বখাটে কিশোর গ্যাংয়ের কু-প্রস্তাব ও নানা রকম ইভটিজিং সহ্য করতে না পেরে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন জুই আক্তার (১৫)।
জুই কুড়িগ্রামের উলিপুরে পন্ডিত মহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বিষ পানে করায় মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে তাকে উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জুইয়ের বাবা জুলফিকার আলী জানান, কিশোর গ্যাংয়ের অন্যায় এবং বাড়ি ভাংচুরের প্রতিবাদ করায় প্রতিবেশী মুদি দোকানদার মিলন মিয়াকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে মারাত্মক জখম করে। সে বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ৫নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে জুইয়ের বাবা উলিপুর উপজেলার নারকেলবাড়ী তেলিপাড়া গ্রামের ইলেকট্রেশিয়ান জুলফিকার আলী মানিক ও বাড়ীর সদস্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা এখন বাড়িতে ঢুকতে পারছে না।
উলিপুর থানায় এ কিশোর গ্যাংয়ের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে ধরেনি পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে ৩ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায়।
জুইয়ের বাবা জানায়, জুই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বলে শত কষ্টেও তাকে টিউশনিসহ সমস্ত খরচ দেন প্রতিনিয়ত। বেশ কিছুদিন থেকে এলাকার কিশোর শেখ ফরিদ, সেনা মিয়া তার মেয়েকে প্রেম, বিয়েসহ নানা রকম প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু জুই তাতে রাজি হয়নি। এ কারণে ঐ দুজনসহ মামুন, খোকন, আঙ্গুর বিপুল, শাহীন, মুকুট, মনছুর প্রায় প্রতিদিন জুই প্রাইভেটে যাবার সময় ও বাড়ি থেকে কোথাও যাবার সময় নানা রকম ইভটিজিং করত। এবং নানা রকম কু-প্রস্তাব দিত।
এক সময় অতিষ্ট হয়ে জুই বাধ্য হয়ে ঘটনা তার মাকে বলে। তার মা তার বাবাকে জানালে বিষয়টি ঐ কিশোরদের অভিভাবকদের জানায়। এটাই অপরাধ জুই এর বাবার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ কিশোর গ্যাং সোমবার দুপুরে জুই এর বাড়িতে এসে তার বাবাকে বেধড়ক মারপিট করে।
ঘটনাটি উলিপুর থানায় অবহিত করলে পুলিশ আসলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলে ঐদিন বিকালে আবার এসে বাড়ি ভাংচুর করে এতে বাধা দেয় প্রতিবেশী মুদি দোকানদার মিলন মিয়া।
এরপর কিশোর গ্যাং মিলন মিয়াকে দোকান থেকে তুলে পাশ্ববর্তী একটি বিলের কাছে এলোপাথারিভাবে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে বিলের পানিতে ফেলে যায়। একের পর এক ঘটনায় জুই সহ্য করতে না পেরে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
বর্তমানে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে সে মৃত্যুর সংগে পাঞ্জা লড়ছে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে জুই এর পরিবার। সকলে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
ছাত্রী জুই বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন প্রাইভেটে যাবার সময় নানা রকম ইভটিজিং করে ও কু-প্রস্তাব দেয় ঐ বখাটে যুবকরা। এদের মধ্যে সেনা ও ফরিদ সবচেয়ে বেশি ইভটিজিং করতো। আমি ঐ বখাটেদের শাস্তি চাই।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে। আমি এর আগে এলাকায় ইভটিজিংয়ের অভিযোগ পাইনি।’