কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা দুর্ভোগ কমাবে শিক্ষার্থীদের - Dainikshiksha

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা দুর্ভোগ কমাবে শিক্ষার্থীদের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর সব শিক্ষার্থীই স্বপ্ন দেখে একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার। আমাদের দেশে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবার আগেই ঠাঁই পায়। বুধবার (১০ জুলাই) দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন    আফসানা রিজয়ানা সুলতানা

যদিও আমাদের দেশে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও ভালো; তথাপি শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই বেছে নেয়। এর কারণ হল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো খরচ দেশের বেশির ভাগ অভিভাবকই বহন করতে পারেন না।

প্রশ্ন হল, লাখ লাখ ছাত্রের স্বপ্ন যেখানে ভর্তি হওয়ার; সেখানে নিজের স্থান করে নেয়াটা কি এতই সহজ? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েক লাখ ছাত্রের মধ্য থেকে ভর্তির জন্য মাত্র কয়েক হাজার ছাত্র বেছে নেন। এজন্য সঙ্গত কারণেই ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এই বিষয়টিকে অনেক জটিল, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল করে তোলা হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর প্রায় দেড় মাস ধরে পরীক্ষা দিয়েও ছাত্রদের একটু অবসর মেলে না। তারা পড়ে এক নতুন ভাবনায়।

সামনে তাদের অবতীর্ণ হতে হবে ভর্তিযুদ্ধে। চষে বেড়াতে হবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। আজ রাজশাহী তো কাল খুলনা, পরশু সিলেট; তার পরদিন হয়তো বরিশাল। এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে ভর্তি হতে হবে কোচিং সেন্টারে। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার ধরন আর ভর্তি পরীক্ষার ধরন সম্পূর্ণ ভিন্ন।

তাই তো নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবা কিংবা অভিভাবক কষ্ট করে হলেও অনেক টাকা খরচ করে ছেলেমেয়েকে কোচিং সেন্টারগুলোতে ভর্তি করান। কোচিং করার জন্য ৫-৬ মাসে তাদের খরচ হয় প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা।

এরপর আসে স্বপ্ন পূরণের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সারা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়া শুরু করে। এক্ষেত্রে বেশি হয়রানির শিকার হয় মেয়েরা। তাদের সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা বা বড় ভাইকে যেতে হয়। এতে খরচ বৃদ্ধি পায় বহুগুণ। অনেক সময় দেখা যায়, সিলেটে যেদিন পরীক্ষা; তার পরদিন হয়তো খুলনায় পরীক্ষা। ফলে কয়েকশ’ টাকা খরচ করে ফরম কিনেও পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয় না। আর এতে মৃত্যু ঘটে কিছু সম্ভাবনার, ভেঙে যায় বহুদিনের লালিত কিছু স্বপ্ন।

স্বপ্নভঙের আর্তনাদ হয়তো সবাই শুনতে পায় না। তাই তো বহু বছরের বহু মানুষের সুপারিশ সত্ত্বেও আমরা দেশে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারিনি। অথচ বিষয়টি এত কঠিন নয়।

মেডিকেল কলেজগুলোতে যেমন র‌্যাঙ্কিং করে একটি পরীক্ষা নিয়ে মেধাক্রমের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি করা হয়; ঠিক তেমনি বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাধারণ ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- এই চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

তারপর মেডিকেল কলেজগুলোর ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি র‌্যাঙ্কিং করা যেতে পারে (বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়াশুনার মান, গবেষণা ইত্যাদির ভিত্তিতে প্রতিবছর অথবা কয়েক বছর পরপর র‌্যাঙ্কিংয়ের হালনাগাদ করা যেতে পারে)।

এক্ষেত্রে যেসব শিক্ষার্থী প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে ইচ্ছুক, তারা শুধু একটি পরীক্ষা দিয়েই ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারলে তার পছন্দের বিষয় বা ডিপার্টমেন্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কিংয়ের মধ্যে সমন্বয় করে যে কোনো একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে।

সে কোন বিষয়ে ভর্তি হবে, সেটি তার পছন্দক্রম এবং মেধা তালিকা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেবেন। বিগত দিনগুলোতে অনেকেই নানা যুক্তি দেখিয়ে এটি সম্ভব না বা করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু গুটিকয়েক যুক্তি দেখিয়ে আমরা বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের উপর এই ভর্তিযুদ্ধ চাপিয়ে দিতে পারি না।

আশার কথা এই যে, দীর্ঘ এক দশকের আলোচনার পর কৃষিবিষয়ক আটটি বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর থেকে সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখিয়ে দিয়েছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সম্ভব। এখন দেখার বিষয়, এ থেকে প্রেরণা নিয়ে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেয়।

লেখক: কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070629119873047