কিশোর গ্যাং নতুন প্রজন্মের ক্যানসার - দৈনিকশিক্ষা

কিশোর গ্যাং নতুন প্রজন্মের ক্যানসার

নিজস্ব প্রতিবেদক |
মানুষের সঙ্গে মানুষের অসম প্রতিযোগিতা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে অপরাধ। ব্যক্তিজীবনে কমে আসছে ধৈর্যশীলতা। তৈরি হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। আর এ সামাজিক অবক্ষয়ের মূল ভূমিকা পালন করছে কিশোর ও যুব সমাজ। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে কিশোর গ্যাং। রাজধানী ছাড়িয়ে এটা ছড়িয়ে পড়েছে জেলা শহরগুলোতে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারে মারামারি, খুনখারাবি, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, ইভটিজিং সবই করছে। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
 
সম্প্রতি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এক ভয়ঙ্কর চিত্র। শুধু রাজধানী শহরেই গড়ে উঠেছে শতাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ, যার মধ্যে সক্রিয় আছে ৫০টি। এসব গ্যাংয়ে অন্তত কয়েক হাজার কিশোর জড়িত। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনায়ও রয়েছে ২০-২৫টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এদের মধ্যে অনেকেই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেনি। অথচ তারা ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ২০১৫ সালের ২৭ মে উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরে কিশোর গ্যাং গ্রুপের অন্তর্দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে নিহত হয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র অনীক। ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি উত্তরায় ডিসকো বয়েজ ও নাইন স্টার গ্রুপের অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হয় ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির। আদনান হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়েই আলোচনায় আসে কিশোর গ্যাং। অথচ ঢাকার শিশু আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের নথি অনুযায়ী গত ১৫ বছরে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং কালচার ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ৮৬টি খুনের ঘটনা নথিভুক্ত আছে। চলতি বছরের ২৯ জুন হাজারীবাগ এলাকায় ১৫ বছর বয়সি ইয়াছিন আরাফাত ও ৭ জুলাই গেণ্ডারিয়া হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শাওন খুন হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর খুন হয় মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে কিশোর গ্যাং গ্রুপের দ্বন্দ্বে মহসিন নামে এক কিশোর।
 
এখন প্রশ্ন হলো, এসব কিশোর গ্যাং থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতাই কি যথেষ্ট?
 
মানব জীবন বেড়ে ওঠা পরিবেশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যার মধ্যে রয়েছে নানা অসঙ্গতি। বিশেষ করে কিশোর বয়সে বেড়ে ওঠার পরিবেশ তাকে অপরাধী হয়ে উঠতে সহায়তা করে। কারণ কিশোরদের মধ্যেই অ্যাডভেঞ্চার ফিলিং বা হিরোইজম ভাব বেশি কাজ করে। যার ফলে ইতিবাচক চর্চার দিকে ধাবিত না হয়ে নেতিবাচক চর্চার দিকে ধাবিত হয়। ভিনদেশি সংস্কৃতিও এর জন্য অনেকটা দায়ী। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে কিশোরদের ব্যবহার করার কারণেও তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। এককভাবে অগ্রসর না হয়ে দলগত বা সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যে কোনো অপরাধ ঘটাতে তারা দ্বিধাবোধ করে না। আর এসব অপরাধ পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখনই প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। প্রয়োজন কার্যকর কাউন্সিল। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করলে হবে না; সর্বপ্রথম অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। শিক্ষক, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি বা যাদের কথা শুনবে—এমন ব্যক্তিদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই এই গ্যাং কালচার থেকে বিপদগামী কিশোরদের রক্ষা করে আগামীর প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাসযোগ্য পরিবেশ উপহার দেওয়া যাবে।
 
লেখক: নাজমুল করিম ফারুক, কুমিল্লা
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050408840179443