কৃষকের ধান কাটলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

কৃষকের ধান কাটলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি |

চারিদিকে মাঠভরা পাকা ধান ক্ষেত। চলছে মজুর-কামলার সংকট। বাজারে ধানের দামও কম। মনের দুঃখে গরিব কৃষকও তার নিজের জমির ধান না কেটে অন্যের জমিতে মজুরি করছে। এক দিনের মজুরির টাকায় জুটছে প্রায় ২ মন ধান। ফলে জমিতে ধান ফেলে রেখে বাধ্য হয়েই কামলা দিচ্ছে কৃষক। প্রায় ৪ মাস ধরে তিলতিল করে আবাদের পেছনে পরিশ্রম করলেও ধান কাটতে পারছে না কৃষক।

আর স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটতে দরিদ্র কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে পাশে পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা মাল্টিমিডিয়া ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা স্থানীয় অনেক দরিদ্র কৃষকের পাকা ধান ঝরে পড়তে দেখে ধান কাটা শুরু করে।

গত সোমবার স্কুল ছুটির পরে চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজ এবং চতরা মাল্টিমিডিয়া ক্যাডেট স্কুলের পাঁচ শিক্ষকসহ ৭১ জন শিক্ষার্থী কৃষক বাবুল প্রধানের ৫০ শতক জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দেয়। এ সময় আশে পাশের আরও দুই গরিব কৃষক সবুজ মিয়া ও এবরা হোসেন নিজেদের জমির ধান টাকা অভাবে কাটতে না পারার বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করলে ওই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ৭৩ শতক জমির ধানও কেটে দিয়েছে।

বাবুল প্রধান বলেন, বিনা টাকায় অরা মোর ধান কাটি দিছে। আল্লায়, স্যার ও বাচ্চাগুল্যাক (শিক্ষার্থীদের) জানি ভাল করে।

তিনি আরও জানান, তার তিন মেয়ে স্কুলে পড়ে। পরিবারের সদস্য পাঁচজন। এবারে অন্যের কাছে ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়ে বোরো লাগিয়েছেন। জমির মালিককে ফলনের অর্ধেক ধান দিতে হবে। ওই ৫০ শতকে বোরো চাষে খরচের একটি হিসেব দিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, জমির তৈরিতে তিন দফা চাষে খরচ এক হাজার ৭শ’ টাকা, রোপনে দুই হাজার টাকা, সার কীটনাশকে খরচ চার হাজার টাকা, পানি সেচে তিন হাজার ৫শ’ টাকা, বোরো চারা ক্রয় দেড় হাজার টাকা, নিড়ানি খরচ এক হাজার ৩শ’ টাকা। অর্থাৎ মোট খরচ ১৪ হাজার টাকা। এই জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে তাকে আরও বাড়তি ছয় হাজার টাকা খরচ করতে হতো।

ওই কৃষক জানান, ৫০ শতক জমিতে বাবুল ৩১ মণ ধান পেয়েছে। বর্তমান বাজার দরে এই ধানের দাম হয় প্রতিমণ ৪৪০ টাকা হিসেবে ১৩ হাজার ৬৪০ টাকা। ধান কাটা মাড়াইয়ের খরচ যোগ করলে দেখা যায় ৫০ শতকে ধান চাষে খরচ পড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ কারণে লোকসানের ভয়ে তিনি নিজের জমির ধান না কেটে শ্রমিক হিসেবে তিনি অন্যের ধান কেটে দিয়ে দিনে ৮-৯শ’ টাকা রোজগার করছিলেন।

চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রব প্রধান বলেন, বোরো চাষের পর লোকসানের ভয়ে অনেক গরিব কৃষক জমি থেকে ধান কাটছেন না। এখন প্রতিদিনেই কমবেশি শিলা ও ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পাকা ধান খেতে ঝরে পড়ছে। এ কারণে আমরা সপ্তাহে ৩ দিন এলাকার গরিব চাষিদের ধান স্বেচ্ছাশ্রমে কেটে ঘরে তুলে দিব।

তিনি বলেন, গরিব কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে শিক্ষার্থীসহ আমরা শিক্ষকরা ভীষণ খুশি। এতে কৃষকের লোকসান এবং বোঝা দুটোই কমলো।

৭ম শ্রেণির ছাত্রী রাদিবা প্রধান রিবিতা বলে, সবাই মিলে খুব আনন্দে ধান কেটেছি। গরিব কৃষকের উপকার করতে পেরে ভালো লাগছে।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063040256500244