাবিব হোসেন। সে সময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হলে রিমার বাবা-মা রাইগাঁ বাজারে হাতে তৈরি ডালা, কুলা, চালন বিক্রির জন্য চলে যান। এ সুযোগে মোমিনুল হোসেনরা আবারও দলবদ্ধ হয়ে রিমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য হামলা করে। পরে লোকমুখে এই সংবাদ পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে এসে মেয়ে রিমাকে ঘরে ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশী বলেন, দ্বিতীয় দফায় বখাটে যুবকরা রিমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিতে ব্যর্থ হয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে গেছে। পুলিশ সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
রিমার মা-বাবা এ ঘটনায় ওই দুই বখাটের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও মহাদেবপুর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন মামলা না নিয়ে ইউডি মামলা দায়েরের জন্য বলেন। থানায় হত্যা মামলা করতে না পেরে তারা বাড়ি চলে যান। এরপর রাতে পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন রাত ১২টার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল গিয়ে বিবরণ শোনার পর মোমিনুল ও হাবিবকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। থানা পুলিশ ঐ রাতেই মোমিনুলকে গ্রেফতার করে।
মহাদেবপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আক্তারুজ্জামান আলাল জানান, নিহতের প্রাথমিক ময়নাতদন্ত শেষে গলায় ওড়না পেঁচানো দাগ পাওয়া গেছে। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তিনি নিশ্চিত নন।
মহাদেবপুর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, হত্যার মামলা গ্রহণ করা হয়নি এ অভিযোগ সঠিক নয়।
পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বিপিএম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।