কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় নারী তুলনামূলক পিছিয়ে - দৈনিকশিক্ষা

কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় নারী তুলনামূলক পিছিয়ে

কামরান সিদ্দিকী |

শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরির মধ্যে ছাত্রী সংখ্যায় পিছিয়ে আছে কারিগরি শিক্ষা। অন্যদিকে শিক্ষক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণে পিছিয়ে আছে মাদরাসা শিক্ষা। তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় সাধারণ শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের সঙ্গে তুলনা করলে মাদরাসা ও কারিগরিতে নারীর উপস্থিতি অসন্তোষজনক বলা যাবে না। এছাড়া সরকারি উদ্যোগ অব্যাহত থাকায় দেশের অন্যান্য খাতের মতো এই দুই ক্ষেত্রেও নারীরা সমানতালে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। 

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদন বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, মাদরাসা শিক্ষায় কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। তবে বেসরকারি মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কারিগরির তুলনায় নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বেশি। ২০১৭-১৮ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মকর্তা যেখানে ৩৩ দশমিক ৩৩ ভাগ, সেখানে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষায় ১২ দশমিক ৬৫ ভাগ। একইভাবে মাদরাসায় নারী কর্মচারী প্রায় ৩০ ভাগ এবং কারিগরিতে প্রায় ১২ ভাগ। অন্যদিকে মাদরাসাগুলোতে পর্যাপ্ত ছাত্রী ভর্তি হলেও সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার তুলনায় সেখানে নারী শিক্ষক কম। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ শিক্ষার স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে মেয়েদের পরিমাণ যথাক্রমে প্রায় ৫৩ দশমিক ৭৭ ভাগ এবং ৪৭ দশমিক ৩৮ ভাগ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ছাত্রীর পরিমাণ ২৩ দশমিক ৯৫ ভাগ। অন্যদিকে মাদরাসাগুলোতে মোট ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর ৫৪ ভাগই ছাত্রী। অর্ধেকেরও বেশি ছাত্রী হলেও শিক্ষক হিসেবে নারীর সংখ্যা মাদরাসাতেই কম।

ব্যানবেইসের ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রেতিবদন উদ্ধৃত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের 'জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০১৮-১৯' এ দেখানো হয়েছে, দেশের তিনটি সরকারি মাদরাসায় একজনও নারী শিক্ষক নেই। তবে বেসরকারি মাদরাসায় নারী শিক্ষক আছেন ১৩ দশমিক ৫৬ ভাগ। সরকারি কারিগরিতে নারী শিক্ষক প্রায় ১৪ ভাগ এবং বেসরকারিতে ২২ ভাগ। সরকারি স্কুলে নারী শিক্ষক প্রায় ৩২ শতাংশ ও বেসরকারি স্কুলে ২৫ শতাংশের সামান্য বেশি। একইভাবে সরকারি ও বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে নারী শিক্ষক যথাক্রমে প্রায় ২৭ ও ২৩ ভাগ। এসব বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, 'দেশে সরকারি মাদরাসা মাত্র তিনটি। এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের সবাই বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। শিক্ষা ক্যাডারের নারী শিক্ষকদের মাদরাসায় পাঠাতে চাইলেও তারা যেতে চান না। অথচ এ তিনটি মাদরাসায় এখনও অনেক পদ খালি আছে।' দেশের অফিস-আদালতে নারীর তুলনায় মাদরাসায় নারীর অংশগ্রহণ একেবারে কম নয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'চাকরিতে নারী কোটা পূরণ বাধ্যতামূলক। কোটা পূরণ ছাড়া কোনো নিয়োগ হয় না।'

কারিগরি শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ: দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গুলোতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ ভাগ নারী কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে যায় ১৩ ভাগে, ২০১৭-১৮ তে এসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫৮ ভাগ। কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ বছরে ২৩ দশমিক ৫৩ ভাগ নারী নিয়োজিত থাকলেও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ ভাগ নারী কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। একই বছর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে কোনো নারী কর্মকর্তা না থাকলেও কর্মচারী সংখ্যা ১৮ দশমিক ৬৪ ভাগ।

এ প্রসঙ্গে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদ বলেন, 'কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ অব্যাহত আছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে শুধু মেয়েদের জন্য তিনটি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। আরও চারটি নির্মাণাধীন। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে নারীর সংখ্যা আরও বাড়বে।' সরকারি পদক্ষেপ থাকলেও বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নরকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'অনেকে বাইরের কারিগরি কাজে মেয়েদের চাইতে পুরুষদের জন্য বেশি উপযোগী ভাবতে পারে। সেদিক থেকে দাপ্তরিক কাজে মেয়েদের বেশি কাজে লাগানোটা অধিক স্বাচ্ছন্দ্যময় হতে পারে।' 

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী বলেন, 'সারা পৃথিবীতে প্রাথমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের প্রাধান্য রয়েছে। শিশুদের গড়ে তোলা ও শেখানোর কাজটা নারীরা যেভাবে পারেন, পুরুষরা সেভাবে পারেন না। তাই মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপদ্ধতিতে অন্যান্য স্তরের পাশাপাশি প্রাথমিকে মেয়েদের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো ভালো কাজেই পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরা অংশ নিতে পারে। আর্কিটেকচারসহ কারিগরির কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে মেয়েদের দক্ষতার ছাপ পাওয়া যায়।' 

সূত্র: সমকাল

স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল - dainik shiksha স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073699951171875