কারিগরি শিক্ষার দুই প্রধান পদ শূন্য - দৈনিকশিক্ষা

কারিগরি শিক্ষার দুই প্রধান পদ শূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অভিভাবক নেই কারিগরি শিক্ষার প্রধান দুই প্রতিষ্ঠানের। ৮ বছর ধরে পূর্ণকালীন মহাপরিচালক নেই কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরে (ডিটিই)। অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে কাজ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের (বিটিইবি) চেয়ারম্যানের পদটিও খালি তিন সপ্তাহ ধরে।

চেয়ারম্যান না থাকায় নিয়মিত কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন বোর্ডের সচিব। কারিগরি শিক্ষার এ শীর্ষ দু’ই প্রতিষ্ঠান জোড়াতালি দিয়ে চালানোর ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। মুখে বলা হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার ওপর সরকার খুব গুরুত্ব দিয়েছে।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতায় আসার পর আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কারিগরি শিক্ষাকে ‘অগ্রাধিকারের অগ্রাধিকার’ ঘোষণা দেয়। এই শিক্ষাকে দেশের উন্নতির প্রধান হাতিয়ারে পরিণত করতে সরকার গঠনের এক মাসের মাথায়ই ডিটিইতে পূর্ণকালীন মহাপরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতা দুই বছরের মধ্যে থেমে যায়।

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক দিয়েই চালছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ এই শিক্ষার উন্নয়নে নেয়া সব ধরনের সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজটি করতে হয় অধিদফতরকে। অপরদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিটিইবি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান অবসরে যাওয়ার পর গত রোববার পর্যন্ত ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আলমগীর বলেন, বিটিইবিতে শিগগিরই চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কাজ শেষে চেয়ারম্যান নিয়োগের সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে কাউকে পূর্ণকালীন নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওই পদের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬১ সালে কারিগরি অধিদফতর প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এই সংস্থার প্রধানের পদবি ছিল পরিচালক। ১৯৮১ সালে মহাপরিচালক করা হয়। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পূর্ণকালীন মহাপরিচালকই ছিল ওই পদে। গত দুই দশকে ১৩ ব্যক্তি মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করলেও এর মধ্যে মাত্র ৩ জন ছিলেন পূর্ণকালীন মহাপরিচালক। এদিকে এই পদে কর্মকর্তা নিয়োগে এক ধরনের সংকটের কথাও জানা গেছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক পদটি বিশেষায়িত হওয়ায় সংস্থার পদটি বিধিবদ্ধভাবে কারিগরি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য নির্দিষ্ট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি শিক্ষাকে ‘অগ্রাধিকারের অগ্রাধিকার’ ঘোষণা করায় ওই পদে কারিগরি শিক্ষকরা দায়িত্ব পেলে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সহজ হয়। কিন্তু বিধি লঙ্ঘন করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বসানো হয় ওই পদে। বিশেষ করে বিগত অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক একাধারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। ফলে তিনিই কোনো বিষয়ের প্রস্তাবক, আবার তিনিই অনুমোদনকারী ছিলেন। দুই পদে দায়িত্ব পালন করায় মহাপরিচালক অধিদফতরে একবেলা সময় দিলেও আরেক বেলা বসতেন মন্ত্রণালয়ে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে জরুরি কাজে অধিদফতরে আসা লোকজনকে সেবা পেতে বিলম্বের শিকার হতে হতো। অন্যদিকে একই ব্যক্তি দু’পদে থাকায় মহাপরিচালকের কোনো প্রস্তাব যাচাইয়ের সুযোগ বিঘ্নিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই কয়েক বছর আগে সারাদেশের বিভিন্ন টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে (টিএসসি) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যক্রম চালু করা হয়। ওইসব প্রতিষ্ঠান মূলত শর্ট কোর্স পরিচালনা করত। দক্ষ লোকদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে ৩৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ কোর্স দেয়ার জন্য টিএসসি স্থাপন করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর মতো অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, ল্যাবরেটরি, শিক্ষক কিছুই নেই। এক্ষেত্রে বোর্ডের পূর্বানুমোদন, পরিদর্শন করানো হয়নি। ওই শর্ট কোর্সের প্রতিষ্ঠানকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়। এর পরও বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের একই শাখার (কারিগরি) অতিরিক্ত সচিবকে অধিদফতরের চলতি দায়িত্বের মহাপরিচালক করা হয়েছে। তিনিও একইভাবে একবেলা মন্ত্রণালয়ে আরেক বেলা অধিদফতরে দায়িত্ব পালন করেন।

সোমবার দুপুরে পরিবহন পুলে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে গিয়ে দেখা যায় ওই অতিরিক্ত সচিব দফতরে নেই। জানা যায়, ওই অতিরিক্ত সচিব অধিদফতরে দায়িত্ব পালন করছেন।

সম্প্রতি এ নিয়ে আলাপকালে ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইডিইবি) সাধারণ সম্পাদক সামসুর রহমান বলেন, কাজে গতি আনার ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি দুই পদে রাখা ঠিক নয়। টিএসসিতে যে প্রক্রিয়ায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং খোলা হয়েছে সেটা বৈধ হয়নি। এখনও ওইসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, অবকাঠামো, ওয়ার্কশপ, ল্যাবরেটরিসহ নানা সংকট আছে।

চেয়ারম্যানের তালিকায় ৫ জন : কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বিটিইবির চেয়ারম্যানের পদে নিয়োগ পেতে নানা তদবির করছেন আগ্রহীরা। এর মধ্যে শীর্ষে আছেন সরকারি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষকরা। আইনে সুযোগ থাকায় এবার সক্রিয় হয়েছেন বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষকরাও।

এছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের দু’এক কর্মকর্তাও আগ্রহী বলে জানা গেছে। তবে সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে ৫ জনের একটি প্যানেল প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্যানেলে আছেন বিটিইবির পরিচালক (কারিকুলাম) ড. নুরুল ইসলাম, পরিচালক (আইসিটি) মীর মোশাররফ হোসেন, কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের (টিটিটিসি) অধ্যক্ষ অধ্যাপক রমজান আলি, বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহাদত হোসেন এবং বিটিইবির পরিদর্শক প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুস সরদার। বৈদেশিক যোগাযোগ, কর্মসূচি বাস্তবায়ন, বোর্ডের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ইস্যুতে উল্লিখিতদের মধ্যে শেষের তিনজন বেশি যোগ্য বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মধ্যে একজনের নাম চূড়ান্ত হতে পারে। চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রসঙ্গে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে একজনের নাম চূড়ান্ত করে সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071938037872314