বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস বিশ্বে্র অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্যর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কানাডার শিক্ষার্থীরাও। কোভিড-১৯ এর ফলে কানাডা থেকে অনেকটা নীরবে চলে গেল ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম। মূলত মার্চ মাসের প্রথম দিক থেকে কানাডার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারেনি। ক্লাসে বসে শিক্ষা কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। তবে অনলাইনে কিছু ক্লাস চললেও এর মান ফিজিক্যাল ক্লাসের মতো নয়। রোববার (২৮ জুন) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম এই বছর এখানকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল সম্পূর্ণ নতুন। প্রথম প্রথম তাদের ধরতে অনেক অসুবিধা হয়েছে। আর সব শিক্ষার্থীরা সমানভাবে এই কার্যক্রমে ধরতেও পারেনি।
কানাডার ইউনিভার্সিটিগুলো অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস মোটামুটি সফলভাবে করতে পারলেও জুনিয়র স্কুল, হাইস্কুল ও কলেজগুলোতে এই কার্যক্রম সেভাবে সফল হয়নি। স্কুলের শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি।
অনেকের কম্পিউটার ও অনলাইন ক্লাস করার মতো টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট না থাকার কারণে এই কার্যক্রম সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি। কানাডার অধিকাংশ প্রদেশে কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড সিক্স পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষার বিধান এমনিতেই নেই। আর ওপরের ক্লাসগুলোতে দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এবং গত তিন মাসের অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে এই বছর অনেকটা ‘অটো প্রমোশন’দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট কার্ডে মূল্যায়ন করার সময় প্রতিটা বিষয়ে মার্চ মাসে (সেকেন্ড টার্ম) যে নম্বর পেয়েছে, তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
চলতি মাসে অর্থাৎ এই জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সীমিত আকারে স্কুলগুলো গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম সেরে ফেলেছে। অন্য বছরগুলোতে ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণভাবে গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম করা হলেও এই বছর সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে ৮ থেকে ১০ জন করে শিক্ষার্থীকে স্কুল ও কলেজে ডেকে গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম আলাদা আলাদাভাবে করা হয়েছে।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মার্চ পর্যন্ত ক্লাস হলেও আগামী বছরের কার্যক্রম নিয়ে চিন্তিত এখানকার শিক্ষার্থীরা। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া ২০২০-২১ শিক্ষাবছরের ফিজিক্যাল ক্লাস এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। যদিও কিছু কিছু প্রদেশে নীতিনির্ধারকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্কুল খোলার ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করেছেন।
কানাডার কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড টুয়েলভ পর্যন্ত যে শিক্ষা কারিকুলাম রয়েছে, সেখানে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলোকে অনেক বেশি জোর দেয়া হয়। স্কুলগুলো বন্ধ থাকার ফলে এসব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। স্কুলগুলোতে বিভিন্ন ক্লাব ও খেলাধুলার পাশাপাশি অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রান্না শেখা, কাঠের কাজ, মিউজিক ক্লাস, আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কানাডার ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন দেশে শিক্ষাসফরের ব্যবস্থা সবকিছুই বন্ধ ছিল এই বছর। এখানকার স্কুল-কলেজের লাইব্রেরি ও ল্যাবগুলো বেশ মানসম্মত। ছাত্রছাত্রীরা মার্চ মাসের পর এগুলো ব্যবহার করতে পারেনি।
অন্যদিকে মার্চের পরে ইউনিভার্সিটিগুলো বন্ধ থাকার ফলে ফিজিক্যাল ক্লাস বন্ধ। তবে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে বিদেশ থেকে কোনো শিক্ষার্থী কানাডায় আসতে পারছেন না। তবে তারা অনলাইনে নিজ নিজ দেশে বসে ক্লাস করছেন। ফলে লাখ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কানাডায় বসে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে কানাডায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ও উদ্বিগ্নতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এমনই একজন অভিভাবক ক্যালগেরির মাহমুদ হাসান দিপু জানান, তার ছোট ছেলে ক্লাস এইটে পড়ে। আগামী সেশনে স্কুলে কিভাবে পড়াশোনা শুরু হবে, আদৌ হবে কিনা, না অনলাইনে হবে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্নতার মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, শুধু সামাজিক দূরত্বের কথা চিন্তা করলেই হবে না, স্কুল প্রশাসনের উচিত কোমলমতি শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেয়া।