কিশোর অপরাধ : দায় নেবে কে? - দৈনিকশিক্ষা

কিশোর অপরাধ : দায় নেবে কে?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা একটি সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য ভাবনার বিষয়। শেকড়েই এই সমস্যার সমাধান করা না গেলে বাংলাদেশ যে অধঃপতনের দিকে যাবে এতে সন্দেহ নেই। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন হিমেল আহমেদ।

কিশোর অপরাধ বলতে আমরা কী বুঝি? কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন সামাজিক অপরাধকে বুঝানো হয়েছে। সম্ভবত এসব কিশোরের বয়স ১৮ বছরের নিচে হয়ে থাকে। চুরি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধেও এরা জড়িয়ে পড়ছে। দিন দিন এরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। গ্যাং তৈরি করে হয়ে উঠছে সন্ত্রাসী। বেশ কয়েকটি কারণে এরা ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তির অপব্যবহার, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া কিংবা অভিভাবকদের অবহেলা। আমার মতে এই কারণদ্বয়ের জন্যই স্কুল/ কলেজপড়ুয়া কিশোর বা তরুণরা অপরাধী হয়ে উঠছে। এদের স্কুলব্যাগে বই-খাতার পাশাপাশি মারাত্মক অস্ত্র ও মাদক পাওয়া যাচ্ছে। এরা এসব দামি অস্ত্র পাচ্ছে কোথায়? এদের মাদক কেনার মতো টাকা দিচ্ছে কারা? এ রকম হাজারো প্রশ্ন আমাদের সবার মনে।

বাংলাদেশে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা আসলে কত তার নির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই। তবে প্রতিটি জেলায় এদের দল বা গ্যাং রয়েছে। কিশোর গ্যাং-এর বিভিন্ন অপরাধের খবর পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে! সারাদেশেই কিশোর গ্যাং বিস্তার লাভ করেছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান ইসরাফকে ছুরিকাঘাতে খুন করে কয়েকজন কিশোর। ঢাকার ১৬ বছর বয়সী আদনান উত্তরার একটি গ্যাং-এর সদস্য ছিল এবং তাকে মূলত অন্য গ্যাং-এর সদস্যরা হত্যা করে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে জুনিয়র-সিনিয়র বিতর্কে রাজধানীর চকবাজার এলাকায় হাসান আলী নামের ১৪ বছর বয়সি জেএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত করে একই এলাকার কয়েকজন কিশোর।

অতিসম্প্রতি জাতীয় এক দৈনিকে পড়লাম যে তুচ্ছ ঘটনায় খুন করছে ফেনীর বিভিন্ন কিশোর গ্যাং-এর কিশোররা। পত্রিকাটি লিখেছে যে ফেনী জেলায় অন্তত ১০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন বড়ো ভাইদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা এখন নিজেরাই বেপরোয়া, ভয়ংকর। পুরো শহর, গ্রাম হাটবাজার সর্বত্র এদের প্রভাব। মাদকের জগতেও রয়েছে এদের বিচরণ। কিশোর অপরাধীর সংখ্যার দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। এক প্রতিবেদন বলছে যে গত ১৬ বছরে ঢাকায় ৯৯ খুনের মামলায় ৩০০ বেশি কিশোর জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে গত দেড় বছরে ঘটেছে ১৩টি খুন। এতে জড়িত অন্তত ১২০ কিশোর। এদের নাম উল্লেখ করে খুনের মামলাও হয়েছে। প্রতিবেদনে ঢাকার উত্তরা, হাজারীবাগ, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং-এর খবরও উঠে এসেছে। এই কিশোর গ্যাং-এর কিশোররা খুন-ধর্ষণ, মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িত। ক্রমে সে সংখ্যা বাড়ছে। এদের থামানোর জন্য প্রশাসন সাধ্যমতো চেষ্টা করে চলেছে তারপরও এরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ঢাকাতে কিশোর গ্যাং-এর সংখ্যা অগণিত। প্রতিনিয়ত এরা বিভিন্ন অপরাধ করছে।

ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রামেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। একটি জাতীয় পত্রিকার জরিপ বলছে যে চট্টগ্রামে গত দেড় বছরে কিশোর অপরাধে নগরীর বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৫টির বেশি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ ছিনতাই মামলার আসামিই কিশোর। দিনে-দুপুরে কিংবা রাতের অন্ধকারে চট্টগ্রামের প্রায় সব পাড়া-মহল্লায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। চট্টগ্রাম নগরীর ৩০০ স্পটে প্রায় ৫৫০ জন কিশোর অপরাধীর বিচরণ রয়েছে। যারা বিভিন্ন গ্যাং-এর সঙ্গে জড়িত। এসব কিশোর অপরাধী ও কিশোর মাদকাসক্তকে নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এদের সঠিক পথে আনার জন্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি।

বাংলাদেশকে আগামীতে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই কিশোর ও তরুণরা। তারাই যদি মাদকাসক্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে বাংলাদেশকে আলোর পথ দেখাবে কারা? তাই সরকারসহ আমাদের সবার এখনই সচেতন হওয়া উচিত। আমরা চাই না কোনো কিশোর ও তরুণের গায়ে অপরাধী হওয়ার দাগ লাগুক। আসুন, আমরা সকলেই ধর্মীয় অনুশাসন মানি ও দেশপ্রেমে নিজেকে নিয়োজিত রাখি।


হিমেল আহমেদ : শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067729949951172