উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি একটি করে কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয় সুবিধা সৃষ্টি হবে। সেই সঙ্গে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মক্ষম যুবকদের দেশে ও বিদেশে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাকরি বাজারের চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা এবং ৪টি ট্রেড ও ৪টি স্বল্পমেয়াদি প্যারাট্রেড কোর্স চালু হবে। ২০২৪ খ্রিষ্টোব্দের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে শিক্ষকদের বিদেশে পাঠান : প্রধানমন্ত্রী
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ‘বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “উপজেলা পর্যায়ে যে নতুন টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপনের প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হলো, তাতে তো শিক্ষক দিতে হবে। শিক্ষকের প্রকট অভাব আছে। এজন্য শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যে মানের আমরা প্রশিক্ষণ দেব…সুতরাং ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করে শিক্ষকদের ট্রেনিং দাও। প্রয়োজন হলে শিক্ষকদের বিদেশে পাঠাও। কয়েকশ হলেও আমার আপত্তি নাই। যাক, তাড়াতাড়ি প্রশিক্ষণ নিয়ে আসুক।”
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনেক জায়গায় সরকারের স্থাপনা নির্মাণ করার পর দেখা যায়, লোক নাই, চেয়ার নাই, বেঞ্চ নাই, যন্ত্র নাই। এটা পরিহার করতেই হবে। এখানে (নতুন টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রকল্পে) যেন এটা না হয়। ৩২৯ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ করছি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চাচ্ছেন, এটা নির্মাণ হতে হতে যেন যন্ত্রপাতি, চেয়ার-টেবিল, শিক্ষক যেন প্রস্তুত থাকে।’
জানা যায়, নতুন প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ৯৮৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, শিক্ষক ডরমিটরি, ছাত্রীনিবাস, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, গভীর নলকূপ, ৫০০ কেভিএ সাবস্টেশন, শহীদ মিনার, মুক্তিযোদ্ধা মনুমেন্ট এবং পানি সংরক্ষণাগার ইত্যাদি। এটি বাস্তবায়িত হলে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমের শুরু এবং প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন শিক্ষার্থী অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সূত্র জানায়, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে টিভিইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি শিক্ষাকে গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ বিদ্যমান ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এখন দেশের অবশিষ্ট ৩২৯টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।