আজ পনেরোই আগস্ট, বাঙালির ইতিহাসের শোকাবহ দিন, জাতীয় শোক দিবস। বাংলাদেশ স্মরণ করছে তার স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায়, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের এ দিনে, কতিপয় রাজনৈতিক কুচক্রীর যোগসাজসে, সেনাবাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী হত্যা করে জাতির অবিসংবাদিত নেতাকে। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের,আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও সেনা কর্মকর্তাকে। বাংলাদেশে নেমে আসে এক বিভীষিকা, শুরু হয় এক অ-সাংবিধানিক স্বৈরশাসন। একে একে ধ্বংস হয়, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া বাঙালির সব অর্জন।
সেদিন কেমন ছিল ১৫ আগস্টের সেই ভোর? সেই রাত্রির বুকচেরা আমাদের প্রথম সকাল? সেদিন কিছুই ঠিক এমন ছিল না। রাত্রির চেয়েও অন্ধকার ছিল সেই অভিশপ্তদিন। বাঙালিরর প্রতিটি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, এদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী এই মহান নেতাকে হত্যার ঘটনায় নৃশংসতায় স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো বিশ্ব।
ঘাতকরা ঐ দিন শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই থেমে থাকেনি। হত্যা করে বঙ্গবন্ধু স্ত্রী বেগম ফজিতুলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল আর নয় বছরের শিশু শেখ রাসেলকে। ঘাতকের বুলেট কেড়ে নেয় পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালের প্রাণ। খুনিরা বঙ্গবন্ধুর আত্মীয় পরিজন এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরকেও ছাড় দেয়নি। দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাঁথা হলেও ভয়ঙ্কর সেই হত্যাকাণ্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়ালের চেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরষ্কৃত হয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে জারি হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। তবে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে বাতিল হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। উন্মুক্ত হয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সম্পন্ন হয় বিচার। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট শাসনের আমলে রায় কার্যকরে বাধা সৃষ্টি করে রাখা হলেও বর্তমান মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্পন্ন হয় বিচার কাজ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনের রায় কার্যকর হয় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ২৭ জানুয়ারি। দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েক খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে এখনো। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের উদ্যত সঙ্গিনের সামনে শোক আর অভাবিত ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে পড়েছিল ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ।
অনিবার্ণ সেই শোক বাংলায় নদীর স্রোতের মতো চির বহমান এখনো। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন। ঘাস বা শঙ্খচিল নয়, শেখ মুজিব হয়েই তিনি ফিরে আসবেন মানুষের কাছে বারবার, তারই এ বাংলায়।