কারণ ছাড়াই বাড়ল পাঠ্যবইয়ের দাম - দৈনিকশিক্ষা

উচ্চ মাধ্যমিকে ক্লাস শুরু আজকারণ ছাড়াই বাড়ল পাঠ্যবইয়ের দাম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস আজ শুরু হচ্ছে। তবে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনই রয়েছে দুঃসংবাদ। গত বছরের তুলনায় শিক্ষার্থীদের এবার বেশি দামে পাঠ্যবই কিনতে হবে। কোনো কারণ না থাকা সত্ত্বেও জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এ স্তরের বইয়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে অভিভাবকদের পকেট থেকে দুই কোটি টাকার বেশি চলে যাবে। এ টাকার ভাগ পাবে কে বা কারা সেই বিষয়টি নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। সোমবার (০১ জুলাই) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মুসতাক আহমদ।

এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বছর ভর্তি না হওয়া প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। সে অনুযায়ী এবার কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নেয়ার কথা। কিন্তু ভর্তির জন্য ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৩২৫ জন রেজিস্ট্রেশন করেছে। অন্যদিকে, কারিগরি বোর্ডের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। সেই হিসাবে শুধু এ বছরেই পাস করা প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত কোথাও আবেদন করেনি। এসব শিক্ষার্থীর ড্রপআউট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছর ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেলালে এ সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ।

কোনো কারণ ছাড়াই পাঠ্যবইয়ের দাম বাড়ানোয় খোদ এনসিটিবির ভেতরে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব ‘প্যারামিটার’ বিবেচনায় নিলে বইয়ের দাম বাড়ানো যায় সেসব ধরেই দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কমিটি আছে, তারা কাজ করেছে। প্যারামিটারগুলো কী- জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।

তবে জানা গেছে, বইয়ের কোনো প্যারামিটার বা উপাদানেরই দাম এবার বাড়েনি। গত বছরের চেয়ে এবার এনসিটিবি কম দামে কাগজ কিনেছে। বাজারে কাগজ তৈরির পাল্পের (মণ্ড) দাম কমেছে। প্লেট, কালি, গ্লুসহ বই ছাপানো ও বাঁধাইয়ের অন্য উপাদানের দামও গত বছরের তুলনায় কম। অপরদিকে বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যাও বাড়েনি। এমনকি সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা তিনটি বইয়ের মধ্যে একটির দাম গত বছরের মতোই আছে। প্রশ্ন উঠেছে, দরকার থাকলে শুধু একটির বইয়ের দাম বাড়ানো হল না কেন?

এবার বাংলা বইয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪২ টাকা, যা ছিল ১৩০ টাকা। আর বাংলা সহপাঠের (উপন্যাস ও নাটক) দাম ৭২ টাকা, যা ছিল ৬৩ টাকা। উভয় বইয়ের দাম যথাক্রমে সোয়া ৯ ও সোয়া ১৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বইয়ের দাম গত বছরও বাড়ানো হয়েছিল। তখন এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন এবং আপত্তি উঠেছিল। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা বইয়ের দাম ছিল ১১৩ টাকা। আর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সহপাঠের দাম ছিল ৫৫ টাকা। এমনভাবে ইংরেজি বইয়ের দাম ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৮১ টাকা থাকলেও গত বছর ৯৩ টাকা হয়। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে আরেক দফা দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন এক লাফে বাংলা বইয়ের দাম ৪৫ টাকা থেকে ১১৩ টাকা করা হয়েছিল। অন্য বইয়ের দামও একই হারে বাড়ানো হয়।

বইয়ের দাম বাড়ানোর জন্য এনসিটিবিতে একটি কমিটি আছে। এবার ওই কমিটিতে ছিলেন সদস্য (অর্থ) মির্জা তারিক হিকমত। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কমিটির সদস্য সচিব ও এনসিটিবির কস্টিং অফিসার আবদুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কোনো তথ্য জানাতেও অপারগতা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদস্যের (পাঠ্যপুস্তক) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, তিনি কয়েকদিন আগে ওই পদে যোগ দিয়েছেন। বইয়ের দাম নির্ধারিত হয়েছে আগেই। কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে বিষয়টি তার জানা নেই।

