এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ বছরের ডাকসুর অনুপস্থিতি নিয়ে হা-হুতাশ করে লাভ নেই। এতদিন ডাকসু না থাকার দায় কেউই নিতেও চাইবে না; না সরকার, না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আজ যখন লেখাটা লিখছি, সামনে আর মাত্র একটা দিন পড়ে আছে ডাকসু নির্বাচনের। ক্যাম্পাসে এখন মুখে মুখে ফিরছে ডাকসু কেন্দ্রিক আলোচনা। ক্যাম্পাসের প্রতিটি জনসমাগমের বিষয়বস্তু যে ডাকসু হবে এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা তাদের অবহেলিত পর্বের যবনিকাপাত টানতে চায় ডাকসুর মাধ্যমে।
আপাতত প্রেক্ষাপট থেকে ডাকসু না থাকার দিনগুলো বরং বাদ যাক। বাংলাদেশের ইতিহাসের সোনালী অতীতটাও তোলা থাক। চলুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোর কথা ভাবি। বাংলাদেশের কথা বললাম এজন্য যে- ডাকসু বাংলাদেশকে সোনালী মোড়কে মুড়িয়ে রেখেছিল। ডাকসু আর বাংলাদেশের ইতিহাস ছিল মিলেমিশে একাকার হয়ে।
সামনের ১১ মার্চ; ডাকসুর ইতিহাস নতুন করে লেখার দিনক্ষণ। তবে ডাকসুকে কেবলমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার প্ল্যাটফর্ম ভাবলে ঠিক হবে না। ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। আমরা যদি ডাকসুকে ক্ষুদ্র পরিসরে ভেবেও থাকি তবে তা নিতান্তই ভুল। কারণ দেশের সকল শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ডাকসু নির্বাচনকে পাখির চোখ করে রেখেছে। আড়াল থেকে ডাকসুকে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছে। ডাকসু অন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার ভিত রচনার মোক্ষম অনুপ্রেরণার রসদও বটে। বাংলাদেশের অন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে ডাকসু থেকে অনুপ্রেরণা পাবে। সব থেকে বড় কথা- ডাকসুর আবেদন কিংবা পরিসর দুই-ই বৃহত্।
ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে আমরা জেনেও ফেলেছি কারা নির্বাচনে লড়ছেন। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বামপন্থি ছাত্রসংগঠন এবং কোটা সংস্কার প্যানেল বাদেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে আসার কথা জানিয়েছেন। প্রত্যেক আবাসিক হল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনই ঢিমেতালে প্রচারণা শুরু হয়ে গিয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে এই প্রচারণায় গতি আসবে তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচেয়ে সুখকর ঠেকছে এই জিনিসটা- ছাত্রদল, ছাত্রলীগ দুই বৃহত্ ছাত্রসংগঠন সমানতালে ভোটের মাঠে নেমেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর কথা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের কাছে অজানা থাকার কথা নয়। বিভিন্ন দল তাদের ইশতেহারের মাধ্যমে সেসব সমস্যা সমাধানের প্রয়াস তুলেও ধরছেন।
এতদিনের ডাকসু না থাকায় সৃষ্ট সমস্যাগুলো খুঁজতে গেলে গলদঘর্ম পোহাতে হবে। তবে এটা ঠিক; প্রার্থীরা নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে এসেই এইসব সমস্যা ভোজবাজির মতো সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, রেজিস্টার বিল্ডিং কেন্দ্রিক প্রশাসনিক কাজে সময়ক্ষেপণ, অপর্যাপ্ত পরিবহন সেবা, ক্যান্টিনের খাবারের মান, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ইত্যাদি সবমিলিয়ে সমস্যা অসংখ্য। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হবে এইসব সমস্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে উত্তরণের পথ দেখানো। মূল কথা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই পরিচিতি দেয়াই হবে মূল কাজ। আর নয়তোবা দুইযুগ বা তারও বেশি সময় পর ডাকসুর শিকে ছেঁড়া আর না ছেঁড়া সমানই ঠেকবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: ইত্তেফাক