সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। আত্মত্যাগের বিনিময়ে গর্বিত মুক্তিযোদ্ধারা এনে দেন এ দেশের নির্যাতিত ও শোষিত মানুষের মুক্তি আর স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, এই সূর্যসন্তানরা যে মাটিতে তারা ভূমিষ্ঠ হয়েছেন সে মাটি ধন্য। যারা তাদের জন্ম দিয়েছেন তারা গর্বিত জনক-জননী, যারা তাদের শিক্ষা দিয়েছেন তারা গর্বিত শিক্ষক। যে প্রতিষ্ঠানে তারা শিক্ষা গ্রহণ করেছেন সেটা উত্তম বিদ্যাপিঠ।
মুক্তিযুদ্ধের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ধামরাইয়ের আমাদের প্রিয় ‘কুশুরা আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়’। ১৯৪১ সালে নিভৃত পল্লিতে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে। এই বিদ্যালয়ের ১২২ জন শিক্ষার্থী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন এই বিদ্যাপিঠেরই ছাত্র মেছের আলী ও আবুল হোসেন। বাকিদের অনেকেই প্রয়াত হলেও অনেকে আজও বেঁচে আছেন কালেরসাক্ষী হয়ে। একদিন এরাও থাকবেন না। থাকবে অমূল্য স্মৃতি আর অবিস্মরণীয় ইতিহাস। স্মৃতিটুকু যেন কোনোভাবেই বিস্মৃত না হয়। যেন বিকৃত না হয় ইতিহাস।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন ধামরাই থানা মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঢাকা-২০ (ধামরাই) এর এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বেনজীর আহমদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এই প্রতিষ্ঠানেরই পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এনামুল হক আইয়ুব, সাবেক রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ সোহরাব হোসেন, কুশুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুজ্জামান এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এই প্রতিষ্ঠান থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ১২২ জন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকে ধরে রাখতে তারা উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন। এমপি বেনজীর আহমদের নির্দেশনায় এই বিদ্যাপিঠের প্রাক্তন ছাত্র ও প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুর রহমান, শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, শিক্ষক আমিনুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানটির সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা এনামূল হক আইয়ুব বিদ্যালয় চত্বরে স্থাপন করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এই প্রতিষ্ঠানের ১২২ জন (প্রাক্তন শিক্ষার্থী) বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা বিশাল দৃষ্টিনন্দন এক স্মৃতিফলক। জীবিত সকল মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াতদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই বিদ্যাপীঠের আঙ্গিনায়। তাদেরকে সম্মানিত ও পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরো আঙ্গিনাই পরিণত হয়েছে অভূতপূর্ব এক মিলনমেলায়। মহান বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানটি সুন্দর, সুষ্ঠু, দৃষ্টিনন্দন ও প্রাণবন্ত করে তুলতে ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল আগে থেকেই। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে এমন মহতী উদ্যোগের উদ্যোক্তারা নিশ্চয়ই প্রশংসা প্রাপ্তির দাবিদার। উদ্যোক্তা ও আয়োজকদের পক্ষ থেকে সাংসদ বেনজীর আহমদ ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এনামূল হক আইয়ুব জানালেন, এই প্রতিষ্ঠান থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ১২২ জন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে এই কাজটুকু করতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।
শুধু প্রতিষ্ঠানের ১২২ জন শিক্ষার্থীই নন, তাদের সম্মানে যারা কাজ করেছেন তারাও আমাদের গর্ব। তারাও এই এলাকার গর্ব।
লেখক : ফারজানা রহমান, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।