অভিযোগ উঠেছে, বইয়ের প্রকাশনা সংস্থাকে লাভবান করে দিতে এনসিটিবির কর্তাব্যক্তিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অতীতে বিশেষ করে গত বছর প্রকাশকরা আবেদন করার পর দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু প্রকাশকের পক্ষে কোনো আবেদন না করা সত্ত্বেও উপযাচক হয়ে দাম বাড়ানো হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটি অন্তত ২ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বেশি লাভ করছে। গত বছর এনসিটিবি উচ্চ মাধ্যমিকের তিনটি বই ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাজারজাত করিয়েছে। এ কারণে বর্ধিত দরের লাভ ১৭ ভাগ হয়েছে। কিন্তু এবার নানা সমালোচনার মুখে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার পাশাপাশি দরও বাড়িয়ে দেয়া নিয়ে নানা সংশয় ও প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।

পাঠ্যবই ছাপা কাজের সংশ্লিষ্টদের সংগঠন মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের বই ছাপানো হয় ৬০ জিএসএম কাগজে। এনসিটিবিই এবার এ কাগজ গত বছরের চেয়ে কম দামে কিনেছে। বাজারেও এ কাগজের দাম কম। গত বছর প্রতি টনের দাম ছিল ৯০-৯২ হাজার টাকা, এবার তা ৭০-৭২ হাজার টাকা। এছাড়া একই কাগজে মাধ্যমিকের একটি অংশের বই ছাপানো হচ্ছে। আমরা এ বই প্রতি ফর্মা ১ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে দেড় টাকায় ছাপছি। এনসিটিবি এবার রয়্যালটিও বাড়ায়নি। ফলে কোনো হিসাবেই বইয়ের দাম বাড়তে পারে না।

জানা গেছে, বাংলা বইয়ে পৃষ্ঠা ৩৬০টি। এটি সাড়ে ২২ ফর্মার। ইংরেজি বইয়ে পৃষ্ঠা ২১৪টি এবং ফর্মা ৩ দশমিক ৩৭। আর সহপাঠে পৃষ্ঠা ১৫৬টি যা পৌনে ১০ ফর্মা। মাধ্যমিক স্তরে এনসিটিবি যে দরে বইয়ের কাজ দিয়েছে সে অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা বইয়ের মুদ্রণ খরচ সাড়ে ৩১ টাকা, সহপাঠের সাড়ে ১৩ টাকা এবং ইংরেজির প্রায় ১৯ টাকা পড়ে। এ স্তরের বইয়ের জন্য এনসিটিবি সাড়ে ১১ শতাংশ রয়্যালটি নেয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রয়্যালটির অর্থ, খুচরা পর্যায়ে বিক্রির কমিশন এবং মুদ্রাকরের লাভ যোগ করলেও কোনো বইয়ের দাম গত বছরের সমানও হতে পারে না। সেখানে এবার বইয়ের দাম বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে এবারের বইয়ের প্রকাশক কাওসারুজ্জামান বলেন, আমার পক্ষ থেকে বইয়ের দাম বাড়ানোর কোনো আবেদন করা হয়নি। আমি জানিও না যে বইয়ের দাম বাড়ানো হবে। আমি কাজ নেয়ার আগেই বাড়ানো হয়েছে। এবার এনসিটিবি বাংলা, বাংলা সহপাঠ ও ইংরেজির প্রতিটি বই ৯ লাখ ৬০ হাজার কপি করে মুদ্রণ ও বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।

ঝরে পড়ল আড়াই লাখ শিক্ষার্থী : কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হচ্ছে আজ। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন উত্তীর্ণ হলেও ভর্তির সুযোগ পেয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৩২৫ জন। রোববার বিকাল পর্যন্ত ৯ লাখ ৭২ হাজার ৪৩৬ জন ভর্তি হয়েছে। এবারেরও ৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৮৯ জন ভর্তি হয়নি।

এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অনেকে প্রতি বছর কারিগরি শিক্ষা নিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। বর্তমানে একই সঙ্গে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির আবেদন নেয়া হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী হয়তো পলিটেকনিকে আবেদন করেছে। এরপরও কেউ ভর্তি বঞ্চিত থাকলে ও কলেজে আসন খালি থাকলে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশনের তথ্য রোববার না মিললেও দু-একদিন পর পাওয়া যাবে। রোববারও হয়তো কলেজ ও মাদরাসায় অনেকে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু অনলাইনে তথ্য আপলোড করতে সময় নিচ্ছে।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033760070800781